বিহারীনাথ

বিহারীনাথ ভ্রমণ

বিহারীনাথ পাহাড়। ছবি ইন্টারনেট।

বিহারীনাথ পাহাড়কে পশ্চিমবঙ্গের আরাকু ভ্যালি বলা হয়। এই পাহাড় এখনও অনেকটাই আদিম রূপে আছে এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সবুজে ঘেরা এই পাহাড়ে অনেকরকম বিরল প্রাণীর বাস। পাহাড়ের নিচে আছে বিখ্যাত বিহারীনাথ মন্দির। বিহারীনাথ পাহাড়ের নিচের অংশটিই হল এখানের মূল পর্যটন কেন্দ্র।

ইতিহাস ও বৈচিত্র্যের শহর হল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, যার আনাচে  কানাচে রয়েছে গিয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ছোঁয়া। বাঁকুড়া জেলার উচ্চতম পাহাড় হল বিহারীনাথ পাহাড়। এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১৪৫০ ফুট। পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ এই পাহাড় ঘন জঙ্গলে ঘেরা। পুরাতাত্ত্বিক মহলে এই পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির গুরুত্ব বিশেষ। পাহাড়ের নীচেই রয়েছে বিখ্যাত শিব মন্দির।

বিহারীনাথ ধাম নামেই এই মন্দির প্রসিদ্ধ। এখানে শিবের নাম বিহারীনাথ এবং তাঁর নামেই এই পাহাড়ের নামকরণ। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে এই বিহারীনাথের শিবলিঙ্গটি এখানের রাজা স্বপ্নাদেশে পেয়েছিলেন। এই প্রাচীন শিবের মন্দিরে শিবরাত্রি উপলক্ষে মেলা বসে আর সেই সময়ে ভক্তসমাগমও হয় প্রচুর। মন্দির সংলগ্ন পুকুরটিকে স্থানীয় মানুষ অত্যন্ত পবিত্র বলেই মনে করেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

বিহারীনাথ মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন পুকুর

বিহারীনাথ পাহাড় ঘন জঙ্গলে ঘেরা আদিম পাহাড়। ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে রঙ বদলায় এই পাহাড়। ফেব্রুয়ারি আর মার্চ মাসে এই অঞ্চল সেজে ওঠে লাল পলাশফুলে। তখন পাহাড়ের শোভা দেখবার মত। লাল আভায় ভরে যায় চারিদিক। আবার বর্ষাকালে সবুজের ছোঁয়ায় অন্যরকম প্রানবন্ত লাগে পাহাড়কে। সেই রূপ একজন পর্যটককে বারবার হাতছানি দেবে। শুধু বিভিন্ন প্রজাতির গাছই না, এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণীও আছে প্রচুর। পাহাড় মধ্যস্থ বনে চলার পথে দেখা পাওয়া যেতে পারে শেয়াল, খরগোশ, বন্য শুকর, বনরুই, হায়না, গিরগিটির মত প্রাণীদের। কাছেই আছে আদিবাসী গ্রাম পাহারবেড়া। পরিচ্ছন্ন গ্রামের বাড়ির মাটির দেওয়ালের আলপনা গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির এক অন্যতম নিদর্শন। কাছাকছি আছে সাঁওতাল গ্রাম। মাটির বাড়ির দেওয়ালে এখানেও আছে হাতে আঁকা আলপনা, যা স্বশিক্ষিত শিল্পধারার এক আশ্চর্য নিদর্শন।

বিহারীনাথ পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ট্রেন বা  গাড়ি দুটো ভাবেই যাওয়া যায়। ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী ট্রেনে করে আসলে আসানসোল থেকে মধুকুণ্ড রেল স্টেশন আসতে হবে। তারপর গাড়ি করে বিহারীনাথ। আবার আসানসোল থেকে ট্রেনে করে রানীগঞ্জ এসেও ভাড়া করা গাড়ি করে বিহারীনাথ যাওয়া যায়। ছাতনা থেকে বাসে করেও বিহারীনাথ যাওয়া যায়৷ গাড়ি করে গেলে পানাগড়, দুর্গাপুর এবং রানীগঞ্জ পেরিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে গাড়ি চালান। এরপর দামোদর নদী সেতুটি পেরিয়ে মধুকুণ্ডের দিকে সোজা গাড়ি চালান। মধুকুণ্ড রেলপথ ক্রসিং পেরনোর পরে প্রায় ১৬ কিলোমিটার সোজা আসার পর বিহারীনাথ।

