রথযাত্রা

রথযাত্রা

হিন্দুধর্মের অন্যতম বিখ্যাত উৎসব হল রথযাত্রা (Rath-yatra)। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত এই উৎসবটির কেন্দ্রস্থল ওড়িশা রাজ্যের পুরী শহরটি হলেও পশ্চিমবঙ্গেও এই রথযাত্রা যথেষ্ট জাঁকজমক সহকারে অনুষ্ঠিত হয়।

এই রথযাত্রা প্রতিবছর ওড়িয়া দিনপঞ্জির আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত হয়ে থাকে।

পুরীর এই রথযাত্রা (স্থানীয় ভাষায় পাহাণ্ডি নামে পরিচিত)-র উৎপত্তির পেছনে একটি পৌরাণিক ইতিহাস আছে। ওড়িশার প্রাচীন দুই পুঁথি  ‘উৎকলখণ্ড’ এবং ‘দেউল তোলা’-তে  রথযাত্রার জন্মবৃত্তান্তের যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায় রথযাত্রার শুরু প্রায় সত্যযুগে। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর দ্বারকার সমুদ্রতীরে মৃতদেহ পোড়াবার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সত্‍‌কার কার্য অসমাপ্ত থেকে যায়। ওই অর্ধদগ্ধ দেহাংশ সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূলে কলিঙ্গ রাজ্য(ওড়িশা) এসে পৌঁছয়। কলিঙ্গের তখন নাম ছিল মালবদেশ। ওই অঞ্চলে বসবাসকারী এক দল শবর তাঁদের নেতা বিশ্ববসুর নেতৃত্বে গভীর জঙ্গলে মন্দির নির্মাণ করে ওই দেহাংশকে ‘নীলমাধব’ দেবতাজ্ঞানে পুজো করতে আরম্ভ করে। নীলমাধবের খ্যাতি শুনে প্রাচীন অবন্তী নগরীর বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তা অধিগ্রহণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। বিশ্ববসুর কাছে পরাজিত ইন্দ্রদ্যুম্ন তখন বিষ্ণুর প্রার্থনা আরম্ভ করলে একদিন বিষ্ণু তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের  স্বপ্নে হাজির হয়ে রাজাকে বলেন যে পুরীর সমুদ্রতটে একটি কাঠের টুকরো ভেসে এসেছে। ভেসে আসা সেই কাঠের টুকরো দিয়ে তাঁর মূর্তি তৈরি করুক রাজা। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা মূর্তি তৈরির জন্য একজন উপযুক্ত কাঠের শিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে  এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পীর খোঁজ পান রাজা। সেই বৃদ্ধ শিল্পী মূর্তি  তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রাজাকে এবং সঙ্গে এও বলেন মূর্তি তৈরীর সময়  কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। এদিকে রাজা  কাজের অগ্রগতির  ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তিনি বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ছয়-সাত দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রাজা কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী উধাও। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হাত পা কিছুই তখনও তৈরি হয়নি দেখে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন ও কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি ঈশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। পরবর্তীকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন করেন।

