মহাভারত

কুন্তীকে দুর্বাসার মন্ত্রদান

রাজা কুন্তিভোজের বাড়িতে একদিন অতিথি হয়ে এল দুর্বাসা মুনি। দুর্বাসা ছিল খুব রাগী। সে রাজবাড়িতে এসেই রাজাকে জানিয়ে দিল সে সেখানে তার ইচ্ছেমত থাকবে,তার ইচ্ছেমত আসবে যাবে, কেউ যেন বাধা না দেয়,রাজা রাজি থাকলে বলুন। দুর্বাসাকে বাধা দেওয়ার সাহস তখনকার দিনে কারও ছিল না, কারণ বাধা দিলে কপালে জুটবে অভিশাপ। রাজা কুন্তিভোজ বলল তার কন্যা মুনির দেখভাল করবে। কুন্তীর সেবায় খুশি হয়ে দুর্বাসা তাকে  এমন একটা মন্ত্র দিল, যে মন্ত্রে যে কোন দেবতাকে আহ্বান করলে দেবতা চলে আসবে তার  কাছে।

অতিথি , ব্রাক্ষণ সৎকারের ব্যাপারে কুন্তীর নিষ্ঠা ছিল অতুলনীয়। রাজা কুন্তীকে বলল দুর্বাসাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। সঙ্গে দুর্বাসার রাগের কথা বলতেও ভুলল না।বাবাকে এত চিন্তিত দেখে কুন্তী রাজাকে অভয় দিয়ে তাকে নিশ্চিন্তে থাকতে বলল। দুর্বাসা মুনির সেবার দায়িত্ব সে নিজে কাঁধে তুলে নিল। রাজা নিশ্চিন্ত হল।

এরপর শুরু হল কুন্তীর সেবা পরিচর্যা।দুর্বাসার জন্য আলাদা থাকবার ব্যবস্থা হল। কুন্তীও নিজের রাজবাড়ির অভিমান ত্যাগ করে দুর্বাসার সেবায় সেখানেই থাকতে শুরু করল। নিজের সেবায় মুনিকে সন্তুষ্ট করতে থাকল। কখনও হয়ত মুনি বলে গেল সকালে ফিরব, বলে ফিরলেন রাতে।আবার কখনও ফেরার কথা ছিল রাতেই, কিন্তু সারা রাত কাটিয়ে ফিরল মুনি সকালে। কুন্তী খাবার সাজিয়ে বসে থাকে মুনির অপেক্ষায়, কিন্তু এতটুকু রাগ সে করে না। দুর্বাসার খামখেয়ালীপনার কথা রাজা কুন্তীভোজ যে আগেই তাকে বলেছে। আবার কখনও হয়তো মুনি বলল তার এখনই এমন উপাদান চাই, যা পাওয়া প্রায় মুশকিল। কিন্তু কুন্তীর কাছে কিছুই মুশকিল না। হাসিমুখে কুন্তী সব করতে থাকল। এভাবে একবছর কেটে গেল। কঠোর দুর্বাসা, রাগী দুর্বাসা খুশি হল কুন্তীর সেবায়।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কুন্তীর সেবায় খুশি হয়ে দুর্বাসা তাকে বর দিতে চাইলে, কুন্তী বলল সেবা করা তো তার কর্তব্য ছিল, তাহলে বর কেন। কুন্তীর এই নিষ্কাম ব্যবহারে দুর্বাসা আরও খুশি হল। তখন সে কুন্তীকে একটা মন্ত্র দিল।
“তোমায় আজ এমন একটা মন্ত্র দেব, যে মন্ত্র মানবের কাছে অকল্পনীয়। এই মন্ত্রে যে কোন দেবতাকে আহ্বান করলে দেবতা চলে আসবে তোমার কাছে। বাঁধা পড়বে তোমার কাছে। তুমি তাকে ব্যবহার করতে পারবে নিজের মত।”
এই মন্ত্র দান করে দুর্বাসা চলে গেল।

তথ্যসূত্র


  1. "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (১৯। গান্ধারী, কুন্তী ও মাদ্রী- কর্ণ - দুর্যোধনাদির জন্ম) পৃষ্ঠাঃ ৪৩
  2. "কৃষ্ণা, কুন্তী ও কৌন্তেয়", আনন্দ পাবলিশার্স, নবম মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ কুন্তী, পৃষ্ঠাঃ ১৮-২৩
  3. "মহাভারতের অষ্টাদশী", আনন্দ পাবলিশার্স, চতুর্থ মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ কুন্তী, পৃষ্ঠাঃ ২৫৮-২৬৪

 

4 comments

  1. I’m amazed, I have to admit. Seldom do I come across a blog that’s both equally educative and engaging, and let me tell you, you have hit the nail on the head.
    The issue is something that too few people are speaking intelligently about.
    Now i’m very happy that I came across this in my hunt for something relating to this.

আপনার মতামত জানান