দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ধনীর ঘরের দুলাল হিসেবে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম জীবন নানা প্রকার আমোদ-প্রমোদের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত করেন। ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পিতামহী অলকা দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর জীবনধারা আমুল পরিবর্তন আসে। সংসার থেকে নিজেকে অনেকটা প্রত্যাহার করেই নেন। ক্ষুব্ধ দ্বারকানাথ পুত্রকে ভর্ত্সনা করে বিলেত থেকে ইংরেজিতে লিখলেন (সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা ভাষান্তর):…

“আমার সকল বিষয়সম্পত্তি নষ্ট হয় নাই ইহাই আমার আশ্চর্য বোধ হয়। তুমি পত্রিকার সহিত বাদ প্রতিবাদ করিতে ও সংবাদপত্রে লিখিতে ব্যস্ত, গুরুতর বিষয় রক্ষা ও পরিদর্শন কার্যে তুমি স্বয়ং যথোচিত মনোনিবেশ না করিয়া তাহা তোমার প্রিয়পাত্র আমলাদের হস্তে ফেলিয়া রাখ। ভারতবর্ষের উত্তাপ ও আবহাওয়া সহ্য করিবার শক্তি আমার নাই, যদি থাকিত আমি অবিলম্বে লন্ডন পরিত্যাগ করিয়া তাহা নিজে পর্য্যবেক্ষণ করিতে যাইতাম।…’’

এইসময় উপনিষদের তত্ত্ব তাকে গভীর ভাবে অনুপ্রানিত করে।উপনিষদেরএকটি শ্লোক  তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল সেই সময়। -“ঈশাবাস্যমিদং সর্ব্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ,তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জী মা গৃধঃ কস্যসিবধ্বনং।”যদিও এর মানে প্রাথমিক ভাবে দেবেন্দ্রনাথের কাছে ছিল অস্পষ্ট ।তারপর ব্রাহ্ম সমাজের রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের কাছে জানতে পারেন এর মর্মার্থ – যে,এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে যেখানে যা কিছু রয়েছে তা সবই পরমেশ্বর দ্বারা ব্যাপ্ত- পাপ চিন্তা ও বিষয়ের প্রতি লোভ ত্যাগ করে ব্রহ্মের আনন্দ উপভোগ করতে হবে,অন্য কারও ধনে লোভ করা অনুচিত ।

এই শ্লোকের মধ্যেই তিনি প্রথম পেয়েছিলেন বিশ্বপ্রেমের সন্ধান।আর তারপরেই সব বিলাসব্যসন মুছে গিয়েছিল তাঁর জীবন থেকে।

মূলতঃ উপনিষদের চর্চা ও এর বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘তত্ত্বরঞ্জিনী সভা’ স্থাপন করেন। পরে তার নাম হয় ‘তত্ত্ববোধিনী’। পরবর্তী কালে তিনি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহন করেন এবং এই ধর্ম প্রসারে উদ্দ্যোগী হন।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( Debendranath Tagore ) এর জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১৫ মে, ১৮১৭ সালে। তার পিতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং মাতা দিগম্বরী দেবী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র। দেবেন্দ্রনাথ প্রথম পর্যায়ে বাড়িতেই পড়াশোনা করেন। ১৮২৭ সালে তিনি রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত অ্যাংলো হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই স্কুল ছেড়ে দ্বারকানাথের প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের কোষাধ্যক্ষ রমানাথ ঠাকুরের অধীনে শিক্ষানবীশ হিসাবে যোগদান করেন।এই সময় তিনি ভারতীয় ও ইউরোপীয় ধর্ম ও দর্শনপাঠে আত্মনিয়োগ করেন।

১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ স্থাপন করেন। এই স্কুলটি সেখানে জনসমাদর লাভ না করায় স্কুলটি বাঁশবেড়িয়া নামক গ্রামে স্থানান্তরিত করেন এবং শেষ পর্যন্ত দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়।

