বিরিঞ্চিনাথ অর্থাৎ বাবা মহাদেব । আপনারা মহাদেবের অনেক নামকরা তীর্থস্থানে হয়তো গিয়ে থাকবেন, কিন্তু জানতেন কি যে এই রাঢ় বঙ্গেই রয়েছে এক সুপ্রাচীন জাগ্রত বাবা মহাদেবের মন্দির । এই মন্দিরটি অবস্থিত গড়পঞ্চকোটে ।

কলকাতা থেকে ভলভো বাস এ করে আসানসোল পৌঁছে যাবেন ঘন্টা তিনেকের মধ্যে , সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে বরাকর হয়ে গড়পঞ্চকোট আরো ৪৫ মিনিট | বরাকর-বেগুনিয়া মোড় থেকে বামদিকে ঢুকে যাচ্ছে দিশেরগড় রোড। এই রাস্তা ধরে পৌঁছতে হবে গড়পঞ্চকোটে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সবুজ বনানী চিরে চলে গেছে পিচ রাস্তা। বাঁ দিকে পঞ্চকোট পাহাড় ক্রমশ মাথা তুলেছে। ডান দিকে ধানক্ষেত। রেল পথে গড়পঞ্চকোটের নিকটবর্তী স্টেশন হলো বরাকর | সেখান থেকে সরাসরি গড়পঞ্চকোটে যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন ।
ইতিহাসবিদদের অনুমান রাজা দামোদর শেখর তার রাজ্যের পাঁচ প্রধান জাতিকে চিহ্নিত করতে রাজ্যের নাম রাখেন পঞ্চকোট । তার থেকে ১০ কিমি দূরে পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব ঢালে কাশীপুর রাজার তৈরি বিরিঞ্চিনাথের মন্দির । সেই মন্দিরে রয়েছে বিরিঞ্চিনাথের লিঙ্গমূর্তি ।
বিরিঞ্চিনাথের মন্দির, গড়ের এলাকা থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়, মিনিট কুড়ির মধ্যেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যস্থলে | পিচ রাস্তা ছেড়ে কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে যেতে হয় | পথের শুরু তা কিছুটা সংকীর্ণ, কেননা পার্শেই রয়েছে একটি আয়রন এন্ড স্টিল এর ফ্যাক্টরি | সেটি ছাড়িয়ে কিছুটা এসেই সামনে এক প্রকান্ড বটগাছ | একদিকে উঠে গেছে গড়পঞ্চকোট পাহাড় আর অন্য দিকে এবড়ো খেবড়ো পাথুরে জমি | সামনে মন্দিরের সিঁড়ি উঠে গেছে, গাছ গাছালির অন্তরাল দিয়ে |
অনেকটা জায়গা জুড়ে মন্দির চত্বর | একটি ঝর্ণা আছে, সেখানে মন্দিরের পুরোহিত সেবায়েত সকলে স্নান করে | সেখানে হাত পা ধুয়ে নিতে পারেন , তবে হ্যাঁ খালি পায়ে ঝর্ণার জলে নামতে হয়, চটি পরে জলে নামা মানা |

মন্দিরটির বৈশিষ্ট তার প্রাচীনত্বে এবং গাম্ভীর্যে । এখানে সময় যেন থমকে আছে । সামনের প্রাচীন বটগাছটি তারসংখ্য ঝুড়ি বিন্যাস করে বিগত কয়েক শতাব্দীর সাক্ষ্য বহন করছে । বিকেলে নিয়ম করে সেই বটগাছের নিচে পুজোর চল আছে, এই চল কত শতাব্দী ধরে চলে আসছে কেউ জানেনা । স্থানীয় বয়স্করা বিকেলে এই বটগাছের বেদিতে বসে জীবন সায়াহ্নের অকৃত্তিম প্রবহমানতা নিয়ে সময় কাটিয়ে দেয় । সন্ধ্যে হলে ফিরে যায় । মন্দিরের কিছুটা দূরের আকরিক লোহার কারখানা ও তার কর্মব্যস্ততা ও মন্দিরের আধ্যাত্মিকতা কিন্তু কোনোভাবেই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে না, বরঞ্চ কর্ম ও আধ্যাতিকতার মেলবন্ধন ঘটায় ।

সামান্য দূরে ডিভিসির ১৫ গেটের পাঞ্চেত বাঁধ। ১৯৫৬ সালে দামোদর নদের উপর গড়া এই বাঁধ ১৩৪ ফুট উঁচু আর ২২১৫৫ ফুট দীর্ঘ। এই বাঁধ থেকে গোধূলিতে সূর্যের পঞ্চকোট পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার দৃশ্যটি সারা জীবনের সঞ্চয়।
ট্রিপ টিপস
কিভাবে যাবেন : সড়ক পথ – কলকাতা থেকে ভলভো বাস এ করে আসানসোল | সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে বরাকর হয়ে গড়পঞ্চকোট । বরাকর-বেগুনিয়া মোড় থেকে বামদিকে ঢুকে যাচ্ছে দিশেরগড় রোড। এই রাস্তা ধরে পৌঁছতে হবে গড়পঞ্চকোটে।
রেল পথ – রেল পথে গড়পঞ্চকোটের নিকটবর্তী স্টেশন হলো বরাকর । সেখান থেকে সরাসরি গড়পঞ্চকোটে যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন ।
কোথায় থাকবেন : সরকারি ও বেসরকারি লজ দুইই পাবেন গড়পঞ্চকোটে । উল্লেখযোগ্য সরকারি লজ গুলি হল WBFDC গড়পঞ্চকোট নেচার রিসোর্ট, PHE গেস্ট হাউস, পাঞ্চেত রেসিডেন্সি, গড়পঞ্চকোট ইকো টুরিজম |
কি দেখবেন : বিরিঞ্চিনাথের মন্দির, গড়পঞ্চকোটের গড়, জয়চন্ডী পাহাড়, বড়ন্তি তে মুরারডি লেক, কল্যাণেশ্বরী মন্দির
কখন যাবেন : গরমকালে এই অঞ্চলে অত্যধিক গরম থাকে, সেই সময়ে না যাওয়ায় ভালো । বহু সংখ্যক টুরিস্ট এই অঞ্চলে শীতকালে এসে থাকে এই অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে । আমরা সববাংলার পক্ষ থেকে অনুরোধ করবো শীতকালে তো বটেই একবার বর্ষাকালে বেরিয়ে আসুন এই অঞ্চল থেকে । তুলনামূলক পর্যটকদের কম ভিড় সঙ্গে চারিদিকের ঘন সবুজ বর্ষাকালে গড়পঞ্চকোটকে আরো মোহময়ী করে তোলে । আমাদের মতে গড়পঞ্চকোটে আসার সেরা সময় হলো – নভেম্বর – মার্চ ও জুলাই – সেপ্টেম্বর ।
সতর্কতা : স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধ্যের পরে লজের বাইরে বেরোতে নিষেধ করে কারণ এই অঞ্চলে রাতের পর নানা প্রকার দুর্বৃত্তকারীদের উৎপাত আছে বলে শোনা যায় ।
তথ্যসূত্র
- নিজস্ব প্রতিনিধি
2 comments