রথযাত্রার ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজতে গেলে দেখা যায় ওড়িশায় সোম বংশীয় রাজাদের আমলে প্রথম কোন সাহিত্যে রথযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। একাদশ শতকের ওড়িয়া নাট্যকার মুরারি মিশ্র রচিত ‘অনর্ঘ রাঘব’ নাটকে সর্বপ্রথম পুরীর সমুদ্র তীরস্থ অঞ্চলে রথযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। চিত্র হিসেবে রথযাত্রার প্রামাণ্য উল্লেখ পাওয়া যায় চতুর্দশ শতকে গঙ্গা বংশীয় রাজাদের আমলে চিত্রিত বিভিন্ন নিদর্শনে। এ প্রসঙ্গে বলা ভালো রথযাত্রা কিন্তু ইংরেজদের চোখে অন্যরকমভাবে ধরা পড়েছে। উনিশ শতকের শুরুতে কোন কোন জগন্নাথভক্তের রথযাত্রার দিনে রথের চাকার তলায় আত্মাহুতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা দেখা যেত। যদিও ১৮১৮ সালে এক ইংরেজ অফিসারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী সাকুল্যে বছরে এক দুটো এরকম ঘটনা ঘটত। কিন্তু ইংরেজরা সেটাকেই এত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে যে কালক্রমে ‘জুগারনট'(Juggernaut) নামে একটি আলাদা শব্দবন্ধই তৈরি হয়ে যায়(বলা বাহুল্য জগন্নাথের ইংরেজ উচ্চারণ জুগারনট) যার অর্থ দাঁড়ায় -অপ্রতিরোধ্য ধ্বংসাত্মক শক্তি। বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স তাঁর উপন্যাস ‘দ্য লাইফ অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারস অফ মার্টিন চাজলউইট'(The Life and Adventures of Martin Chuzzlewit)-এ সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।

প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পুরীর রাজার প্রাসাদের সামনে রথ তৈরির শুভারম্ভ হয়। এই দিনেই ‘বাহার চন্দনযাত্রা’ উৎসবও শুরু হয় একই সাথে। বাহার চন্দন যাত্রা উৎসবের শেষ দিনে ‘চাকা- অক্ষ ডেরা’ উৎসব অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। এই দিন জগন্নাথের রথ নান্দীঘোষের মাঝের চাকা ও অক্ষ লাগানো হয় যা নাহক চাকা ও নাহক অক্ষ নামে পরিচিত। এই চাকা ও অক্ষ লাগানোর পর রথের বাকী অংশ গড়ে তোলা হয়। এদিন তিনটি রথের মোট ৪২টি চাকার মধ্যে ২০টি চাকা লাগানো হয়। রথযাত্রা উৎসবের ষোলো দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় স্নান যাত্রা উৎসব। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠমাসের দেবস্নান পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্নানযাত্রার পর প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী জগন্নাথের জ্বর আসে এবং এই জ্বর কমাতে পথ্য হিসেবে জগন্নাথকে মিষ্টি রসের পাচন ও বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি সহযোগে ভোগ দেওয়া হয়। এই সময়ে টানা পনেরো দিন জনসমক্ষ থেকে দূরে মন্দিরের নিরোধনগৃহে অবস্থান করেন জগন্নাথ। এই সময় কালকে ‘অনবসর’ বলা হয়। মূল মন্দিরে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রার বিগ্রহ যেখানে অধিষ্ঠান করে সেখানে তখন কেবলমাত্র বিশেষ তিনধরণের পটচিত্র বিগ্রহের বিকল্প হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য টাঙানো থাকে। পনেরো দিন পর নবমূর্তিতে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাকে সুসজ্জিত করে মূল মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এই দিন জগন্নাথের চোখ আঁকা হয় বলে এই উৎসব ‘নেত্রোৎসব’ বা নবযৌবন উৎসব নামে পরিচিত। এই নেত্রোৎসবের পরই শুরু হয় রথ যাত্রা উৎসব।

রথযাত্রা আসলে হিন্দু দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে গুন্ডিচা মন্দির যাত্রাকে বোঝায়। পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমনে এই রথযাত্রার শুরু হয় শ্রী মন্দির বা জগন্নাথ মন্দির থেকে। মূল মন্দির থেকে বেরিয়ে  জগন্নাথ, বলরাম  ও সুভদ্রার প্রায় ৩ কিমি দূরে অবস্থিত গুন্ডিচা মন্দিরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এবং  সাতদিন পর গুন্ডিচা মন্দির থেকে ফেরার পথে মৌসিমা মন্দিরে’ জগন্নাথের প্রিয় ‘পোড়া-পিঠে’ খেয়ে বাড়ি অর্থাৎ মূল মন্দিরে ফিরে আসার মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে, যা ‘উল্টোরথ’ হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রথযাত্রার দিন জগন্নাথের রথ পুরীর গ্র্যান্ড রোড নিকটস্থ মুসলমান ভক্ত কবি সালাবেগার সমাধির সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় তাঁর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য।

