মা দুর্গার অনেক নাম আছে । বাংলার প্রচলিত পাঁচালি ও ছড়াগানেও দুর্গার অনেক নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্রীশ্রী চণ্ডীতে উল্লেখিত দুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম স্তোত্রটির মূল সংস্কৃত রূপ এবং তার বঙ্গানুবাদ তুলে ধরা হল।
মূল সংস্কৃত স্তোত্র
ঈশ্বর উবাচ
শতনাম প্রবক্ষ্যামি শৃণুষ্ব কমলাননে।
যস্য প্রসাদমাত্রেণ দুর্গা প্রীতা ভবেৎ সতী ।।১।।
ওঁ সতী সাধ্বী ভবপ্রীতা ভবানী ভবমোচনী।
আর্যা দুর্গা জয়া চাদ্যা ত্রিনেত্রা শূলধারিণী ।।২।।
পিনাকধারিণী চিত্রা চন্দ্রঘণ্টা মহাতপাঃ।
মনো বুদ্ধিরহঙ্কারা চিত্তরূপা চিতা চিতিঃ ।।৩।।
সর্ব্বমন্ত্রময়ী সত্তা সত্যানন্দস্বরূপিণী।
অনন্তা ভাবিনী ভাব্যা ভব্যাভব্যা সদাগতিঃ ।।৪।।
শাম্ভবী দেবমাতা চ চিন্তা রত্নপ্রিয়া সদা।
সর্ববিদ্যা দক্ষকন্যা দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী ।।৫।।
অপর্ণানেকবর্ণা চ পাটলা পাটলাবতী।
পট্টাম্বরপরিধানা কলমঞ্জীররঞ্জিনী ।।৬।।
অমেয়বিক্রমা ক্রূরা সুন্দরী সুরসুন্দরী।
বনদুর্গা চ মাতঙ্গী মতঙ্গমুনিপূজিতা ।।৭।।
ব্রাহ্মী মাহেশ্বরী চৈন্দ্রী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।
চামুণ্ডা চৈব বারাহী লক্ষ্মীশ্চ পুরুষাকৃতিঃ ।।৮।।
বিমলোৎকর্ষিণী জ্ঞানা ক্রিয়া নিত্যা চ বুদ্ধিদা।
বহুলা বহুলপ্রেমা সর্ব্ববাহনবাহনা ।।৯।।
নিশুম্ভশুম্ভহননী মহিষাসুরমর্দ্দিনী।
মধুকৈটভহন্ত্রী চ চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী ।।১০।।
সর্ব্বাসুরবিনাশা চ সর্ব্বদানবঘাতিনী।
সর্ব্বশাস্ত্রময়ী সত্যা সর্বাস্ত্রধারিণী তথা ।।১১।।
অনেকশস্ত্রহস্তা চ অনেকাস্ত্রস্য ধারিণী।
কুমারী চৈককন্যা চ কৈশোরী যুবতী যতিঃ ।।১২।।
অপ্রৌঢ়া চৈব প্রৌঢ়া চ বৃদ্ধমাতা বলপ্রদা।
মহোদরী মুক্তকেশী ঘোররূপা মহাবলা ।।১৩।।
অগ্নিজ্বালা রৌদ্রমুখী কালরাত্রিস্তপস্বিনী।
নারায়ণী ভদ্রকালী বিষ্ণুমায়া জলোদরী ।।১৪।।
শিবদূতী করালী চ অনন্তা পরমেশ্বরী।
কাত্যায়নী চ সাবিত্রী প্রত্যক্ষা ব্রহ্মবাদিনী ।।১৫।।
য ইদং প্রপঠেন্নিত্যং দুর্গানামশতাষ্টকম্।
নাসাধ্যং বিদ্যতে দেবি ত্রিষু লোকেষু পার্বতী ।।১৬।।
ধনং ধান্যং সুতং জায়াং হয়ং হস্তিনমেব চ।
চতুর্বর্গং তথা চান্তে লভেন্মুক্তিং শাশ্বতীম্ ।।১৭।।
কুমারীং পূজয়িত্বা তু ধ্যাত্বা দেবীং সুরেশ্বরীম্।
পূজয়েৎ পরয়া ভক্ত্যা পঠেন্নামশতাষ্টকম্ ।।১৮।।
তস্য সিদ্ধির্ভবেদ দেবি সর্ব্বৈঃ সুরবরৈরপি।
রাজানো দাসতাং যান্তি রাজ্যশ্রিয়মবাপ্নুয়াৎ ।।১৯।।
গোরোচনালক্তকুঙ্কুমেন সিন্দূরকর্পূরমধুত্রয়েণ।
বিলিখ্য যন্ত্রং বিধিনা বিধিজ্ঞো ভবেৎ সদা ধারয়িতে পুরারিঃ ।।২০।।
ভৌমাবাস্যানিশাভাগে চন্দ্রে শতভিষাং গতে।
বিলিখ্য প্রপঠেৎ স্তোত্রং স ভবেৎ সম্পদাং পদম্ ।।২১।।
