যমজ বাচ্চা

যমজ বাচ্চা হয় কেন

অন্যান্য অনেক প্রাণীর এক বারে একাধিক বাচ্চা হলেও মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত একটিই বাচ্চা হয়। তবে কখনও কখনও দুই বা তার অধিক বাচ্চা হয়। একসঙ্গে দুটি বাচ্চা হলে তাদের যমজ (twins) বলা হয়। আমরা এখানে জেনে নেব যমজ বাচ্চা হয় কেন? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গেছে যমজ সন্তান জন্মানোর হার অতীতের তুলনায় ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হার কেন বাড়ছে সেই বিষয়েও এখানে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে।

খুব সহজভাবে বাচ্চা হওয়ার পদ্ধতি বলতে হলে বলতে হয় – নারীদেহে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু (egg) ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হয় এবং তা পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে নারী গর্ভবতী হয় এবং নিষিক্ত না হলে রজঃস্রাবের (periods) সময় বের হয়ে যায়।

যখন একটি ডিম্বাণু এবং একটি শুক্রাণু মিলিত হয় তখন একটি ভ্রূণকোষ বা জাইগোট (Zygote) তৈরি হয়। এই একটি কোষ বা জাইগোট থেকেই মানবজীবনের শুরু বলা যায়।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

এখন কোনওভাবে যদি একাধিক ডিম্বাণু একই সময়ে নারীদেহ থেকে নির্গত হয় তাহলে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে একাধিক জাইগোট তৈরি করতে পারে। আর আগেই বলা হয়েছে জাইগোট থেকেই তৈরী হয় পূর্ণ মানব। নারীদেহে দুটি ডিম্বাণু থাকলে দুটি বাচ্চা জন্মাবে যাদের ডাইজাইগোটিক টুইনস (Dizygotic Twins) বলে। যেহেতু আলাদা জাইগোট থেকে এরা তৈরি হয় তাই এদের ভ্রাতৃসম যমজ বা ফ্রাটারনাল টুইনস (fraternal) বলে। এদের জেনেটিক গঠন আলাদা হয় বলে এই যমজ বাচ্চারা আলাদা দেখতে হয় এবং লিঙ্গ (ছেলে-মেয়ে বা মেয়ে-মেয়ে বা ছেলে-ছেলে) যেকোনো হতে পারে। যমজ সাধারণত দুটি হলেও একসঙ্গে সর্বাধিক ৮ টি বাচ্চা জন্মানোর রেকর্ড (নাদিয়া সুলেমান, আমেরিকা) আছে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে ডাইজাইগোটিক টুইনস জন্মানোর ক্ষেত্রে জেনেটিক ফ্যাক্টর কাজ করে, তবে তা নারীর দিক থেকেই হয়। এই মত অনুযায়ী, মহিলার অতিরিক্ত ডিম্বাণু তৈরি হওয়া বংশানুক্রমিক এবং তা এক নারী থেকে পরবর্তী নারীতেই সঞ্চালিত হতে পারে যেহেতু ডিম্বাণুর সংখ্যার সঙ্গে পুরুষের কোন সম্পর্ক নেই। তবে বর্তমানে ডাইজাইগোটিক টুইন জন্মের হার ক্রমেই বাড়ছে – এর জন্য বেশ কিছু অন্যান্য কারণ উঠে আসছে – (১) আধুনিকযুগে নারীরা বেশি বয়সে গর্ভধারণ করছে, সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি বয়সের পর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নারীর শরীর থেকে একাধিক ডিম্বাণু বের হয়। (২) গর্ভধারণের সমস্যার জন্য অনেক সময় ঔষধ প্রয়োগ করা হয় যা ডিম্বাণুর সংখ্যা  বাড়িয়ে দেয়। (৩) কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের জন্য (In vitro fertilization, IVF)  অনেক সময় একাধিক বাচ্চা গর্ভে আসতে পারে।

এছাড়াও আরেকভাবে যমজ বাচ্চা হতে পারে যা হলো মনোজাইগোটিক টুইনস (Monozygotic Twins)। এক্ষেত্রে নারীর দেহের একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে একটি জাইগোট তৈরি করে। সেই জাইগোট থেকে দুটি ভ্রূণ তৈরি হলে দুটি বাচ্চার জন্ম হয়। এক নতুন তত্ব অনুযায়ী, ব্লাসস্টোসিস্ট (Blastocyst) এর মধ্যে দুটি আভ্যন্তরীন কোষীয় বস্তু (Inner Cell Mass, ICM) থাকলে দুটি ভ্রূণ তৈরি হয়। যদিও অধিক প্রচলিত মতটি হল ভ্রূণ বা এমব্রায়ো ভেঙ্গে দুটি ভ্রূণের সৃষ্টি হলে যমজ বাচ্চা হয়। পেলুসিড জোন (pellucid zone) থেকে বের হওয়ার সময় ভ্রূণের বিভাজন ঘটলে মনোজাইগোটিক যমজ বাচ্চা হয়। যেহেতু এক্ষেত্রে একটি জাইগোট থেকে দুটি বাচ্চা হয় তাই দুজনের জিনের গঠন একই রকম হয়, ফলে তারা দেখতে একই রকম এবং একই লিঙ্গের (দুটিই ছেলে বা দুটিই মেয়ে) হয়। এই ধরণের যমজরা একই ধরণের হয় বলে এদের আইডেন্টিক্যাল টুইনস (Identical twins) বলে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডাইজাইগোটিক যমজের সংখ্যা মনোজাইগোটিক যমজের থেকে বেশি। ডাইজাইগোটিক যমজের সংখ্যা আফ্রিকানদের মধ্যে বেশি হয় আর মনোজাইগোটিক যমজের ক্ষেত্রে এই বন্টন গোটা পৃথিবী জুড়েই সমান কারণ মনোজাইগোটিক যমজের ক্ষেত্রে জিনের কোনও ভূমিকা নেই।

আপনার মতামত জানান