রথযাত্রায় তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি পৃথক রথ। জগন্নাথের রথের নাম নান্দীঘোষ বা কপিধ্বজ বা গরুড়ধ্বজ। রথে জগন্নাথের সঙ্গী হন মদনমোহন। নান্দীঘোষের উচ্চতা ৪৫ ফুট। চাকার সংখ্যা ১৬টি। ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল ও হলুদ কাপড়ে। জগন্নাথের রথ নান্দীঘোষের সারথির নাম দারুকা। রথের মাথায় থাকা পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী। এই রথের সামনে চারটি ঘোড়া থাকে যাদের নাম- শঙ্খ, বলাহক, শ্বেতা, ও হরিদাশ্ব । জগন্নাথের রথের দড়ি বা রশিটির নাম ‘শঙ্খচূড়া নাগুনি’। জগন্নাথের রথে আরও নয় দেবতা অধিষ্ঠান করেন, যাঁরা হলেন- গোবর্ধন, কৃষ্ণ, নরসিংহ, রাম, নারায়ণ, হনুমান, রুদ্র, বরাহ, ত্রিবিক্রম। জগন্নাথের রথে একজন রক্ষীও থাকে যার  নাম গরুড়।

বলরামের রথের নাম-তালধ্বজ বা  হলধ্বজ বা লাঙ্গলধ্বজ। রথে বলরামের সঙ্গী হন রামকৃষ্ণ। তালধ্বজের উচ্চতা ৪৪ ফুট। চাকার সংখ্যা ১৪টি। ৭৬৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া  এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল ও সবুজ কাপড়ে। বলরামের রথের দড়ি বা রশিটির নাম ‘বাসুকি নাগ’। তালধ্বজের সারথির নাম মাতালি, রক্ষীর নাম বাসুদেব।রথের মাথায় পতাকার নাম উন্যানী। বলরামের রথেও নয়টি  দেবতা থাকেন যাঁরা  হলেন-  কার্তিক, গণেশ, সর্বমঙ্গলা, মৃত্যুঞ্জয়, মুক্তেশ্বর, প্রলম্বরী, হলায়ুধ, নতম্বর, শেষদেব। তালধ্বজেও থাকে চারটি ঘোড়া যাদের নাম- তীব্র, ঘোর, দীর্ঘশ্রম, ও স্বর্ণলাভ।

সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন বা দেবদলন বা পদ্মধ্বজ। রথে সুভদ্রার সঙ্গী হন সুদর্শনা।দর্পদলনের  উচ্চতা ৪৩ ফুট। চাকার সংখ্যা ১২টি। ৫৯৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া  এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল এবং কালো কাপড়ে। দর্পদলনের রথের দড়ি বা রশিটির নাম ‘স্বর্ণচূড়া নাগুনি’। দর্পদলনের সারথির নাম অর্জুন। রথের মাথায় পতাকার নাম নদম্বিকা। সুভদ্রার রথে নয় জন  দেবী অধিষ্ঠান করেন – এঁদের মধ্যে আছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা, বিমলা। দর্পদলনেও থাকে চারটি ঘোড়া- রচিকা, মচিকা, জিতা, অপরাজিতা। সুভদ্রার রথে একজন রক্ষীও থাকে যার নাম – জয়দুর্গা।

পুরীর গজপতি রাজা তিনটি রথের সম্মুখভাগ সোনার হাতল বাঁধানো ঝাঁটা দ্বারা ঝাঁট দেওয়ার মাধ্যমে রথযাত্রা বা পাহাণ্ডির শুভ সূচনা করেন। এই প্রথা ‘চেরা পাঁহারা’ নামে পরিচিত। ষোলো শতাব্দীতে সূর্যবংশীয় রাজা কপিলেন্দ্রর পুত্র গজপতি রাজ পুরুষোত্তম প্রথম এই প্রথা শুরু করেন।