ইতি বিশ্বসারতন্ত্রে দুর্গাশতনামস্তোত্রং সমাপ্তম্।
বঙ্গানুবাদ
শ্লোক ১ – ভগবান মহাদেব পার্বতীকে বলছেন – হে কমলাননে! আমি এখন দেবী দুর্গার একশো আটটি নাম বলছি, শোনো; যা পড়লে বা শুনলেই পরমা সাধ্বী ভগবতী দুর্গা প্রসন্না হন।
শ্লোক ২ থেকে ১৫ তে উল্লিখিত দেবীর অষ্টোত্তর শতনামের তালিকা নিচে দেওয়া হল। সঙ্গে নামের অর্থগুলিও দেওয়া হল।
১। ওঁ সতী – হিন্দু পুরাণ অনুসারে দুর্গা সাধক জীবনযাত্রা থেকে শিবকে বের করে এনে তাঁকে গৃহী ও সংসারী করে তোলেন দক্ষরাজার কন্যা সতী নামে। সেই কারণে হিন্দু ধর্মে বৈবাহিক সুখ ও দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের দেবী হিসেবে সতী নামে দেবী দুর্গা পূজিত হন।
২। সাধ্বী – সাধু শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ। সাধু অর্থে সচ্চরিত্র। দেবী দুর্গা সৎচরিত্রা ও পতিব্রতা ছিলেন। সেই অর্থে তিনি সাধ্বী
৩। ভবপ্রীতা – ভগবান শিবের প্রতি প্রীতি অর্থাৎ প্রেম পূর্ণ নারী।
৪। ভবানী – ভবানী শব্দের অর্থ “জীবনদাতা” বা প্রকৃতির শক্তি বা সৃজনশীল শক্তির উৎস। তিনি তাঁর ভক্তদের বরাভয় প্রদান করেন এবং অসুরদের হত্যা করে ন্যায়বিচার করেন।
৫। ভবমোচনী – সংসারবন্ধন থেকে মুক্তিদায়িনী
৬। আর্যা – যে নারী বিদ্বান সেই আর্যা। দেবী এই বিশ্ব চরাচরের সকল জ্ঞানের উৎস। তাই তিনি আর্যা।
৭। দুর্গা – দুর্গা শব্দটি ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায় – “দ” অক্ষরটির অর্থ – যিনি দৈত্য বধ করেন, উ-কার এর অর্থ – যিনি বিঘ্ন নাশ করেন, রেফ এর অর্থ – যিনি রোগ নাশ করেন, “গ” এর অর্থ – যিনি পাপ নাশ করেন এবং অ-কার এর অর্থ – যিনি শত্রু দমন করেন। অর্থাৎ দুর্গা শব্দের অর্থ – যিনি দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন। অপর একটি মতে “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন তিনিই দুর্গা।
৮। জয়া – দেবী দুর্গার সঙ্গিনীর নাম জয়া । আবার সঙ্গিনীরা নাকি এই নামে ডাকতেন দুর্গাকেও । কারণ জয়া-বিজয়া কার্যত দুর্গারই এক রূপ ।
৯। আদ্যা – দুর্গা আদি শক্তির ধারক। তাই তিনি আদ্যা।
১০। ত্রিনেত্রা – দেবীর তিনটি চোখ। তাই তিনি ত্রিনেত্রা। তাঁর তিনটি চোখের একটি চোখ চাঁদের মত স্নিগ্ধ, একটি সূর্যের মত উজ্জ্বল এবং আরেকটি আগুনের মত তেজোদীপ্ত। তাঁর তিন চোখের মধ্যে একটি চোখ থাকে তাঁর কপালের মাঝখানে।
১১। শূলধারিণী – শূল অর্থাৎ ত্রিশূল। দেবী দুর্গা ত্রিশূল ধারণ করে আছেন বলেই তাঁর এই নাম
১২। পিনাকধারিণী – পিনাক শব্দের অর্থ – ত্রিশূল। দেবী ত্রিশূলের মাধ্যমে মহিষাসুর বধ করেছিলেন। তাই তিনি পিনাকধারিণী।
১৩। চিত্রা – চিত্র শব্দটির বিশেষণ হল – অত্যন্ত সুন্দর। দেবী দুর্গা মনমোহিনী রূপের অধিকারিণী তাই তিনি চিত্রা।
