অযোধ্যা পাহাড়

অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ

ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হলো এই অযোধ্যা পাহাড় । এটি পুরুলিয়া জেলার সবচেয়ে বড় পাহাড়শ্রেণী। এটি দলমা পাহাড়ের একটি অংশ ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গটি হল গোরগাবুরু।
৮৫৫ মিটার উচ্চতার এই গোরগাবুরু সারা দক্ষিণবঙ্গের মধ্যেও সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ। অযোধ্যা পাহাড়ের গড় উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফিট আর পাহাড়ের মাথাটি হিলটপ হিসেবে খ্যাত। পাহাড়ের মাথাটি প্রায় সমতল।
জনশ্রুতি আছে যে স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র এই পাহাড়ে এসেছিলেন। সীতার তৃষ্ণা পেলে শ্রীরামচন্দ্র তীর ছুঁড়ে পাহাড়ের বুক চিরে বের করেন জল। হিলটপের কাছে সেই জায়গাটি এখন সীতাকুন্ড নাম পরিচিত। মাটির ভেতর থেকে অবিরাম জলের ধারা এই কুন্ডয় এসে পরে। গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরমে নলকূপ ও জলের অন্যান্য উৎসগুলিতে জল না পাওয়া গেলেও এই সীতাকুণ্ডে জল পাওয়া যায়।

রেলপথে অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার জন্য সুবিধেজনক নামবার স্টেশন হলো বরাভূম বা পুরুলিয়া। হাওড়া স্টেশন থেকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার বা রূপসী বাংলা ট্রেন ধরে চলে আসুন পুরুলিয়া বা বরাভূম। এখান থেকে গাড়িতে এক ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন অযোধ্যা পাহাড়ে। পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে আসতে হলে সিরকাবাদ আর বরাভূম স্টেশনের দিক থেকে আসতে গেলে বাঘমুন্ডি হয়ে আসতে হয়। তবে সিরকাবাদ হয়ে যাওয়ার পথটা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে বেশ খানিকটা এগিয়েই থাকবে। কলকাতা থেকে পুরুলিয়াগামী বসে চেপে অযোধ্যা মোড়ে নেমেও আসা যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়েও প্রচুর লোক আসে।

পুরুলিয়ায় শহরে অনেক প্রাইভেট হোটেল আছে। যেমন হোটেল আকাশ, পুষ্পক হোটেল, হোটেল জিনিয়াস,হোটেল হিল ভিউ পুরুলিয়া ইত্যাদি।এছাড়াও পুরুলিয়ায় ও বাগমুণ্ডীতে পেয়ে যাবেন কিছু সরকারি কোয়ার্টার যেগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়।

আদিবাসী গ্রামগুলি সবুজে ঘেরা পাহাড়ের এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে। কোথাও বা ছাড়া ছাড়া জঙ্গল কোথাও বা গহন অরণ্য।
অযোধ্যা পাহাড়ে ওঠার জন্য অনেকগুলি ট্রেকিং রুট বা গ্রাম্য রাস্তা থাকলেও প্রধান প্রবেশদ্বার দুইটি। সিরকাবাদ, যেটি পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে আসতে গেলে পরে। আর বরাভূম স্টেশনের দিক দিয়ে এলে বাঘমুন্ডি। শাল, সেগুন পলাশের বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা একে বেঁকে উঠে গেছে অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে। দু দিকে নীল সবুজ ধূসর টিলাকে সঙ্গে করে আদিবাসী মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে পৌঁছে যেতে পারেন অযোধ্যা হিল টপে। অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশে বেশ অনেকগুলো দ্রষ্টব্য  রয়েছে।

ময়ূর পাহাড়

হিলটপ থেকে এক কিলোমিটাররের মধ্যেই রয়েছে ময়ূর পাহাড়। ময়ূর পাহাড়ের উপরে রয়েছে একটি হনুমান মন্দির। ময়ূর পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অসাধারন দৃশ্য দেখা যায়।

আপার ড্যাম

তারপর আছে সুবর্ণরেখা নদীর উপরে আপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম।

ড্যামে যাওয়ার রাস্তাতেই পরে মার্বেল লেক। আসলে এটি একটি পাথরের খাদান। চারপাশে ঘিরে থাকা উঁচু উঁচু পাথুরে টিলা ও তার মধ্যিখানে টলটলে জলের দৃশ্য বেশ সুন্দর।

মার্বেল লেক

সেখান থেকে একটু এগিয়েই দেখে নিতে পারেন বামনী ফলস। এই ফলটি দেখতে গেলে পাহাড়ের বেশ কিছুটা নিচে নামতে হয়। অক্টবর-নভেম্বর মাসে এই ফলস এর দৃশ্য অসাধারণ।

বামনী জলপ্রপাত

এছাড়া আছে খয়রাবেরা লেক ও ড্যাম। অযোধ্যা পাহাড় থেকে কিছুটা লং ড্রাইভে চলে আসতে পারেন ঘাটশিলা, গড়পঞ্চকোট, শুশুনিয়া, বড়ন্তিজয়চন্ডী পাহাড়বিরিঞ্চিনাথের মন্দির, বিষ্ণুপুর ইত্যাদি জায়গাগুলোতে।

খয়রাবেরা লেক

অযোধ্যার অরণ্যে এখনো দেখা মেলে চিতা বাঘ, হায়না, জংলী কুকুর, বুনো শুয়োরের মতো বন্যপ্রাণীর। রাস্তায় দেখা পেয়ে যেতে পারেন হরিণ, খরগোশ, বোন মুরগি, ময়ূরের। এছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে আদিবাসীদের গ্রাম চড়িদা গ্রাম, খয়রাবেরা ড্যাম, মুরগুমা ড্যাম, কুরুবুরু পাহাড়ের কোলে শান্ত গ্রাম সোনাকুপি, মাথা জঙ্গল, পাখি পাহাড়।

