barak-vally-movement

বরাক উপত্যকা বাংলাভাষা আন্দোলন

স্বাধীন ভারতে ১৯৬০ সালে অসমীয়া ভাষাকে আসামের সরকারি ভাষা করা নিয়ে ২৪ অক্টোবর আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল  গৃহীত হয়। বরাক উপত্যকার উপর অন্যায়ভাবে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবং বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাক উপত্যকার সর্বত্র বরাক উপত্যকা বাংলাভাষা আন্দোলন শুরু হয়।

আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ জেলা ও কাছাড় জেলা নিয়ে যে ভূ-ভাগ, সেটাই বরাক উপত্যকা নামে পরিচিত। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার ব্রম্মপুত্র উপত্যকা ও পার্বত্য এলাকার কিছু অঞ্চল নিয়ে পৃথক একটি প্রদেশ আসাম প্রদেশ গঠন করে। শ্রীহট্ট বা সিলেট ও কাছাড় জেলাকে নবগঠিত আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আসাম প্রদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সিলেট ও কাছাড় জেলার ভাষাসহ নানা ভিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। সম্ভবত এ কারনেই ব্রিটিশ রাজশক্তি সিলেট ও কাছাড় জেলাকে নিয়ে সুরমা ভ্যালি ডিভিশন নামে একটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট গঠন করেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রদ্বয়ের অভ্যুদয় ঘটলে সিলেট জেলার সাড়ে তিন থানা বাদে বাকি অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। সিলেট জেলা থেকে কেটে নেওয়া হয় সাড়ে তিন থানা বাদে বাকি অংশ, যা নিয়ে করিমগঞ্জ মহকুমা গঠিত হয়। পরে করিমগঞ্জ মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে সম্পুর্ণ কাছাড় জেলা রয়ে যায় ভারতের অংশে। এভাবে মূল সিলেট জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন সাড়ে তিন থানা যা নিয়ে করিমগঞ্জ জেলা গঠিত হয়। এবং সম্পুর্ণ কাছাড় জেলা নিয়ে ভারতের যে ভূ-খন্ড গঠিত হয়, তারই নাম বরাক উপত্যকা। অর্থাৎ, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ভারতের আসাম রাজ্যের অধীন কাছাড়, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলা বরাক উপত্যকার অন্তর্ভুক্ত। সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিমন্ডলে বরাক উপত্যকার অপর নাম ‘বরাক উপত্যকা : বাংলা সাহিত্যের তৃতীয় ভুবন’।

বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাভাষী জনসংখ্যার আধিক্য বেশি। ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত আসামের আদমশুমারি অনুসারে বরাক উপত্যকার ভাষাভিত্তিক জনসংখ্যা নিম্নরূপঃ
১. বাংলা ভাষীঃ ১৩,৩২,২০০ জন
২. হিন্দি ভাষীঃ ১,৯৩,২০০ জন
৩. মেইতেই মণিপুরিঃ ৬৮৪০০ জন
৪. বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিঃ ৩৩,০০০ জন
৫. ডিমাছাঃ ৯,২০০ জন
৬. অসমীয়াঃ ৬,৮০০ জন

বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার উপর প্রথম আঘাত আসে স্বাধীন ভারতে ১৯৬০ সালে। এ সময় অসমীয়া ভাষাকে আসামের সরকারি ভাষা করার দাবি ওঠে। ১৯৬০ সালে অসমীয়া ভাষাকে আসামের সরকারি ভাষা করা নিয়ে ২৪ অক্টোবর আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল গৃহীত হয়। এবং বিভিন্ন ভাষাভাষির জনসংখ্যার মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যার ভাষা অসমীয়া ভাষাকে আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এর ফলে বরাক উপত্যকায় সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বরাক উপত্যকার উপর অন্যায়ভাবে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবং বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাক উপত্যকার সর্বত্র সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়।