১৪। চন্দ্রঘণ্টা – চন্দ্রঘণ্টা দেবী পার্বতীর তৃতীয় রূপ। শিব পার্বতীর বিবাহের সময় তারকাসুর তাঁদের বিবাহ আটকাতে দৈত্য, দানব, পিশাচকে পাঠালে দেবী তাঁদের বিবাহকে সুরক্ষিত করতে অষ্টভূজা বাঘ বাহিনী রূপে আবির্ভূতা হন ও চাঁদের মত বিরাট ও শ্বেত শুভ্র ঘণ্টা বাজিয়ে সকল দৈত্য, দানবকে বিতাড়ন করেন।
১৫। মহাতপাঃ – দেবী কঠিন তপস্যাকারিণী, তাই এই নাম।
১৬। মনঃ – মননশক্তি ।
১৭। বুদ্ধিঃ – বোধশক্তি।
১৮। অহংকারা – দেবী আত্মশক্তিতে বলীয়ান। তাই তিনি অহংকারা।
১৯। চিত্তরূপা – চিত্ত অর্থে মন বোঝায়। যিনি সুন্দর মনের অধিকারী তিনিই চিত্তরূপা। দেবী প্রকৃত অর্থেই তাই চিত্তরূপা।
২০। চিতা – চিতা অর্থে অগ্নি বোঝায়। দেবী অগ্নি স্বরূপা। অগ্নির ন্যায় তাঁর তেজ।
২১। চিতি – চেতনা বোঝায়। দেবী জগৎ সংসারের চেতনা স্বরূপ।
২২। সর্বমন্ত্রময়ী – সকল বৈদিক মন্ত্র যার উদ্দেশ্যে উচ্চারিত।
২৩। সত্তা – সত্তা শব্দের অর্থ – অস্তিত্ব। দেবী স্বর্গ মর্ত্য সকল স্থানেই উপস্থিত। তিনি সর্বত্র বিরাজমানা।
২৪। সত্যানন্দস্বরূপিণী – যিনি সচ্চিদানন্দের সাক্ষাৎ স্বরূপ তথা যিনি জগতের মূলকারণ।
২৫। অনন্তা – যাঁর স্বরূপের কোনো অন্ত নেই
২৬। ভাবিনী – ভবিষ্যৎ দেখতে পান যে নারী। অর্থাৎ ত্রিকালজ্ঞ যিনি।
২৭। ভাব্যা – ভাবনা এবং ধ্যানের যোগ্যা যে নারী।
২৮। ভব্যা – ভব অর্থে অধিষ্ঠান বোঝায়। যিনি ন্যায়ের অধিষ্ঠাত্রী তিনিই ভব্যা। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গা অসুর সংহার করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
২৯। অভব্যা – যাঁর থেকে বেশি ভব্য আর কোথাও নেই),
৩০। সদাগতিঃ,
৩১। শাম্ভবী – শিবপ্রিয়া,
৩২। দেবমাতা,
৩৩। চিন্তা,
৩৪। রত্নপ্রিয়া,
৩৫। সর্ববিদ্যা,
৩৬। দক্ষকন্যা,
৩৭। দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী,
৩৮। অপর্ণা – তপস্যার সময় পাতা পর্যন্ত না পাওয়া,
৩৯। অনেকবর্ণা – বহুবর্ণবিশিষ্টা,
৪০। পাটলা – লালবর্ণা
৪১। পাটলাবতী – গোলাপফুল বা লালফুল ধারণকারিণী,
৪২। পট্টাম্বরপরীধানা – রেশমীবস্ত্র পরিহিতা
৪৩। কলমঞ্জীরঞ্জিনী – মধুর ধ্বনিকারী নূপুর ধারণ করে প্রসন্না
৪৪। অমেয়বিক্রমা – অসীম পরাক্রমশালিনী
৪৫। ক্রূরা – দৈত্যদের প্রতি কঠোর
৪৬। সুন্দরী,
৪৭। সুরসুন্দরী,
৪৮। বনদুর্গা,
৪৯। মাতঙ্গী,
৫০। মতঙ্গমুনিপূজিতা,
৫১। ব্রাহ্মী,
৫২। মাহেশ্বরী,
৫৩। ঐন্দ্রী,
৫৪। কৌমারী,
৫৫। বৈষ্ণবী,
৫৬। চামুণ্ডা,
৫৭। বারাহী,
৫৮। লক্ষ্মী,
৫৯। পুরুষাকৃতি,
৬০। বিমলা,
৬১। উৎকর্ষিণী,
৬২। জ্ঞানা,
৬৩। ক্রিয়া,
৬৪। নিত্যা,
৬৫। বুদ্ধিদা,
৬৬। বহুলা,
৬৭। বহুলপ্রেমা,
৬৮। সর্ববাহনবাহনা,
৬৯। নিশুম্ভশুম্ভহননী,
৭০। মহিষাসুরমর্দিনী,
৭১। মধুকৈটভহন্ত্রী,
৭২। চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী,
