প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল রাষ্ট্রীয় একতা দিবস (National Unity Day)।
ভারতবর্ষে প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর তারিখে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালন করা হয়। ঐক্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে মানুষকে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, মূলত এই উদ্দেশ্য নিয়েই রাষ্ট্রীয় একতা দিবস উদযাপন করা হয় প্রত্যেকবছর। একতাই বল, তাই বিভিন্নপ্রান্তের মানুষের মধ্যে ঐক্যস্থাপিত হলে একটি দেশ আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিচিত্র ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ ভারতবর্ষে পাশাপাশি অবস্থান করছেন সুদীর্ঘকাল ধরে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতবর্ষের প্রধান সম্পদ। তবে নানাকারণে মানুষে মানুষে একতার ভাবে শিথিলতা এসে পড়েছে। এই দিনটি যে জাতির একাত্মতা ও অখন্ডতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে, নানা সম্ভাব্য হুমকি বা সংকটের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করবার শক্তি সুনিশ্চিত করবে এবং ভারতবর্ষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তুলে তাকে সুরক্ষিত করবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে এই ধরনের কথাই বলা হয়েছিল।
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ‘লৌহমানব’ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিন ৩১ অক্টোবর দিনটিকেই রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্ব এবং ভারতবর্ষের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গান্ধীজীর আদর্শকে রূপ দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। তবে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ ভারতকে খন্ড-বিখন্ড হওয়া থেকে রক্ষা করেন বল্লভভাই প্যাটেল। শুধু তাই নয়, রাজ্যগুলির একীকরণ এবং কেন্দ্রীকরণেরও মূল কান্ডারি ছিলেন তিনি৷ ৫৬২টি স্বাধীন রাজ্যকে একত্রিত করে এক ভারতের ছত্রতলে এনে ভারতের অখন্ডতাকে রক্ষা করার কাজটি সহজ না হলেও, শত বাধা পেরিয়ে সে-কাজ সম্পন্ন করেছিলেন ‘আয়রনম্যান’ বল্লভভাই। সেই কারণেই তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্মদিনটিকেই ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করবার জন্য উপযুক্ত মনে করেছিল।
সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিন এবং এই বিশেষ দিনটি মর্যাদা সহকারে পালন করা হয়। প্রভাতফেরীর এবং দীর্ঘ পদযাত্রার আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ক্লাব, স্কুল বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্যোগে। সরকারের উদ্যোগে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের বন্দোবস্ত হয়। এছাড়াও পাড়ায় বা স্কুলে আরও নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কোথাও বা বসে আঁকো প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে ঠিক করা হয় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। এছাড়াও রেডিও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়, কোথাও বা সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়ে থাকে। ২০১৮ সালে ভারত সরকার ৩১ অক্টোবরেই গুজরাটের কেভাদিয়ায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সুউচ্চ মূর্তি নির্মাণ করে তাঁকে সম্মান জানায় এবং সেই মূর্তিটিকে একতার মূর্তি বা ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ (Statue of Unity) নাম দেওয়া হয়। সেবছর ‘ওয়াল অব ইউনিটি’রও (Wall of Unity) উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। একতার জন্য দৌড় বা ‘রান ফর ইউনিটি’র (Run for Unity) আয়োজনও করা হয়েছিল সেবার। দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং হ্রাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং প্রতিবেশী রাজ্যের পুলিশবাহিনীর একতাবদ্ধ হওয়ার কথাও বলেছিলেন। এইরকম বিচিত্রভাবে এবং গুরুত্ব সহকারে উদযাপনের মাধ্যমে মানুষের কাছে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় এই বিশেষ দিনটিতে।