রঙ্কিনী মন্দির

রঙ্কিনী মন্দির

জামশেদপুরের কাছে জাদুগোড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত রঙ্কিনী মন্দির স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি মন্দির। এখানকার সমস্ত মানুষ নিয়মিত এই মন্দিরে আসেন এবং মায়ের কাছে মনে মনে কিছু প্রার্থনা করেন। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে এখান থেকে কেউ কখনও খালি হাতে ফেরেনি। মা রঙ্কিনী সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। মা রঙ্কিনী কালীর একটি অবতার এবং প্রধানত পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতি দ্বারা পূজিতা হন। শুধুমাত্র ভূমীজ উপজাতির মানুষই এই মন্দিরের পূজারী হতে পারেন। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে প্রাচীন সময়ে এই মন্দিরে এক সময় নরবলির চল ছিল, যা ব্রিটিশ আমলে নাকি বন্ধ হয়।

এই মন্দির বহু প্রাচীন। প্রাচীনতার কারণে এই মন্দিরকে ঘিরে বেশ কিছু জনশ্রুতি আছে। একটি জনশ্রুতি অনুসারে মাতা রঙ্কিণী এই অঞ্চলের বনে জঙ্গলে বাস করতেন। একদিন এক ব্যক্তি এক বাচ্চা মেয়েকে জঙ্গলে একা হেঁটে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন মেয়েটি কোথা থেকে এসেছে আর আর কোন গ্রামের বাসিন্দা। মেয়েটি উত্তর না দিয়ে দৌড়ে পালাল এবং কিছুদুরে একজন ধোপা কাপড় কাচছিলেন যেখানে সেখানে উপস্থিত হল এবং সেখানে রাখা কাপড়ের স্তূপের মধ্যে মেয়েটি লুকিয়ে পড়ল। যে ব্যক্তি তাঁর পিছু পিছু আসছিলেন, তিনি এসে মেয়েটিকে কিন্তু খুঁজে পেলেন না। এদিকে ধীরে ধীরে সেই কাপড়ের স্তূপ পাথরে পরিণত হয়। সেই পাথরটিকেই মায়ের মূর্তিরূপে পূজা করা হয়। আরেকটি জনশ্রুতি অনুসারে এক স্থানীয় আদিবাসী একবার একটি মেয়েকে এক রাক্ষসকে হত্যা করতে দেখে মেয়েটির কাছে যান কিন্তু মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই রাতেই ঐ ব্যক্তিকে দেবী রঙ্কিণী স্বপ্নাদেশ দিয়ে দেবীর একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন।

ঠিক কোন সময়ে মূল মন্দিরটি তৈরি হয়েছে জানা যায়নি। তবে মন্দিরের বর্তমান যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তা তৈরি হয়েছে ১৯৫০ সালে। মূল রাস্তার ওপর অবস্থিত এই মন্দির দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা আর মন্দিরের মাঝে রয়েছে লোহার রেলিং, যার মধ্যে দিয়ে ভক্তেরা মূল মন্দিরে পূজার জন্য লাইন দেয়। মন্দিরে লম্বা গোপুরম রয়েছে, যেমনটি দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। গোপুরমে দেবী রঙ্কিণীর বিভিন্ন রূপ খোদাই করা আছে। মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ঠিক ওপরে সপরিবারে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য দেবতার মূর্তিও খোদাই করা রয়েছে। মূল মন্দিরের দুই পাশে রয়েছে আরও দুটো মন্দির। একটি মন্দিরে রয়েছে গণেশের মূর্তি। পাশেরটি শিবমন্দির। গণেশ মন্দিরের পাশে রয়েছে পূজার সামগ্রী কেনাকাটি করার দোকান।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনো মূর্তি নেই। একটি পাথরকে দেবীরূপে পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এখানের দেবী খুবই জাগ্রতা। মন্দিরের উল্টোদিকে গাছে লাল কাপড়ে নারকেল বেঁধে ভক্তেরা মনস্কামনা জানিয়ে যায়। ভক্তদের মতে মা তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন।

সারা বছর ধরেই মন্দিরে ভিড় হয়। বিভিন্ন উৎসব যেমন দুর্গাপূজা, কালীপূজা এই সময়ে ভিড় খুবই বেড়ে যায়। সকাল ৬টা থেকে মন্দিরে ভক্তেরা পূজার জন্য ভিড় করে।

মন্দিরের ভিডিও তথ্যসমেত দেখুন এখানে

আপনার মতামত জানান