৭৩। সর্বাসুরবিনাশা,
৭৪। সর্বদানবঘাতিনী,
৭৫। সর্বশাস্ত্রময়ী,
৭৬। সত্যা,
৭৭। সর্বাস্ত্রধারিণী,
৭৮। অনেকশস্ত্রহস্তা,
৭৯। অনেকাস্ত্রধারিণী,
৮০। কুমারী,
৮১। এককন্যা,
৮২। কৈশোরী,
৮৩। যুবতী,
৮৪। যতি,
৮৫। অপ্রৌঢ়া,
৮৬। প্রৌঢ়া,
৮৭। বৃদ্ধমাতা,
৮৮। বলপ্রদা,
৮৯। মহোদরী,
৯০। মুক্তকেশী,
৯১। ঘোররূপা,
৯২। মহাবলা,
৯৩। অগ্নিজ্বালা,
৯৪। রৌদ্রমুখী,
৯৫। কালরাত্রি,
৯৬। তপস্বিনী,
৯৭। নারায়ণী,
৯৮। ভদ্রকালী,
৯৯। বিষ্ণুমায়া,
১০০। জলোদরী,
১০১। শিবদূতী,
১০২। করালী,
১০৩। কমলে কামিনী : ‘কমল’ অর্থাৎ পদ্ম এবং ‘কামিনী’ অর্থাৎ কন্যা। পদ্ম ফুলে স্থিতা দেবী দুর্গার এই রূপটির বর্ণনা প্রথম পাওয়া যায় কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চন্ডীমঙ্গল কাব্যের বণিক খন্ডে। শিবভক্ত ধনপতিকে লাঞ্ছনার উদ্দেশ্যে কালিদহে দেবী দুর্গা তাঁকে কমলে কামিনী রূপদর্শন করান। প্রস্ফুটিত চৌষট্রিদল পদ্মের ওপরে বসে এক ষোড়শী কন্যা যার দুই হাতে দুই হাতি। একবার একটি হাতি গিলছেন আরেকবার সেই হাতি উদ্গার করছেন। কমলে কামিনীর এই রূপের বর্ণনা মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘কমলে কামিনী’ নামক কবিতায় উল্লেখ করেছেন। এটি আসলে ভাগ্যদেবী মহালক্ষ্মীর অন্যরূপ।
৪। গায়ত্রী : দেবী দুর্গা এই নামেই পূজিত হয়ে থাকেন পাতালে।
১০৪। পরমেশ্বরী,
১০৫। কাত্যায়নী – প্রাচীন কিংবদন্তি অনুসারে কাত্যবংশীয় ঋষি কাত্যায়নের কন্যা হিসেবে দেবী দুর্গা জন্ম লাভ করেছিলেন বলে তাঁর আরেক নাম ‘কাত্যায়নী’। আবার অন্য একটি মতে, ঋষি কাত্যায়নই প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন বলে দুর্গার আরেক নাম ‘কাত্যায়নী’। নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ হল এই কাত্যায়নী। নবরাত্রি উৎসবের ষষ্ঠ দিনে কাত্যায়নীর পূজা করা হয়।
১০৬। সাবিত্রী – সত্যবানের স্ত্রী সাবিত্রী অত্যন্ত পতিব্রতা নারী ছিলেন। দেবী পার্বতীও একইরকম পতিব্রতা।
১০৭। প্রত্যক্ষা,
১০৮। ব্রহ্মবাদিনী।
শ্লোক ১৬ – দেবী পার্বতী! যে প্রতিদিন মা দুর্গার এই অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ করে থাকে, তার কাছে এই ত্রিলোকে অসাধ্য বলে কিছুই নেই।
শ্লোক ১৭ – সে ধন ধান্য, স্ত্রী, পুত্র, হাতি, ঘোড়া, ধর্ম, আদি চার পুরুষার্থ তথা অন্তে সনাতন মুক্তিও প্রাপ্ত হয়।
শ্লোক ১৮ – কুমারীপূজা এবং দেবী সুরেশ্বরীর ধ্যান করে পরমভক্তির সাথে তাঁর পূজা করার পর অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ শুরু করতে হয়
শ্লোক ১৯ – দেবী! যে এইরকম করে থাকে, সকল শ্রেষ্ঠ দেবতাদের কাছ থেকে তার সিদ্ধিলাভ অনিবার্য। রাজা তার দাসে পরিণত হয় এবং সে রাজলক্ষ্মীকে লাভ করে।