১৯মে’র চারদিন আগে ১৫ মে থেকেই শিলচর শহরে সরকারি পুলিশ ও সামরিক বাহিনী তৎপর ওঠে। প্রতিদিন তারা শহরে রোডমার্চ করছিল। ১৯ মে’র সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সমর্থন ১৮ মে সন্ধ্যায় এক বিরাট গণ-মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে। সরকারের বিশেষ করে রেল চলাচল অব্যাহত ও আন্দোলনমুক্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষনা দেয়। সত্যাগ্রহীরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করেছিল। সত্যাগ্রহীরা প্রস্তুতি নেয় ১৮ মে রাত ১২ টার পর রেল স্টেশন দখল করে নিতে। সে অনুযায়ী সত্যাগ্রহী- বাহিনী রাতে রেল স্টেশনে পৌঁছে ঠিকই, কিন্তু পুর্ব-পরিকুল্পনা অনুযায়ী স্টেশন দখলে নিতে পারেনি। তবে পূর্বেই আসাম পুলিশ, সিআরপি , পিএসসি এবং আসাম রাইফেলসের জোয়ানরা স্টেশনের চতুর্দিক কর্ডন করে নেয়। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহিলা সত্যাগ্রহীরা সরকারি বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এক অভিনব পন্থায় অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে মহিলা সত্যাগ্রহীদের কয়েকজন সাহসী মেয়ে অতর্কিতে সরকারি বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনার আকষ্মিকতায় হতচকিত সরকারি বাহিনীর লোকেরা সড়ে পড়লে সত্যাগ্রহীরা দলে দলে স্টেশনে চত্বরে ঢুকে পড়ে। অন্যদিকে ভোর হবার আগেই হাজার হাজার সত্যাগ্রহী পূর্ব-পরিকল্পনা মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের সামনে দৃঢ় অবস্থান নেয়। আরও হাজার হাজার সত্যাগ্রহী প্রস্তুত থাকে নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করে করার জন্য। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে আসে পুরুষ-মহিলা সবাই আন্দোলনের সমর্থনে, বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায়। সত্যাগ্রহীরা নিরস্ত্র, অহিংস। তবুও পুলিশি লাঠিচার্জ হয়েছে তাদের ওপরে। কাঁদানো গ্যাস শেল নিক্ষেপ হয়েছে তাদের ওপর। সত্যাগ্রহীদের কেউ কেউ পুলিশের শেলই তুলে নিয়ে পালটা ছুড়ে মেরেছে পুলিশের দিকে। তবুও স্টেশন থেকে সত্যাগ্রহীদের সরানো যায়নি।

এদিকে সারা শহরে সত্যাগ্রহীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করা হয়। সকাল ১১ টার মধ্যে প্রায় ২ হাজার সত্যাগ্রহীকে জেলে পুরা হয়। একদলকে গ্রেফতার করা হলে নেতৃত্বের নির্দেশ মতো অন্যদল সে স্থান সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করে নেয়। আন্দোলনকারী অনেককে পুলিশ ট্রাকে তুলে দূরে ফেলে আসে। সত্যাগ্রহীদের ট্রাক সঙ্গে সঙ্গে তাদের তুলে শহরে নিয়ে আসে। বিকেল চারটা পর্যন্ত সত্যাগ্রহের সময়সীমা ছিল। কোন বড় অঘটন ছাড়া কেটে যায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। সত্যাগ্রহীদের সতর্ক-সাবধানের কারনে পুলিশ অঘটন ঘটানোর কোন সুযোগ পায়নি। বেলা আড়াইটার দিকে গ্রেফতার করা সত্যাগ্রহী ভর্তি একটি ট্রাক তারাপুর স্টেশনের কাছে পৌঁছে। লোকজনের ভীরের চাপে ট্রাকটি আগাতে পারছিলো না। এক সময় ট্রাকটি আটকে পড়ে। পরক্ষণেই দেখা যায় ট্রাকটি আগুনে পুড়ছে। বিএসএফ-এর জোয়ানরা ঘটনা বোঝার জন্য অপেক্ষা করল না। তারা নিরস্ত্র, অহিংস সত্যাগ্রহীদের উপর গুড়ুম গুড়ুম গুলি চালালো। তবুও সত্যাগ্রহীরা রেললাইন ছেড়ে পালালো না। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তারা গুলির মুখে অটল থাকলো। রাইফেলের গর্জন থামলে পরে দেখা গেল স্টেশন চত্বরে ৯ টি তরতাজা লাশ পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি লাশ একজন ছাত্রীর। জনতার সহায়তায় লাশ এবং আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সারা শহরের মানুষ হাসপাতালমুখী। এর মধ্যে আচমকা ঘোষিত হয় বিকেল পাঁচটা থেকে সান্ধ্য আইন বলবৎ হবে। সিভিল সার্জন জানালেন লাশের পোস্টমর্টেম শেষে পরদিন সব মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। সত্যাগ্রহীরা ঘোষনা দিলেন লাশ নিয়ে পরদিন শোক মিছিল বের হবে টাউন ক্লাব মাঠ থেকে। সান্ধ্য আইনের সুযোগে বিএসএফ হাসপাতাল থেকে লাশগুলো গুম করে নিতে চেয়েছিল। সত্যাগ্রহীদের সতর্ক প্রতিরোধ ও সিভিল সার্জন আশুতোষ মুখার্জীর সাহসী ভূমিকার জন্য তাদের সে চক্রান্ত সফল হয়নি।