১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় একেশ্বরের উপাসনার জন্য ‘আত্মীয়সভা’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কালক্রমে তাই ব্রাহ্মধর্মে রূপলাভ করে। দ্বারকানাথ যতদিন জীবিত ছিলেন, তিনি ততদিন এই সমাজকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে গেছেন। রামমোহন রায় ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে বিলেত গেলে এবং দ্বারকানাথের মৃত্যু হলে– দেবেন্দ্রেনাথ এই সমাজের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। এই সময় তিনি এই ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য ১৮৪২ সালে (বৈশাখ ১৭৬৪ শকাব্দ) তত্ত্ববোধনী সভা’র পরিচালনাভার গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজের বক্তব্য প্রচারের জন্য ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর ‘তত্ত্ববোধিনী’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরের বছর তাঁরই অর্থে এবং অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এই পত্রিকায় দেবেন্দ্রনাথকৃত বৃত্তি ও বঙ্গানুবাদসহ উপনিষদ প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি ২১ জন আত্মীয়-সহ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অবশিষ্ট আত্মীয়রা এই সময় তাঁকে পরিত্যাগ করেন। দেবেন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায় প্রকাশ্য সভায় বেদপাঠও শুরু হয়। ১৮৪৪ সালে দেবেন্দ্রনাথ প্রথম ব্রহ্মোপাসনা পদ্ধতি প্রণয়ন করেন এবং পরের বছর থেকে তা ব্রাহ্মসমাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। দীর্ঘ শাস্ত্রচর্চার ফলে তিনি উপলব্ধি করেন যে, শুধু উপনিষদের ওপর ব্রাহ্মধর্মের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব নয়। তাই ১৮৪৮ সাল থেকে তিনি ক্রমাম্বয়ে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ঋগ্‌বেদের অনুবাদ প্রকাশ করতে শুরু করেন, যা ব্রাহ্মধর্ম (১৮৬৯) নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৮৫০ সালে তাঁর অপর গ্রন্থ আত্মতত্ত্ববিদ্যা প্রকাশিত হয়। ১৮৫৩ সালে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৮৫৯ সালে ব্রাহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন। বেদ- বেদান্ত-উপনিষদ বিশ্লেষণ করে রচনা করেছিলেন ‘ব্রাহ্মধর্মঃ’ সংকলন গ্রন্থটি।এছাড়াও বেশ কিছু ব্রহ্মসংগীতও রচনা করেছিলেন, যেমন – “কারণ সে যে,তাঁর ধ্যান”,”কেন ভোল ভোল চিরসুহৃদে”,”দেহ জ্ঞান দিব্য জ্ঞান দেহ প্রীতি”,”পরিপূর্ণমানন্দম্ অঙ্গবিহীনং”,”পুণ্যপুঞ্জেন যদি প্রেমধনং কোহপি”,”ব্রহ্মকৃপাহিকেবম্,পাশানাশহেতু”,”যোগী জাগে ভোগী রোগী কোথায়”।

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ বোলপুরে জমি কিনেছিলেন।  দেবেন্দ্রনাথ বীরভূমের প্রভাবশালী জমিদার রায়পুরের সিনহাদের বাড়িতে যেতেন মাঝে মাঝেই। এ রকম এক সফরে মহর্ষি যখন বোলপুর হয়ে রায়পুরে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বিস্তৃত এলাকাজুড়ে আমের বাগান ও জঙ্গল দেখতে পান। এ স্থানটি তখন ‘ভুবনডাঙার মাঠ’ নামে পরিচিত ছিল এবং এখনো তা-ই আছে। সে আমলে অঞ্চলটি ডাকাত ও খুনিদের আস্তানা ছিল। সাধারণ মানুষ দিনের বেলায় এ জায়গা পার হতে ভয় পেত। স্থানটির বিশালতা মহর্ষির মনকে আচ্ছন্ন করে তোলে। বিশেষত একটি ছাতিম গাছ। মহর্ষি তার লটবহরকে থামতে নির্দেশ দেন এবং ছাতিম গাছের তলায় ধ্যানে বসেন। এটা তার মনে প্রশান্তি আনে। জায়গাটি তার খুব পছন্দ হয় এবং ঠিক সেখানে বসে তখনই তিনি এখানে জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। জমির মালিক ছিলেন রায়পুরের সিনহারা। তাদের কাছ থেকেই মহর্ষি ২০ বিঘা জমি কিনেছিলেন।