শ্লোক ২০ – যে বিধিজ্ঞ পুরুষ গোরোচন, লাক্ষা, কুমকুম, সিঁদুর, কর্পূর, ঘি বা দুধ, চিনি ও মধু – এই সব সামগ্রীকে এক করে এর দ্বারা বিধিমত যন্ত্র লিখে সতত ঐ যন্ত্র ধারণ করে, সে শিবের তুল্য (মোক্ষরূপ ) হয়ে যায়।
শ্লোক ২১ – ভৌমবতী অমাবস্যার মাঝরাতে, চাঁদ যখন শতভিষা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময় এই স্তোত্র লিখে যে পাঠ করে সে অতুলসম্পত্তিশালী হয়।
বিশ্বসারতন্ত্রে উল্লিখিত দুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম স্তোত্র সম্পূর্ণ হল।
এর বাইরেও আরও বহু নাম মা দুর্গার নাম বলে পরিচিত । বাংলার প্রচলিত পাঁচালি ও ছড়াগানে দুর্গার আরও নাম আছে। নীচে সেগুলোর তালিকা দেওয়া হল অর্থ সহ-
১। শঙ্করী : শঙ্কর হল শিবের এক নাম। শিবের স্ত্রী হিসেবে দেবী দুর্গা তাই দেবী শঙ্করী।
২। সুরেশ্বরী : সুর মানে দেবতা । তাঁদের অধীশ্বরী দেবী দুর্গা। তাই দেবতারা তাঁকে সুরেশ্বরী বলে সম্বোধন করেন।
৫। মহোদরী : দেবী দুর্গার আরেক নাম মহোদরী।
৬। কৃত্তিবাস প্রিয়া : ‘কৃত্তি’ অর্থে পশু চামড়া ‘বাস’ অর্থে বসন। বাঘছাল পরিহিত শিবের আর এক নাম তাই কৃত্তিবাস। দেবী দুর্গা তাঁর স্ত্রী তাই তিনি কৃত্তিবাস প্রিয়া।
৭। মাতঙ্গী : শিবের নবম অবতার হল মাতঙ্গ। মাতঙ্গের স্ত্রী হিসেবে দেবীর দশ মহাবিদ্যার নবম রূপ এই মাতঙ্গী। আবার অন্য একটি মতে প্রাচীনকালে মাতঙ্গ নামে এক ঋষি বনের সমস্ত প্রাণীকে বশ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ত্রিপুরাদেবীকে তুষ্ট করার জন্য কঠোর তপস্যা করেন। তপস্যায় তুষ্ট ত্রিপুরাদেবীর তৃতীয় নেত্র থেকে উৎপন্ন তেজরাশি থেকে এক শ্যামলা নারী রূপ ধারণ করে যার নাম হয় রাজমাতঙ্গিনী। ব্ৰহ্মযামল তন্ত্রে দেবীকে মাতঙ্গ মুনির কন্যা বলা হয়েছে।
৮ । বগলা : দেবী দুর্গার আরেক নাম বগলামুখী। বগলার অর্থ যিনি বশীভূত বা সম্মোহিত করতে পারেন। অর্থাৎ বগলামুখী হল সেই দেবী যাঁর মুখের দিকে মাত্র একবার দৃষ্টিপাত করলেও অশুভ শক্তিরা সম্মোহিত এবং তার পরের ধাপে নির্জীব হয়ে পড়বে। তন্ত্রে দেবী বগলামুখীকে সাধারণত দ্বিভুজা রূপেই দেখা যায়। এক হাতে তিনি ধারণ করে থাকেন একটি মুষল, অন্য হাতে জিভ টেনে ধরেন অসুরের। তবে কখনও কখনও দেবীকে চতুর্ভুজা রূপেও তন্ত্র বর্ণনা করেছে। সে ক্ষেত্রে চার হাতে দেবী ধারণ করে থাকেন একটি মুষল, একটি খড়্গ, একটি নরকরোটি বা মড়ার মাথা দিয়ে তৈরি পানপাত্র এবং একটি সাঁড়াশি। এই সাঁড়াশি দিয়েই দেবী বগলামুখী জিভ টেনে ধরেন অসুরের। বলা হয়, আজকের তিথিতে, অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী বগলা। স্বতন্ত্র তন্ত্রে দেবী বগলামুখীর জন্মসংক্রান্ত এই আশ্চর্য আখ্যানটি পাওয়া যায়। জানা যায়, একদা মদন নামে এক অসুর বাকসিদ্ধি অর্জন করেছিল। অর্থাৎ কথা দিয়ে সে