বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

২৬ মার্চ ।। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান দিনটি হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।

২৬ মার্চ তারিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লিগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। আওয়ামি লিগের নেতা ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। এই জয়লাভের ফলে তিনি সরকার গঠনের অধিকার পান। কিন্তু পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, শেখ মুজিবর রহমানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। পাকিস্তানের সামরিক সরকার দেশের ক্ষমতা কোনো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুজন প্রধানমন্ত্রী রাখার প্রস্তাবনা দেন। শেখ মুজিবর রহমান সারা দেশে ৫ দিনের বনধ এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক সমাবেশে তিনি এই আন্দোলনকে মুক্তির সংগ্রাম বা স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন। এর ফলে সারা বাংলায় শুরু হয় এক বৃহৎ আন্দোলন। সারা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল, তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। আবার একইসাথে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে।  জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়। আন্দোলন আরও জোরদার হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন সামরিক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরীহ বাংলাদেশীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চলে নির্বিচারে গণহত্যা।ইতিহাসে এই ঘটনা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।এই দিনটি পরবর্তী কালে বাঙালি গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালিত হয়। হত্যা চালানোর পর মাঝরাতেই  শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি এক স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘোষণা করেন। তাই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে অভিহিত হয়। সেই ঘোষণাটির বাংলা করলে দাঁড়ায় এইরকমঃ

এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগে পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

শুরু হয়ে যায় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশের অগণিত মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে সামিল হয়। সামরিক প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ কৌশল, অস্ত্র চালনা প্রভৃতিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের সামনে পাকিস্তানি সেনা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা করে। বহু বাংলাদেশি শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় নেয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান নিয়াজী ৯৩,০০০ সৈন্য নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের অবসান হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়। শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। 

২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এইদিনে সরকারিভাবে বাংলাদেশে ছুটি ঘোষণা করা আছে। এই দিন সরকারী ভবনগুলোতে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনটি প্রতি বছর বাংলাদেশে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। দিনের শুরুতে তোপধ্বনি করা হয়। বাংলাদেশের সামরিক, নৌবাহিনীর ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে কুচকাওয়াজ করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। প্রচুর সাধারণ মানুষও এই কুচকাওয়াজ দেখতে ভিড় করেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের উদ্দেশে রাজধানী ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান