ঘাটশিলা ভ্রমণ

অনুচ্চ পাহাড়, টিলা, সুবর্ণরেখা নদী, মন্দির নিয়ে কালজয়ী সাহিত্যিক প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য ঘাটশিলা।সুবর্ণরেখা নদীর ঘাট তার সাথে শত শত শায়িত শিলা  থেকেই নামকরণ হয়েছে ঘাটশিলা।কলকাতা থেকে খুব কাছে, দূরত্ব মাত্র ২১৫ কিলোমিটার। সুবর্ণরেখা নদীর তীরে এটি বনভূমি এলাকায় অবস্থিত। এখানে একটি রেলওয়ে স্টেশন আছে যেটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের অন্তর্ভুক্ত।

ঘাটশিলা। ছবিঃ ইন্টারনেট

স্থানীয় ইতিহাস বলছে, কয়েকশো বছর আগে রাজস্থানের ঢোলপুর থেকে আসা রাজপুত যুবক জগন্নাথ দেব, খাতড়ার সুপুর পরগনার রাজা চিন্তামনি ধোপাকে পরাস্ত করে ‘জগন্নাথ শাহাজাদা ধবলদেব’ নাম গ্রহণ করে ধবলভূমের রাজা হন এবং সেই ধবলভূমের রাজধানী হিসেবে ‘সুপুর’কেই নির্বাচিত করেন।সেদিনের ধবলভূম এখন ঘাটশিলা নামে পরিচিত। সুপুরের রাজধানী প্রতিষ্ঠার প্রায় বত্রিশ পুরুষ পর রাজ পরিবারের ছোট-বড় দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। তৎকালীন রাজা টেঁকচন্দ্র খাতড়া চলে যান এবং রাজপ্রাসাদ কূলদেবতা কালাচাঁদ জিউকে সেখানে নিয়ে গিয়ে নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে খড়্গেশ্বর ধবলদেব অম্বিকানগরে গিয়ে নিজের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে সুপুরের সঙ্গে রাজ পরিবারের সম্পর্ক একপ্রকার ছিন্ন হয়ে যায়। বিগ্রহ শূন্য হয়ে পড়ে মন্দিরটিও।

গ্রামবাসীরা আজও মনে করেন রাজপরিবারের তৈরি ‘কালাচাঁদ জিউ’র মন্দিরটি তাদের গ্রামের গর্ব৷ গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে দু’বার মন্দিরটি সংস্কার করা হলেও  প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া গ্রামবাসীদের সীমিত সাধ্যে এই প্রাচীন ঐতিহ্যশালী মন্দির রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কলকাতা থেকে সড়কপথে ঘাটশিলা যেতে হলে খড়গপুর – বাহাড়গোড়া – ধলভুমগড়  হয়ে ঘাটশিলা পৌঁছতে হবে যদিও বাহাড়গোড়া থেকে ঘাটশিলা অবধি  রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। আরেকভাবেও যাওয়া যায়।খড়গপুর হয়ে লোধাসুলি থেকে ডানদিকে ঝাড়্ গ্রামের দিকে বেঁকে চিল্কিগড় – জামবনি – পাড়িহাটি – চাকুলিয়া – ধলভুমগড় হয়ে ঘাটশিলা ঢুকতে হবে।

ধারাগিরি জলপ্রপাত।ছবিঃ ইন্টারনেট

ট্রেনে গেলে – কলকাতা থেকে ঘাটশিলায় সুপারফাস্ট ট্রেনের স্টপ নেই । কলকাতা থেকে দূরত্ব ২১৫ কিমি, ৩.৫ ঘন্টার পথ । হাওড়া থেকে ২৮৭১ ইস্পাত এক্সপ্রেস ৬-৫৫, স্টিল এক্সপ্রেস ১৭-৩০, শালিমার এল টি টি এক্সপ্রেস ১৫-০০ টায় শালিমার ছেড়ে ১-৫৩, ২০-৩৬, ১৯-১৮ ছেড়ে সরাসরি ঘাটশিলা যাওয়া যায় ।

ঘাটশিলায় হোটেলের অভাব নেই। স্টেশনের কাছে সস্তা থেকে দামি নানান হোটেল পেয়ে যাবেন। যদি নিরিবিলি পছন্দ করেন তাহলে রূপনারায়ণ নদীর ধারেও হোটেল পাবেন।

ঘাটশিলা অতীতে ধলভূম বা ধবলভূমের রাজ্যের সদরদপ্তর ছিলো। এখানে তামার খনিটি বহু পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হিন্দুস্তান কপার। জায়গাটির নাম মৌভাণ্ডার। মোসাবনি সহ নানা খনি থেকে তামা সহ বিভিন্ন ধাতু আসে।

সুবর্ণরেখা পেরিয়ে ডান হাতি পথে এক কিলোমিটার গেলে রাতমোহনা।পাহাড়ি টিলায় সূর্যাস্ত দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

