বাবা লোকনাথ

বাবা লোকনাথের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থানার অন্তর্গত স্বরূপ নগর- কচুয়া (কাঁকড়া) গ্রামে। তাঁর কর্মময় তীর্থক্ষেত্র হল বারদী। তার বাবার নাম রামকানাই ঘোষাল, মায়ের নাম কমলাদেবী। বাবার ইচ্ছায় বালক লোকনাথ ব্রহ্মচর্য ধারণ করে গৃহত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন পিতার চতুর্থ পুত্র। পিতা রামকানাই এর ধারণা ছিল, তার বংশের কোনপুত্র যদি উপনয়নের পর সন্ন্যাসী হয়ে যায়, তবে তার বংশের সবাই মুক্তি পাবে। তাদের আত্মার সদগতি হবে। এই জগতে তাদের আর জন্ম গ্রহণ করতে হবে না।

বাল্য বন্ধু বেনিমাধবকে সঙ্গে করে বাবা লোকনাথ  (lokenath) সন্ন্যাসী হলেন। অভিভাবক হিসেবে সাথে রইলেন ভগবান গাঙ্গুলি। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সাহসী এবং পরম বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। দুই বন্ধু মিলে সন্তর্পনে বহু পথ অতিক্রম করেন। দুই বন্ধু মিলে আটটি পর্বের অবতারণা করেন। তা হল নক্ত ব্রত,একান্তরা, তৃতীয়া, পঞ্চাহ, নবরাত্রি,দ্বাদশাহ, পক্ষাহ,মাসাহ। এই সবকটি সাধনায় বাবা লোকনাথ উত্তীর্ন হন। এরপর তারা হিমালয়ের পথে অগ্রসর হন। এখানে শুধু পথ আর পথ চলা। এ সময়ে ভগবান গাঙ্গুলিও সঙ্গে যেতে যেতে পাতঞ্জল দর্শনের আটটি স্তর অতিক্রম করেন। যেমন যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি।

বাবা লোকনাথ বলেছিলেন সর্ব জীবে ও সর্বত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তিনি ধ্যান যোগে ও অনুভবের দ্বারা অনেককিছু দেখতে পেতেন। মানুষ ও জীব জগতের উন্নতির জন্য সর্বদা ব্যাকুল হতেন। কেউ কোন যন্ত্রণায় কষ্ট পেলে তিনিও কষ্ট বোধ করতেন।কোন মানুষ বা জীব তার সামনে মৃত্যু পথযাত্রী হলে তিনি কাঁদতেন ও ব্যাথা পেতেন। তিনি বলতেন ভক্তরাই ভগবান। ভক্তের মাঝেই ভগবান বিদ্যমান।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কর্ম ও সাধনা, কর্ম ও অনুভব, কর্ম ও গতি,কর্ম ও মুক্তি- এর মাঝেই সর্বদা তিনি মগ্ন থাকতেন। তিনি বলতেন কর্মই সব, কর্মই উদ্ধারের আধার- এই ছিল তার অনুশীলন। তিনি সর্বদা কর্মকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি কর্ম, অকর্ম ও বিকর্মের ব্যাখ্যা করে ভক্তদের সঠিক পথ প্রদর্শন করতেন।তিনি বলতেন মানুষের সিদ্ধির জন্য মন,বুদ্ধি,ইন্দ্রিয়, শরীর দ্বারা যে কাজ করা হয় তাই প্রকৃত কর্ম। তার মতে শাস্ত্র বিহিত কর্ম প্রকৃত শুদ্ধ কর্ম আর শাস্ত্র নিষিদ্ধ কর্ম হল বিকর্ম বা অকর্ম।

এই ভাবে মানুষের সেবায় নিমগ্ন থেকে বাবা লোকনাথ ১৬০ বছর বয়সে ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১৯শে জ্যৈষ্ঠ বেলা ১১:৪৫ মিনিটে তার সমস্ত কর্মভার শিষ্য দের কাছে সুদূরপ্রসারী করার দায়িত্ব দিয়ে তিনি স্বর্গ ধামে যাত্রা করেন। কিন্তু তার অমৃতবানী আজও মানুষের মনে চির জাগ্রত।

“আমি নিত্য জাগ্রত, তোদের সুখে সুখী,তোদের দুঃখে দুঃখী।আমার বিনাশ নেই।আমি অবিনশ্বর।আমি আছি-আছি-আছি।।”

“রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও, আমিই রক্ষা করিব।”

আপনার মতামত জানান