দেবেন্দ্রনাথ পূজা-পার্বণাদি বন্ধ করে ‘মাঘ উৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ ইত্যাদি উৎসব প্রবর্তন করেন। এছাড়াও তিনি হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশনের বেথুন সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।পৌত্তলিকতা ছেড়ে ব্রহ্ম হয়ে যাওয়ায় পূজা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন। সৌদামিনী মা-বাবা দুজনকে জড়িয়েই লিখছেন:

‘পূজার সময় কোন মতেই পিতা বাড়িতে থাকিতেন না— এই জন্য পূজার উৎসবে যাত্রা গান আমোদ যত কিছু হইত তাহাতে আর সকলেই মাতিয়া থাকিতেন, কিন্তু মা তাহার মধ্যে কিছুতেই যোগ দিতে পারিতেন না। তখন নির্জন ঘরে তিনি একলা বসিয়া থাকিতেন।…যে ব্রাহ্মমূহূর্তে মাতার মৃত্যু হইয়াছিল তাহার পূর্বদিন সন্ধ্যার সময় হিমালয় হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। তাহার পূর্বে মা ক্ষণে ক্ষণে চেতনা হারাইতেছিলেন। পিতা আসিয়াছেন শুনিয়া বলিলেন, “বসতে চৌকি দাও।” পিতা সম্মুখে বসিলেন। মা বলিলেন, “আমি তবে চল্লেম।” আর কিছু বলিতে পারিলেন না। আমাদের মনে হইল স্বামীর নিকট হইতে বিদায় লইবার জন্য এ পর্যন্ত তিনি আপনাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছিলেন।’

দেবেন্দ্রনাথ কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৮৫১ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি দরিদ্র গ্রামবাসীদের চৌকিদারি কর মওকুফের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সম্বলিত একটি পত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করেন। দেবেন্দ্রনাথ বিধবাবিবাহ প্রচলনে উৎসাহী ছিলেন, তবে বাল্য ও বহু বিবাহের বিরোধী ছিলেন। শিক্ষাবিস্তারেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব থেকে ভারতীয় যুবকদের রক্ষার জন্য ১৮৬৭ সালে রাধাকান্ত দেব তাঁকে ‘জাতীয় ধর্মের পরিরক্ষক’ ও ব্রাহ্ম সমাজ ‘মহর্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করে।

নারী শিক্ষায় বিশেষ আগ্রহ ছিল দেবেন্দ্রনাথের। সৌদামিনীকে মিশনারি মেয়েদের কাছে পাঠিয়েছেন; বেথুন স্কুল স্থাপিত হওয়ার পর যখন ছাত্রী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে তিনি সৌদামিনী ও তার খুড়তুতো বোনকে সেখানে পড়তে পাঠিয়ে  দেন।

বাড়ির মেয়েদের সে সময় খোলা ছাদে যাওয়া নিষিদ্ধ  ছিল।তিনি সে ছাদ  উন্মুক্ত করে দিলেন। দেবেন ঠাকুরের পিসতুতো ভাই চন্দ্রবাবু সামনের বাড়িতে বাস করতেন।সৌদামিনী লিখছেনঃ

‘একদিন তিনি আমার পিতাকে বলিলেন, “দেখ দেবেন্দ্র, তোমার বাড়ির মেয়েরা বাহিরের খোলা ছাতে বেড়ায়, আমরা দেখিতে পাই, আমাদের লজ্জা করে। তুমি শাসন করিয়া দাও না কেন?” পিতা বলিলেন, “কালের পরিবর্তন হইয়াছে। নবাবের আমলে যে নিয়ম ঘটিত, এখন আর সে নিয়ম খাটিবে না। আমি আর কিসের বাধা দিব, যাঁহার রাজ্য তিনিই সব দেখিয়া লইবেন।”’

দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর তাঁর বহু ঋণ দেবেন্দ্রনাথের কাঁধে এসে পড়ে।  ১৮৫৯ সালে তিনি কলকাতায় ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর কিছুদিন পর ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম কেশবচন্দ্রের হাতে ন্যাস্ত করেন। পরে ধর্মীয় আদর্শের কারণে কেশবচন্দ্রের সাথে সংঘাত উপস্থিত হলে – ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়। কেশবচন্দ্রের অনুগামী ধর্মের নাম ছিল ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’, পক্ষান্তরে দেবেন্দ্রনাথের অনুগামী ধর্মের নাম হলো– ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’। এরপর ধীরে ধীরে তিনি সকল বৈষয়িক ও ধর্মীয় সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন।

বয়স আশির কোটায় পৌঁছানোর পর মহর্ষির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে থাকে। স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য তিনি বেশ কিছুটা সময়  চিনসুরা (চুঁচুড়া) আবার কখনওবা  বোম্বেতে থাকেন। এরপর যান দার্জিলিংয়ে।  কিন্তু শরীর আর ঠিক হল না। জীবনের শেষ ১০ বছর তার কেটেছে কলকাতার পার্কস্ট্রিটে একটি ভাড়া বাড়িতে।  বেশির ভাগ সময় কাটাতেন ধ্যান ও প্রার্থনায়। এ সময় পিতার সঙ্গে ছিলেন এবং তার সেবা করেছেন কন্যা সৌদামিনী দেবী। সৌদামিনী তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন— “পিতা একটি সোফায় সারাদিন প্রায় একই ভঙ্গিতে বসে থেকে ঈশ্বরের আরাধনা করতেন। খাওয়া আর স্নান বাদে বাকি সময়টা তিনি নিজের সকল মনোযোগ ঈশ্বরের ওপরই নিবিষ্ট রাখতেন। কখনও যদি আমরা কোন দরকারে তার সঙ্গে কথা বলতে যেতাম, তখন ঘোরলাগা, বিস্মিত কণ্ঠে তিনি বলে উঠতেন, ‘আমি কোথায়? তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ?’ তাকে বিরক্ত করার জন্য আমরা তখন অপরাধবোধে ভুগতাম।”

ফাল্গুন ১৩১৮-এর প্রবাসীতে প্রকাশিত ‘পিতৃস্মৃতি’তে মহর্ষির কন্যা সৌদামিনী লিখেছেন:

‘পার্ক স্ট্রীটে যেদিন আমরা সকল ভাইবোনে মিলিয়া পিতার জন্মোৎসব করিতাম সেদিন আমাদের বড়ই আনন্দের দিন ছিল। সেদিন পরিবারের সকলেই একত্র হইতেন। তিনি মাঝখানে চৌকিতে বসিতেন। আমরা সকলে তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিতাম— বড়দাদা সময়োচিত কিছু একটা লিখিয়া পাঠ করিতেন, রবি গান করিত। তিনি ফুল বড় ভালবাসিতেন বলিয়া সকলেই তাঁহাকে ফুলের তোড়া ফুলের সাজি আনিয়া উপহার দিতেন— আমরা ফুল দিয়া তাহার সমস্ত ঘরটি সাজাইয়া দিতাম। …আমাদের সেই আনন্দের দিন আর আসিবে না, সেই পবিত্র সৌম্য মূর্তি আর দেখিতে পাইব না।’

১৯ জানুয়ারি, ১৯০৫ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়। দেবেন্দ্রনাথ সত্যিই কি আচারে কি মানসিকতায় সেই যুগের আধুনিকতম পুরোধাপুরুষ ছিলেন।

8 comments

আপনার মতামত জানান