১৯ মে গুলিবর্ষণের পর স্টেশন চত্বরে ৯ টি লাশ পাওয়া গিয়েছিল। পরদিন ২০ মে এই লাশ কাঁধে বহন করে বিরাট শোক মিছিল সারা শিলচর শহর প্রদক্ষিণ করে। গুলি বর্ষণের পরদিন আরো দুটি লাশ পাওয়া যায়। এই নিয়ে লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় এগারোতে। এই লাশও কাঁধে বহন করে ২১ মে শহরে শোক মিছিল হয়। ২৯ মে বরাক উপত্যকার সর্বত্র একাদশ আত্মোৎসর্গী বীরদের স্মরনে শোক দিবস পালন করা হয়। সে সঙ্গে একটি ব্যতিক্রমী কর্মসূচিও নেয়া হয়েছিল। এ দিন সর্বত্র ঘরে ঘরে অরন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা ২ টা পর্যন্ত সকল সরকারি অফিসে সত্যাগ্রহীদের পিকেটিং চলে। বেলা ঠিক ২টা ৩৫ মিনিটে শহরে-গ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ নীরবতা পালন করে। ১৯মে এ সময়ই পুলিশ গুলি বর্ষন করেছিল। এ সময় বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। জেলের বন্দিরাও জেলের ভিতরে শোক দিবস পালন করে। ১৯ মে পুলিশ গুলিবর্ষন করে ১১ জন ভাষাপ্রেমিককে হত্যার প্রতিবাদে, নিহতদের স্মরণে ও বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে লোকসভা ও বিধান সভার সদস্যবৃন্দ, মহকুমা পরিষদ, পঞ্চায়েত ও অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণও পদত্যাগ করেন।

১৯ মে গুলি বর্ষণ এবং ১১টি তরুন প্রাণের আত্মাহুতির পর আন্দোলনের নেতৃত্ব সত্যাগ্রহের গতানুগতিক ধরন পালটিয়ে অন্যরকম কর্মসূচি হাতে নেন। তাঁরা এ পর্যায়ে অফিস সমূহের গেইটে বা বারান্দায় সত্যাগ্রহ পালন না করে, সত্যাগ্রহীরা সকালে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ঢুকে অফিসে চেয়ারে বসে পড়তেন। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ বসার জায়গা না পেয়ে ফিরে যেতেন। এমনিভাবে সমস্ত প্রশাসন একমাসব্যাপী অচল হয়ে পড়েছিল।

সেদিন যারা বরাক উপত্যকা বাংলাভাষা আন্দোলন এর জন্য নিজ নিজ জীবন উৎসর্গ করে বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তাঁরা হলেন-

কমলা ভট্টাচার্য (ছাত্রী), কানাইলাল নিয়োগী, তরনীচন্দ্র দেবনাথ, শচীন্দ্র পাল, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, হিতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, সতেন্দ্র দেব এবং বীরেন্দ্র সূত্রধর

