সতীপীঠ মিথিলা

সতীপীঠ মিথিলা

সতীপীঠ মিথিলার সঠিক অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। তিনটি আলাদা মন্দিরকে সতীপীঠের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই মন্দিরগুলি হল যথাক্রমে ভারতের বিহার রাজ্য ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত ‘বনদুর্গ মন্দির’, বিহারে অবস্থিত ‘জয়মঙ্গলা মন্দির’ এবং ‘উগ্রতারা মন্দির’। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মতে মিথিলা সতীপীঠ বিহার-নেপাল সীমান্তের জনকপুর রেলস্টেশন থেকে পনেরো কিমি পূর্বে মধুবনী নামক স্থানে অবস্থিত। সতীর বাম কাঁধ পড়ে এই সতীপীঠ গড়ে উঠেছে। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী উমা বা মহাদেবী এবং ভৈরব হলেন মহোদর।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য চালু করেন। মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখন্ডগুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়, বলা হয় সতীর বাম কাঁধ পড়ে মিথিলা সতীপীঠটি গড়ে উঠেছে।

এই সতীপীঠের পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। মনে করা হয় ত্রেতাযুগে এই স্থানেই রাজত্ব করতেন রাজর্ষি জনক। এই স্থানেই জন্ম হয়েছিল জনক রাজার কন্যা সীতাদেবীর। হরধনুকে ভেঙে এখানেই রাম সীতাকে বিয়ে করেছিলেন।

এখানকার মন্দিরটি সাদা রঙের ও বিশাল আকারের এবং তার গঠন অনেকটা দুর্গের মত। মন্দিরে চারটি মিনারের মত টাওয়ার আছে। মন্দিরের সামনে আছে একটি রঙিন ফোয়ারা যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এখানে একটি বিশাল দরজাও আছে যার উচ্চতা ত্রিশ মিটার। মন্দিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ সবুজে ঢাকা যা দূর থেকে খুব সুন্দর দেখতে লাগে। এই স্থানে উমা দেবীর মন্দির ছাড়াও সীতা দেবীর মন্দির আছে। আছে সোনা মাঈ ও মিথিলাচল মন্দির যেগুলি স্থানীয়দের মতে দুর্গাস্থান নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠে দেবী এবং ভৈরব অধিষ্ঠিত থাকে। দেবী হলেন সতীর রূপ। ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। মিথিলা সতীপীঠে দেবী উমা বা মহাদেবী এবং ভৈরব হলেন মহোদর।

সীতাদেবীর জন্মস্থান হওয়ায় এখানে ‘সীতানবমী’ বা সীতাদেবীর জন্মতিথি এবং ‘রামনবমী’ বা শ্রীরামের জন্মতিথি খুব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। নবরাত্রির সময়েও এখানে অনেক ভক্তেরা পুজো দিতে আসেন। কিছু ভক্ত এই সময় টানা নয় দিন ধরে মাটি থেকে প্রাপ্ত কোন খাবার খান না। মহাশিবরাত্রির দিন ভক্তেরা এখানকার শিবলিঙ্গকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে পুজো করে এবং বেল বা শ্রীফল উৎসর্গ করে। এখানে পালিত অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি হল- জন্মাষ্টমী, কালী পূজা, কার্তিক পূর্ণিমা, অক্ষয় নবমী, নাগ পঞ্চমী, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি। পর্বদিন ছাড়া সাধারণ দিনেও অনেক ভক্ত ফলমূল, দুধ, ঘরে তৈরি মিষ্টি প্রভৃতি দিয়ে দেবীর পুজো করে। সাধারণত সকাল ৬:০০ থেকে রাত ৮:০০ পর্যন্ত মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

আপনার মতামত জানান