বিশ্বে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি করতে পারত। মদনাসুরের তৈরি এই ঝড় যখন সৃষ্টিকে বিপন্ন করে তোলে, তখন বিষ্ণু সৌরাষ্ট্র প্রদেশে গিয়ে হরিদ্রা নামের এক সরোবরের তীরে দেবীর ধ্যানে বসেন। বিষ্ণুর অসুরদমনের এই ইচ্ছা পূরণের জন্য এর পর দেবী বগলামুখী সেই হলুদের সরোবর থেকে উত্থিতা হন। প্রথমে তিনি ঝড় থামান, তার পরে মদনাসুরকে বধ করেন। সেই জন্যই তাঁকে এক হাতে অসুরের জিভ টেনে ধরে থাকতে দেখা যায়। হরিদ্রা সরোবরজাতা বলে তাঁর গাত্রবর্ণও পীত বা হলুদ, এঁর পরিধানও পীতবস্ত্র।
৯ । কপাল মালিকে : এই নামে দেবীকে বর্ণিত করেছেন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরা ।
১০ । করালবদনী : কালিকা রূপে তিনি ভীষণরূপে পূজিতা । তাঁর দাঁতের সারির জন্য তখন তাঁর নাম করালবদনী ।
১১। ভুবন ঈশ্বরী : দুর্গাকে এই নামে সম্বোধন করেছিলেন পবনদেব ।
১২ । রাজ রাজেশ্বরী : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নৃপতিরা দেবীর নামকরণ করেন এই সম্বোধনে ।
১৩। ত্রিদিব জননী : ত্রিদিব কথার অর্থ স্বর্গ । দুর্গা হলেন সবার মা‚ তাই ত্রিদিব জননী ।
১৪ । কাল করালিনী : পত্নী দুর্গার এই নাম দিয়েছিলেন স্বয়ং মহাদেব ।
১৫ । উমা জগৎ জননী : এই নামও দিয়েছিলেন সাধারণ ভক্তরা ।
১৬ । মহেশগৃহিনী : মহেশ অর্থাৎ শিবের স্ত্রী তিনি তাই তো তাঁর নাম মহেশগৃহিনী।
১৭ । মহামায়া : কংসধামে এই নাম পেয়েছিলেন দুর্গা ।
১৮ । কালজয়া : তিনি কাল জয় করেছেন। তাই তিনি কালজয়া ।
১৯ । কৃতান্ত দলনী : দেবী দুর্গাকে এই নাম দিয়েছিলেন যমরাজ ।
২০ । কাত্যায়নী :
২১। সর্ববিশ্বোদরী : মনে করা হয় দেবীর এই নাম রেখেছিলেন নারায়ণ ।
২২। শুভঙ্করী : ভক্তের শুভ অর্থাৎ মঙ্গল করেন দেবী। তাই তিনি শুভঙ্করী ।
২৩। ঊর্বশী : দেবী দুর্গা স্বর্গে এই নামে পরিচিত ছিলেন।
২৪। ষোড়শী : দশমহাবিদ্যার তৃতীয় বিদ্যা হলেন দেবী ষোড়শী বা ত্রিপুরা সুন্দরী। তন্ত্র মতে ইনি অপার সৌন্দর্য্যের প্রতীক।
২৫ । ক্ষেমঙ্করী : ক্ষেমঙ্কর শব্দের অর্থ মঙ্গলজনক। দেবীর মঙ্গলময়ী অবতারের নাম তাই‚ ক্ষেমঙ্করী।
২৬ । মহিষাসুরমর্দিনী : মহিষাসুরের বিনাশ সাধন দেবীর হাতেই হয়েছিল। তাই তিনি মহিষাসুরমর্দিনী।
২৭ । ছিন্নমস্তা : দশমহাবিদ্যার ষষ্ঠ বিদ্যা হলেন দেবী ছিন্নমস্তা। দেবীর এই ছিন্নমস্তা রূপের পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনী লুকিয়ে আছে। একবার দেবীর সহকারী ডাকিনী ও যোগিনী নদীতে স্নান করে উঠে আসার পর প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত হয়ে দেবীর কাছে খেতে চাইলেন। কিন্তু তাদের খাদ্য শুধু রক্ত ও মাংস, তাই দেবী ক্ষুধার্ত সহকারীদের ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য নিজের কণ্ঠচ্ছেদ করে ফেলে নিজে ও ডাকিনী-যোগিনীকে রক্ত পান করান। সেই থেকে তাঁর নাম হয় ছিন্নমস্তা।
২৮ । দৈত্যদর্প নিসূদীনি : ‘নিসূদন’ শব্দের অর্থ – হত্যা। দেবী দৈত্য অর্থাৎ মহিষাসুরের ‘দৰ্প’ অর্থাৎ অহঙ্কারকে হত্যা করেছিলেন মহিষাসুরের বিনাশ সাধনের মাধ্যমে তাই তিনি এই নামে পরিচিত।
২৯ । বিরিঞ্চি নন্দিনী : হিন্দু পুরাণে বিরিঞ্চি নামে ব্রহ্মা‚ বিষ্ণু এবং মহেশ্বর তিনজনকেই বর্ণনা করা হয় । যেহেতু সব দেবতার অংশে থেকেই দুর্গার জন্ম‚ তাই তিনি বিরিঞ্চি নন্দিনী ।
৩০। পাপবিনাশিনী : ভক্তিভরে দেবীর আরাধনায় মন সকল প্রকার পাপ মুক্ত হয় বলেই দেবী এই নামে পরিচিত।
৩১ । দিগম্বরা : দেবী কালী রূপে নিরাভরণ হয়ে নৃত্য করেছিলেন। সেই থেকেই তাঁর নাম হয় দিগম্বরা।
৩২ । শিবানী : শিবের পত্নী তাই তিনি শিবানী।
৩৩। অপরাজিতা : অপরাজিতা দেবী দুর্গার আরেক নাম। এই রূপে দেবী চতুর্ভূজা; হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা; গায়ের রং নীল; ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিজয়াদশমীর দিন বিসর্জনের পর মণ্ডপের ঈশানকোণে পদ্ম এঁকে অপরাজিতা লতা রেখে দেবীর পূজা করা হয়।
৩৪ । উগ্রচণ্ডা : দেবীর কালী অবতারের আরেক নাম উগ্রচণ্ডা।
৩৫। দীনমণি : দরিদ্র ঈশ্বরী পাটনীকে অন্নপূর্ণা রূপে দয়া করেছিলেন দেবী দুর্গা। তাই‚ পাটনীর বর্ণনায় তিনি দীনমণি‚ অর্থাৎ দরিদ্রদের নয়নের মণি।
৩৬। গণেশ জননী : গণপতিকে জন্ম দিয়ে তাঁর এই নাম হয়।
৩৭ । দুর্গতিনাশিনী : ভক্তের দুর্গতি নাশ করেন। তাই তাঁর এই নাম তাঁর।
৩৮ । দুর্গা : দুর্গতিনাশিনীর সংক্ষিপ্ত রূপ এটি।
৩৯ । সুখদা অন্নদা : তিনি সংসারে সুখ এবং অন্ন দান করেন। তাই‚ দেবী সুখদা এবং অন্নদা।
৪০ । মৃগেশ বাহিনী : মহাদেব তাঁকে এই নামে সম্বোধন করতেন ।
৪১ । মহেশ ভাবিনী : শিবের এক নাম মহেশ। তাই তাঁর স্ত্রী পার্বতীর এক নাম মহেশ ভাবিনী।
৪২ । ইন্দ্রাণী : দেবী আবার একাধারে ইন্দ্রের পত্নীরূপেও পূজিত হন। তাই তিনি ইন্দ্রাণী ।
৪৩ । রুদ্রাণী : রুদ্র অর্থাৎ শিবের সহধর্মিনী তিনি। তাই তিনি রুদ্রাণী। কামাখ্যায় তিনি এই রূপে পূজিতা ।
৪৪ । হররাণী : শিবের আরেক নাম হর। শিবের স্ত্রী তিনি তাই তো তিনি হররাণী।
৪৫। শমন ত্রাসিনী : দেবীকে এই সম্বোধনে ডেকেছিলেন উদ্ধব ।
৪৬ । অরিষ্ট নাশিনী : অসুরদের দমন করে দেবতাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তিনি । তাই তিনি অরিষ্ট নাশিনী ।
৪৭ । দাক্ষায়নী : দক্ষরাজার কন্যা তিনি। তাই তিনি দাক্ষায়নী ।
৪৮ । পার্বতী : হিমালয় পর্বতের দুহিতা । তাই তিনি পার্বতী ।
৪৯ । মৃগাঙ্ক আননী : ঋষি দুর্বাসা দেবীকে এই নামে ডেকেছিলেন ।
৫০ । প্রিয়ঙ্করী : তিনি সবার মনোকামনা পূর্ণ করেন । তাই তিনি প্রিয়ঙ্করী ।
৫১ । শঙ্করী সুন্দরী : দেবী দুর্গাকে এই নামে ডেকেছিলেন রাবণ পত্নী মন্দোদরী ।