রাতমোহনা, ঘাটশিলা। ছবিঃ ইন্টারনেট

রেল স্টেশনের পূবে থানা লাগোয়া পশ্চিমে আদিবাসীদের দেবী উগ্ররূপা রণকিনির মন্দির।দহিজোড়ায় রয়েছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ আশ্রম তথা মন্দির। রেল স্টেশন থেকে ১ কিমি গিয়ে ফুলডুংরি পাহাড়ি টিলাটিও দেখবার মতো। ঘাটশিলা থেকে দহিজোড়া/মৌভাণ্ডার পেরিয়ে ঘণ্টা পাঁচেকের পথে দেখে নেওয়া যায় সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ের শিব ও পার্বতী মন্দির।

টিলার পাশ দিয়ে মেঠোপথ মাড়িয়ে ৯ কিমি গেলে বুরুডি বাঁধ। এখান থেকে জল যায় চাষের কাজে। সবুজ বনানী, সুবিস্তীর্ণ উপত্যকা, চারপাশে পাহাড় ঘেরা মালভূমির মতন জায়গাটি। নীলচে সবুজ শান্ত জলে দলমা পাহাড়ের ছায়া ভাসে। ফেরার পথে ঘাটশিলা থেকে আড়াই কিমি দূরের ধারাগিরি জলপ্রপাতটিও দেখে নেওয়া যায়।

গরমকাল বাদ দিয়ে যে কোনো সময় আসতে পারেন। বর্ষাকাল ও শীতকাল দুটি সময়েই ঘাটশিলা তার ভিন্ন রূপে অপরূপ।ঘাটশিলার প্রসিদ্ধ রতনের দোকানের রসমালাই আর প্রাচীন কালাকাঁদ বিক্রেতা গণেশ কালাকাঁদ এর মিষ্টি অতি অবশ্যই চেখে দেখার অনুরোধ রইলো।সববাংলায় এর পক্ষ থেকে অনুরোধ রইলো বর্ষাকালে সুবর্ণরেখা নদীতে না নামার জন্য।


ট্রিপ টিপস

  • কিভাবে যাবেন – কলকাতা থেকে ঘাটশিলা যাওয়ার প্রধান রাস্তা কলকাতা – খড়গপুর – বাহাড়গোড়া – ধলভুমগড় – ঘাটশিলা। যদিও বাহাড়গোড়া থেকে ঘাটশিলার ৫০ কিমি রাস্তার কাজ চলছে ফলে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। তার বদলে খড়গপুর হয়ে লোধাসুলি থেকে ডানদিকে ঝাড়্গ্রামের দিকে বেঁকে চিল্কিগড় – জামবনি – পাড়িহাটি – চাকুলিয়া – ধলভুমগড় হয়ে ঘাটশিলা ঢোকা ভালো। ট্রেনে গেলে – কলকাতা থেকে ঘাটশিলায় সুপারফাস্ট ট্রেনের স্টপ নেই । কলকাতা থেকে দূরত্ব ২১৫ কিমি, ৩.৫ ঘন্টার পথ । হাওড়া থেকে ২৮৭১ ইস্পাত এক্সপ্রেস ৬-৫৫, স্টিল এক্সপ্রেস ১৭-৩০, শালিমার এল টি টি এক্সপ্রেস ১৫-০০ টায় শালিমার ছেড়ে ১-৫৩, ২০-৩৬, ১৯-১৮ ছেড়ে সরাসরি ঘাটশিলা যাওয়া যায় ।
  • কোথায় থাকবেন – ঘাটশিলায় হোটেলের অভাব নেই। স্টেশনের কাছে সস্তা থেকে দামি নানান হোটেল পেয়ে যাবেন। যদি নিরিবিলি পছন্দ করেন তাহলে রূপনারায়ণ নদীর ধারেও হোটেল পাবেন।
  • কি দেখবেন – সুবর্ণরেখা নদী, গালুডি, বুরুডি বাঁধ, ধারাগিরি জলপ্রপাত, রাতমোহনা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’,পঞ্চ পান্ডব পাহাড়, যদুঘোরা পাহাড়, মৌভাণ্ডার, রণকিনি মাতার মন্দির, মোসাবনি খনি, সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ের শিব ও পার্বতী মন্দির,দহিজোড়ায় রয়েছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ আশ্রম তথা মন্দির, ফুলডুংরি পাহাড়।
  • কখন যাবেন – গরমকাল বাদ দিয়ে যে কোনো সময় আসতে পারেন। বর্ষাকাল ও শীতকাল দুটি সময়েই ঘাটশিলা তার ভিন্ন রূপে অপরূপ।
  • সতর্কতা – বর্ষায় সুবর্ণরেখা নদীতে নামা উচিত হবে না।
  • বিশেষ পরামর্শ – ঘাটশিলার প্রসিদ্ধ রতনের দোকানের রসমালাই, প্রাচীন কালাকাঁদ বিক্রেতা গণেশ কালাকাঁদ এর মিষ্টি।

2 comments

  1. ঝারিখন্ডের পথে যখন মহাপ্রভু আসেন তখন সুবর্ণ রেখা নদী তীর বরাবর তিনি আসেন। মহাপ্রভুর কোন ও নিদর্শন ঘাটশিলায় আছে কি?

আপনার মতামত জানান