অবশেষে সত্যাগ্রহীদের আন্দোলনের ঐক্য ও ব্যাপকতা লক্ষ্য করে সরকার পক্ষ আপসের উদ্যোগ নেয়। কাছাড় গণ-সংগ্রাম পরিষদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী দিল্লীতে এক বৈঠকে বসেন এবং বরাক উপত্যকার ভাষা সমস্যার সমাধানকল্পে আলোচনার প্রস্তাব দেন। আলোচনার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সকল রাজবন্দীর মুক্তিদান ও সত্যাগ্রহ আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ি বন্দীমুক্তির দিন ধার্য হয় ১৬ জুন। কিন্তু পুর্বাহ্নে জানা যায় সরকার সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে না। ফলে আন্দোলনের নেতৃত্বের নির্দেশে মুক্তিপ্রাপ্তরা সকল রাজবন্দির মুক্তি না দিলে জেল থেকে বের হতে অস্বীকৃতি জানান। সরকার বাধ্য হয়ে পরদিন ১৭ জুন সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনার জন্য ছুটে আসেন শিলচর শহরে। আলোচনার ফলশ্রুতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধি হয়- আসাম সরকার বরাক উপত্যকার জেলাপর্যায়ে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি দেয়। পরে সন্ধি অনুযায়ি ১৯৬০ সালের ভাষা আইন সংশোধন করা হয়। এভাবে বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সাফল্যের শিখরে পৌঁছয়।

বরাক উপত্যকার শক্তিমান কবি দিলীপকান্তি লস্করের কবিতায় তা অতি নিপুণভাবে ব্যক্ত হয়েছে। দুঃখের জ্বালা নিয়ে তিনি লিখেছেনঃ
আমি কোত্থেকে এসেছি,
তার জবাবে যখন বললামঃ
করিমগঞ্জ, আসাম।
তিনি খুশিতে ডগমগ হয়ে বললেনঃ
বাঃ। বেশ সুন্দর বাংলা বলেছেন তো !
একজন শিক্ষিত তথা সাহিত্যিকের যখন
এই ধারণা,
তখন আমি আর কি বলতে পারিঃ
ওকে ঠিক জায়গাটা
ধরিয়ে দিতে গিয়ে বললাম-
বাংলাভাষার তের শহিদের
ভূমিতে আমার বাস;
তখন তিনি এক্কেবারে
আক্ষরিক অর্থে-ই
আমাকে ভির্মি
খাইয়ে দিয়ে বললেনঃ
ও ! বাংলাদেশ? তাই বলুন।

১৯৬০ সালে আসাম ভাষা আইন প্রবর্তিত হওয়ার ফলে বরাক উপত্যকায় শুধু যে বাংলা ভাষাভাষীদের অধিকার বিপর্যস্ত হয়েছিলো, তা নয়। অন্যান্য ভাষাভাষীদের ভবিষ্যৎ জীবনও অন্ধকারে ডুবতে বসেছিল। তাই নিজেদের আলাদা ভাষা থাকা সত্ত্বেও অন্য ভাষাভাষীরা বাংলা ভাষা আন্দোলনে সচেতন ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন। এই আন্দোলনকে সার্বজনীন রূপ দেবার জন্য বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের নেতারা কঠোর পরিশ্রম করেন। বিধান সভার সদস্য পদ ত্যাগ করে ” বিশ্বনাথ উপাধ্যায়ের চা বাগান ” ও অন্যান্য এলাকায় ঘুরে ঘুরে আন্দোলন সংগঠিত করেন। মণিপুরি নেতা সন্তু সিংহ, মদন মুখার্জি,নন্দকিশোর সিংহ প্রমুখের নেতৃত্বে মণিপুরি গ্রামে গ্রামে সভা বৈঠক হয়। করিমগঞ্জ শহরে অনুষ্ঠিত জনসভায় কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র শিক্ষানুরাগী ড.ত্রিগুণা সেন ও পশ্চিম বঙ্গের ছাত্র ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নন্দগোপাল ভট্টাচার্য এই আন্দোলনকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন।

১৯৬১ সালে সফল ভাষা আন্দোলনের পরও বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার উপর আন্দোলন বন্ধ হয় নাই। মণিপুরি ভাষার উপরও আক্রমণ এসেছে। ১৯৭২ সালে শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার দাবী জানাতে গিয়ে আত্মউৎসর্গ করেন বাচ্চু চক্রবর্তী।

১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ সফর করেন। এই কালপর্বে আসাম সরকার নতুন ভাবে বরাক উপত্যকার সকল স্কুলে অসমীয়া ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ জারি করে। ২১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের দিন উক্ত নির্দেশ বাতিলের দাবিতে করিমগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করা হয়। পুলিশ ঐ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে দু’জন যুবক নিহত হয়।
এই দুই যুবকের নাম জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাশ। এই দু’জন নিয়ে নিহতের সংখ্যা দারায় ১৪ তে।

4 comments

আপনার মতামত জানান