বিহারীনাথ মন্দিরের শিবলিঙ্গ

সরকারি এবং বেসরকারি কিছু থাকার জায়গা আছে এখানে। আগে থেকে বুকিং করে যাবেন। পাহাড়ের পাশেই আছে কয়েকটি থাকার জায়গা। সেখান থেকে মন্দির ও কাছেই।

সকাল সকাল ঘুরে আসুন মন্দিরে, চাইলে পুজোও দিতে পারেন। তারপর বেরিয়ে পড়ুন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। এখানের পাহাড় বেশ আদিম বেশে রয়েছে আগেই বলা হয়েছে। তাই পথ খুব সুগম নয়। যতখানি উঠতে পারবেন, ততখানিই উঠুন। একইসাথে মনে রাখবেন ততখানিই পথ আপনাকে নামতে হবে। হোটেলের সাথে কথা বলে লোকাল ছেলেদের গাইড হিসাবে নিতে পারেন। তবে পাহাড়ে অবশ্যই সকাল সকাল যাবেন, বিকাল বা সন্ধ্যাবেলায় একেবারেই নয়।

কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আসতে পারেন। যেমন গড়পঞ্চকোটজয়চন্ডী পাহাড়, পাঞ্চেত বাঁধ, মাইথন বাঁধ, কল্যাণেশ্বরী মন্দির , শুশুনিয়া পাহাড়। হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, আর নিজে গাাড়ি নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।

জায়গাটি সারা বছর ঘুরে দেখা যায়। তবে পাহাড়ের শোভা আর শান্তি পেতে চাইলে যে সময় ভিড় হয় যেমন শিবরাত্রির সময় এড়িয়ে যেতে পারেন। আবার আপনি পুজো দিতে চাইলে ওইসময় আসতে পারেন। শীতকালে পিকনিক করতেও প্রচুর মানুষ আসে। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস এখানে মনোরম পরিবেশ থাকে। আসবার জন্য আদর্শ পরিবেশ ঐ সময়।


ট্রিপ টিপস

  • কিভাবে যাবেন – বিহারীনাথ পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ট্রেন বা  গাড়ি দুটো ভাবেই যাওয়া যায়। গাড়ি করে গেলে মধুকুণ্ড রেলপথ ক্রসিং পেরনোর পরে প্রায় ১৬ কিলোমিটার সোজা আসার পর বিহারীনাথ। আর ট্রেনে করে আসলে আসানসোল  থেকে মধুকুণ্ড রেল স্টেশন বা রানীগঞ্জ এসে ভাড়া করা গাড়ি করে বিহারীনাথ যাওয়া যায়।
  • কোথায় থাকবেন – এখানে কিছু কিছু  রিসোর্ট আছে, যেগুলো আগে থেকেই বুক করা যায়।
  • কি দেখবেন – বিহারীনাথ পাহাড়ে ঘুরে আসুন সকাল সকাল। বিহারীনাথ মন্দিরে পুজো দিতে পারেন। আর গাড়ি নিয়ে কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আসতে পারেন। যেমন গড়পঞ্চকোটজয়চন্ডী পাহাড়, পাঞ্চেত বাঁধ, মাইথন বাঁধ, কল্যাণেশ্বরী মন্দির , শুশুনিয়া পাহাড়
  • কখন যাবেন – অক্টোবর থেকে মার্চ মাস
  • সতর্কতা – সূর্যাস্তের পর পাহাড়ে উঠবেন না। সকাল সকাল  ঘুরে আসুন।

তথ্যসূত্র


  1. নিজস্ব প্রতিনিধি
  2. https://en.wikipedia.org/
  3. https://bankura.gov.in/

আপনার মতামত জানান