সতীপীঠ রামগিরি

সতীপীঠ রামগিরি

রামগিরি মন্দিরটি উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট অঞ্চলে চিত্রকূট পর্বতের উপরেই অবস্থিত। এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর ডান স্তন পড়েছিল। মতান্তরে এখানে সতীর পেটের হাড় পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী শিবানী এবং ভৈরব হলেন চাঁদ বা চান্দা। এই সতীপীঠ চিত্রকূট শক্তিপীঠ হিসেবেও পরিচিত।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের বাপের বাড়িতেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছাতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব এই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। মহাদেবের তান্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখণ্ডগুলিই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই রকম একটি পীঠ হলো সতীপীঠ রামগিরি। বলা হয় সতীর ডান স্তন পড়ে জন্ম হয়েছে এই সতীপীঠ রামগিরির।

হিন্দু ধর্মে চিত্রকূট পর্বতের এই রামগিরি মন্দিরকে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থ হিসেবে কল্পনা করা হয়। রামায়ণের কাহিনি থেকে জানা যায়, রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ তাঁদের চোদ্দ বছরের বনবাসের মধ্যে সুদীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর সময় অতিবাহিত করেছিলেন এই চিত্রকূট পাহাড়েই। অত্রি, সতী অনুসূয়া, দত্তাত্রেয়, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়, শরভঙ্গ, সুতীক্ষ্ণ প্রমুখ প্রাচীনকালের বহু মুনি-ঋষি এই অঞ্চলেই তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে জানা যায়। এখানেই ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর তাঁদের নিজ নিজ অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পুরাণে বলা হয় রামচন্দ্র যখন তাঁর বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কাজ করছিলেন, এই চিত্রকূট পর্বতেই সকল দেব-দেবী শুদ্ধি গ্রহণের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। কোনও পরিবারে কারও মৃত্যু হলে তার তেরো দিন পরে আত্মীয়-পরিজনদের উদ্দেশ্যে যে ভোজ দেওয়া হয়, তাকেই শুদ্ধি বলা হয়। বাল্মীকির রামায়ণেই প্রথম এই চিত্রকূট পর্বতের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু মহাকবি কালিদাস একেই প্রথম রামগিরি নামে বর্ণনা করেন। শ্রীরামের প্রতি ভক্তি থেকেই এই নামকরণ করেছিলেন তিনি, এমনটাই মনে করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে, হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত কবি তুলসীদাস নাকি এই চিত্রকূট পর্বতেই স্বয়ং শ্রীরামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।

মন্দাকিনী নদীর পাশেই এই চিত্রকূট মন্দির তথা রামগিরি সতীপীঠ অবস্থিত। প্রয়াগরাজের মন্দিরের মতই রামগিরি সতীপীঠের মাহাত্ম্যও বহুধা বিস্তৃত। পাথরের তৈরি এই মন্দিরে বহু দেব-দেবীর মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। অনেকগুলি সিঁড়ি পেরিয়ে মন্দিরের একেবারে প্রধান ফটকে উঠে আসতে হয় এবং তারপরেই মন্দিরের মূল অংশ শুরু হয়।

প্রত্যেকটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠে দেবী এবং ভৈরব অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবী হলেন সতীর রূপ এবং ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। সতীপীঠ রামগিরিতে সতী পূজিতা হন শিবানী রূপে এবং ভৈরব এখানে পরিচিত চান্দা বা চাঁদ নামে।

নবরাত্রি, মকর সংক্রান্তি, অমাবস্যা, সোমবতী অমাবস্যা, দীপাবলি, রাম নবমী ইত্যাদি উৎসব এখানে মহা ধুমধাম সহকারে পালন করা হয়। এই সময় রামগিরির মন্দিরে বহু ভক্তের সমাগমও লক্ষ্য করা যায়।      

আপনার মতামত জানান