গুন্ডিচা মন্দিরে এক সপ্তাহ কাটানোর পর উল্টোরথের দিন (যা ‘বহুড়া যাত্রা’ নামে পরিচিত) তিন ভাই বোন আবার নিজগৃহে ফেরত আসে। জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথের ফেরত আসাকে কেন্দ্র করেও একটি অনুষ্ঠান হয়। মনে করা হয় স্ত্রী লক্ষ্মীকে সঙ্গে না নিয়েই গুন্ডিচা মন্দির ঘুরতে যাওয়ার ফলে দেবী লক্ষ্মীর প্রবল অভিমান হয় যা ভাঙাতে শেষ পর্যন্ত জগন্নাথকে রসগোল্লার শরণাপন্ন হতে হয়। জগন্নাথের সাথে রসগোল্লার এই সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন সমগ্র ওড়িশা জুড়ে পালিত হয় ‘রসগোল্লা দিবস’। মূল মন্দিরে প্রবেশের পর তিন বিগ্রহের গর্ভগৃহে প্রবেশ ‘নীলাদ্রি বীজে’ নামে পরিচিত।

রথযাত্রা শেষে রথগুলি ধাপে ধাপে খুলে ফেলে রথ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঠগুলি জগন্নাথের ভোগ প্রস্তুতির জ্বালানী কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক কালে করোনা অতিমারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পুরীর এই রথযাত্রায় পুণ্যার্থী সমাবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা হলেও রথযাত্রার ইতিহাসে কিন্তু এমন ঘটনা প্রথম নয় যেবার রথযাত্রা হয়নি। ১৫৬৮ সালে কালাপাহাড়ের আক্রমণে জগন্নাথ মন্দির ধ্বংস হলে ১৫৭৭ সাল অবধি রথযাত্রা স্থগিত থাকে। এরপর ১৬০১ সালে বাংলার নবাবের সেনাপতি মির্জা খুররম পুরীর মন্দির আক্রমণ করলে মন্দিরের দৈতাপতিরা তিনটি বিগ্রহ নিয়ে চোদ্দ কিমি দূরে অবস্থিত কপিলেশ্বরে অবস্থিত পঞ্চমুখী গোঁসাই মন্দিরে পালিয়ে যান। ফলে সেবছরও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই আক্রমণের ছয় বছরের মধ্যেই ১৬০৭ সালে ওড়িশার মোগল সুবেদার কাশিম খান পুরীর মন্দির আক্রমণ করেন। খুরদার গোপাল জীউ মন্দিরে শেষ পর্যন্ত বিগ্রহগুলিকে লুকিয়ে রাখার কারণে ঐ বছরও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৬১১ এবং ১৬১৭ সালে আকবরের সভাসদ টোডরমলের পুত্র কল্যাণ মালের আক্রমণের ফলে বিগ্রহগুলিকে চিলিকা হ্রদের একটি গোপন স্থানে লুকিয়ে ফেলা হয়। ফলত ঐ দুই বছর রথযাত্রা হয়নি। ১৬২১ সালে সুবেদার আহমেদ বেগের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিগ্রহগুলি সরিয়ে ফেলা হলে পরপর দুবছর ১৬২১-১৬২২ রথযাত্রা হয়নি। এরপর ১৬৯২ সালে মোগল সুবেদার এক্রম খানের আক্রমণ থেকে বিগ্রহগুলি বাঁচাতে সেগুলি প্রায় তেরো বছর লুকিয়ে রাখা হয় ওড়িশার এক গোপন জায়গায়। ফলে ১৭০৭ সাল অবধি রথযাত্রা হয়নি। ১৭৩১ এবং ১৭৩৩ সালে ওড়িশার ডেপুটি গভর্নর মহম্মদ তাকি খানের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিগ্রহগুলি মূল মন্দির থেকে সরিয়ে নেওয়ার কারণে ১৭৩৫ সাল অবধি কোন রথযাত্রা হয়নি।

8 comments

আপনার মতামত জানান