অযোধ্যা পাহাড়ে ভ্রমণের সবচাইতে ভালো সময় শীতকাল। অবশ্য বর্ষাতেও অযোধ্যা পাহাড়ের রূপ অনবদ্য। তবে বৃষ্টির জন্য সাইট সিইং কিঞ্চিৎ বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি লাল পলাশ ফুল দেখতে আসেন তাহলে মার্চ-এপ্রিলে আসতে হবে।

অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে এসে বনমুরগীর ঝোল কিন্তু অবশ্যই খাবেন। এছাড়া এখানকার কাঁকড়ার ঝাল ও খুব উপাদেয়। ‘ভাভরা ভাজা’ বলে এক রকমের ভাজা শুধু এই অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায়। অনেকটা আমাদের জিলিপির মতো কিন্তু মিষ্টি নয়, উপরন্তু এর ভেতরে আলু ও সবজির একটা পুর থাকে, লংকার চাটনির সঙ্গে খেতে অপূর্ব লাগে।

পুরুলিয়া তথা অযোধ্যা পাহাড়ের বিখ্যাত হলো পোড়ামাটির সামগ্রী ও ছৌ নৃত্য। অনেক দোকানেই এই পোড়ামাটির মুখোশ দেখতে পাবেন।

ছৌ নৃত্য

যদি অযোধ্যা পাহাড়ে রাত্রি যাপন করেন তাহলে রাত্রে হোটেল থেকে না বেরোনোই ভালো, কেননা নানান জন্তু রাত হলে হোটেলের কাছাকাছিও চলে আসে অনেক সময়।

ট্রিপ টিপস

  • কিভাবে যাবেনঃ রেলপথে অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার জন্য সুবিধেজনক নামবার স্টেশন হলো বরাভূম বা পুরুলিয়া। হাওড়া স্টেশন থেকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার বা রূপসী বাংলা ট্রেন ধরে চলে আসুন পুরুলিয়া বা বরাভূম। এখান থেকে গাড়িতে এক ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন অযোধ্যা পাহাড়ে। পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে আসতে হলে সিরকাবাদ আর বরাভূম স্টেশনের দিক থেকে আসতে গেলে বাঘমুন্ডি হয়ে আসতে হয়। তবে সিরকাবাদ হয়ে যাওয়ার পথটা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে বেশ খানিকটা এগিয়েই থাকবে। কলকাতা থেকে পুরুলিয়াগামী বসে চেপে অযোধ্যা মোড়ে নেমেও আসা যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়েও প্রচুর লোক আসে।
  • কোথায় থাকবেনঃ পুরুলিয়ায় শহরে অনেক প্রাইভেট হোটেল আছে। যেমন হোটেল আকাশ, পুষ্পক হোটেল, হোটেল জিনিয়াস,হোটেল হিল ভিউ পুরুলিয়া ইত্যাদি। এছাড়াও পুরুলিয়ায় ও বাগমুণ্ডীতে পেয়ে যাবেন কিছু সরকারি কোয়ার্টার যেগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়।
  • কি দেখবেনঃ অযোধ্যা হিলটপ, ময়ূর পাহাড়, আপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম, মার্বেল লেক, বামনী ফলস, আদিবাসীদের গ্রাম চড়িদা গ্রাম, খয়রাবেরা লেক ও ড্যাম, মুরগুমা ড্যাম, কুরুবুরু পাহাড়ের কোলে শান্ত গ্রাম সোনাকুপি, মাথা জঙ্গল, পাখি পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড় থেকে কিছুটা লং ড্রাইভে চলে আসতে পারেন ঘাটশিলা, গড়পঞ্চকোট, শুশুনিয়া, বড়ন্তিজয়চন্ডী পাহাড়বিরিঞ্চিনাথের মন্দির, বিষ্ণুপুর ইত্যাদি জায়গাগুলোতে।
  • কখন যাবেনঃ গরমকাল বাদ দিয়ে যে কোনো সময় আসতে পারেন। বর্ষাকাল ও শীতকাল দুটি সময়েই অযোধ্যা পাহাড় তার ভিন্ন রূপে অপরূপ। আর যদি লাল পলাশ ফুল দেখতে আসেন তাহলে মার্চ-এপ্রিলে আসতে হবে।
  • বিশেষ আকর্ষণ: অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে এসে বনমুরগীর ঝোল কিন্তু অবশ্যই খাবেন। এছাড়া এখানকার কাঁকড়ার ঝাল ও খুব উপাদেয়। ‘ভাভরা ভাজা’ বলে এক রকমের ভাজা শুধু এই অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায়। অনেকটা আমাদের জিলিপির মতো কিন্তু মিষ্টি নয়, উপরন্তু এর ভেতরে আলু ও সবজির একটা পুর থাকে, লংকার চাটনির সঙ্গে খেতে অপূর্ব লাগে।
  • সতর্কতাঃ যদি অযোধ্যা পাহাড়ে রাত্রি যাপন করেন তাহলে রাত্রে হোটেল থেকে না বেরোনোই ভালো, কেননা নানান জন্তু রাত হলে হোটেলের কাছাকাছিও চলে আসে অনেক সময়।

তথ্যসূত্র


  1. https://bn.wikipedia.org/

আপনার মতামত জানান