লোটন ষষ্ঠী ব্রত শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিনে পালন করা হয়। মহিলারা গর্ভবতী সময় থেকে সন্তান বড় হওয়া পর্যন্ত এই ব্রত পালন করে থাকে। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।
এক দেশে এক বামুন আর বামনী বাস করতেন। তাঁদের এক ছেলে আর এক মেয়ে ছিল। ছেলেটি ভালোই উপায় করতেন। বামনীর সংসার নাতি নাতনীতে পরিপূর্ন ছিল। তাই দেখে পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ হিংসেই করত। কেউ কেউ বলত মা ষষ্ঠী যেন বামনীর সংসারে ডালে ডালে ফল দিয়েছেন।
শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিনে বামনী গিন্নি ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করেছিলেন। তার ছটা সোনার লোটন ছিল। পুজো করার সময় গিন্নি কৌটো খুলে দেখেন, তিনটে লোটন নেই। তাই দেখে গিন্নি তাঁর বউকে জিজ্ঞেস করলেন, “লোটন কে চুরি করেছে?”
বউ এই শুনে কাঁদতে কাঁদতে তার ছেলের মাথায় এক হাত দিয়ে দিব্যি করলেন, “আমি যদি লোটন চুরি করি, তাহলে আমার ছেলেরা মরে যাবে।”
গিন্নি তখন মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে মেয়ে বললেন, “আমি আজ আছি কাল নেই। আমি তোমার সংসারের কি জানি। আমি কেন লোটন চুরি করব?”
গিন্নি অগত্যা ক্ষীরের লোটন গড়ে পুজো করলেন।
ছেলে বাড়ি ফিরলে মায়ের কাছে লোটন চুরির কথা শুনে বউকে যা মুখে এল তাই বললেন। বউ মনের দুঃখে দরজা দিয়ে সারারাত কাঁদতে লাগলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ দেখলেন যে তার সাতটি ছেলেই মরে গেছে। তার কান্না শুনে সবাই ছুটে এসে এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেল। ননদ বলে উঠলেন, ” লোটন চুরি করে আবার ঢং করে ছেলের নামে দিব্যি করা হয়েছে, তার ফল মা ষষ্ঠী হাতে নাতে দেখিয়ে দিলেন।”
তাই শুনে বউ খুব কাঁদতে লাগল। সারাদিন ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লেন। মা ষষ্ঠীর খুব দয়া হল। মা ষষ্ঠী বুড়ির বেশ ধরে, বউ এর ঘরে এসে বললেন, ” ছিঃ মা! ছেলেদের মাথায় হাত দিয়ে দিব্যি করতে আছে?”
বুড়ির কথায় চমকে উঠে বউ বলল “ওরা মিছিমিছি আমার নামে মিথ্যে দোষ দিচ্ছে। আমি লোটন চুরি করিনি।”
তাই শুনে বুড়ি বললেন, ” তুমি অতগুলো ছেলের মা। এটা জানোনা ছেলেদের মাথায় হাত দিয়ে দিব্যি করতে নেই। এতে ছেলের পরমায়ু ক্ষয় হয়! সত্যি হোক বা মিথ্যে কখনো ছেলের মাথায় হাত দিয়ে দিব্যি করবে না। তুমি পুজোর কাছে যাও। গিয়ে দেখবে বাঁশ পাতা পড়ে আছে। সেই বাঁশপাতা ঘটের জলে ডুবিয়ে মা ষষ্ঠীর নাম করে সাত ছেলের গায়ে ছিটিয়ে দাও। দেখবে সবাই বেঁচে উঠেছে।”
বুড়ির কথা মত তাই করতে বউয়ের সাত ছেলে বেঁচে উঠল। তার ছেলেদের বেঁচে উঠতে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে গেল। এদিকে গিন্নির মেয়ের দুই ছেলে মরে গেল। তাই দেখে মেয়েও কেঁদে অস্থির। তখন দৈববাণী এল “তুই লোটন চুরি করে বাড়ির বউ এর নামে দোষ দিয়েছিস। তোর ছেলেরা মরবে না তো কার মরবে? তুই যদি বউয়ের পা ধরে ক্ষমা চাস তাহলে বউ তোর ছেলেদের বাঁচিয়ে দেবে। “
তাই শুনে ননদ বউ এর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে মা ষষ্ঠীর নামে শপথ করলেন আর কোনদিন ঠাকুরের জিনিষ চুরি করবেন না। এই বলে তিনি লোটন বের করে দিলেন। তখন বউ সেই বাঁশপাতা ঘটের জলে ডুবিয়ে ননদের ছেলেদের ওপর ছিটিয়ে দিতেই তারা বেঁচে উঠল। তাই দেখে বাড়ির সবাই ও পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই ধন্যি ধন্যি করতে লাগল।
এইভাবে মা ষষ্ঠীর পূজার মাহাত্ম্য চারিদিকে প্রচার পেল।
ব্রতকথাটি ভিডিও আকারে দেখুন এখানে
তথ্যসূত্র
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ আশুতোষ মজুমদার, প্রকাশকঃ অরুণ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ৩৪
- মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, প্রকাশকঃ নির্মল কুমার সাহা, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ৮৫