৫২ । শিব সহচরী : শিবের পার্শ্ববর্তী দেবী দুর্গা । সুতরাং তিনি শিব সহচরী ।
৫৩ । শিব দারা : দারা কথার অর্থ স্ত্রী । তাই‚ শিবের পত্নী হিসেবে এই নাম লাভ করেছেন দুর্গা ।
৫৪ । কান্তিকরী : কান্তি অর্থাৎ লাবণ্য। দুর্গা লাবণ্য দান করেন বলেই তিনি কান্তিকরী।
৫৫। শুভঙ্করী : দুর্গা সবার শুভ বা মঙ্গল করেন । তাই তিনি শুভঙ্করী ।
৫৬ । ত্রিলোকতারিণী : ত্রিলোক অর্থাৎ স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালের দেবী তিনি।
৫৭ । ঈশানী : শিবের আর এক নাম ঈশান। ফলে শিব পত্নী দুর্গা হলেন ঈশানী।
৫৮ । অগতির গতি : সাধারণ মানুষ দেবীকে এই নামে ডেকে পুজো করেন।
৫৯ । সর্বানী : শ্রীরাধার স্বামী আয়ান ঘোষ এই নামে সম্বোধন করেছিলেন দেবীকে।
৬০ । জগত্তারিণী : জগৎ কে যিনি ত্রাণ অর্থাৎ উদ্ধার করেন সকল বিপদ থেকে তিনিই তো দেবী জগত্তারিণী।
৬১। ভগবতী : ভগবানের স্ত্রী লিঙ্গ বাচক শব্দ ভগবতী।
৬২ । অন্নপূর্ণা : তাঁর ভাণ্ডার সর্বদা অন্না দ্বারা পূর্ণ। তাই দেবী অন্নপূর্ণা।
৬৩। মহেশ্বরী : মহেশ্বর অর্থাৎ শিবের স্ত্রী তিনি। তাই তো তিনি মহেশ্বরী।
৬৪। ব্রহ্মাণ্ড জননী : সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তাঁরই সৃষ্টি। তাই তো তিনি ব্রহ্মাণ্ড জননী।
৬৫। শিবানী : শিবের স্ত্রী বলে তাঁর নাম শিবানী ।
৬৬। সত্যসনাতনী : তিনি সত্য। তিনি সনাতন। তাই‚ তিনি সত্যসনাতনী।
৬৮। চণ্ডী : উগ্রচণ্ডারূপে আবার এই নাম পেলেন দেবী ।
৬৯। এলোকেশী : মহিষাসুরকে বধ করতে গিয়ে দুর্গার কেশ আলুলায়িত হয়েছিল। তাই তিনি এলোকেশী ।
৭০। মায়া মহোদরী : এই নাম দেবীকে দিয়েছিলেন অর্যমা।
৭১। হররমা : এই নামে দেবীকে সম্বোধন করতেন গঙ্গানদী ।
৭২। সর্বদা সারদা : দেবী সারদান করেন । তাই মুনিঋষিগণ তাঁকে সারদা বলেই সম্বোধন করেন ।
৭৩। বরদা : দেবী বরদান করেন বলেই তিনি বরদা।
৭৪। ভীমা : দেবীর ভীষণরূপের জন্য এই নাম রেখেছিলেন ক্রোধী জহ্নুমুনি ।
৭৫। গিরিশ নন্দিনী : গিরিশ অর্থে শিব। গিরিতে শয়ন করেছিলেন তাই তিনি গিরিশ। গিরি অর্থে পর্বত। দেবী দুর্গা পর্বতের কন্যা। সেই জন্যেই তিনি গিরিশ নন্দিনী।
৭৬। গোমাতা গৌরী : মা দুর্গাকে এই নামে আরাধনা করতেন সব রাখাল ।
৭৭। গিরীন্দ্র নন্দিনী : ব্রজেশ্বরী অর্থাৎ রাধিকা‚ দুর্গাকে ডেকেছিলেন এই সম্বোধনে ।
৭৮। ভবের কৌমারী : তিনি কুমারী রূপেও পূজিতা হন । তাই তিনি ভবের কৌমারী ।
৭৯। গজেন্দ্র জননী : মহিষাসুরমর্দিনীর পাশাপাশি দুর্গা গণেশের মা । তাই এই নামের অধিকারিণী তিনি
৮০। গোবিন্দ ভগিনী : দেবী দুর্গার এই নাম রাখেন বিশ্বামিত্র মুণি ।
৮১। যোগেশ যোগিনী : মা দুর্গার এই নামকরণ করেছিলেন দেবকী ।
৮২। পরা পরায়নী : দেবীর এই নামকরণের নেপথ্যে আছেন রৈবতক মুণি ।
৮৩। দক্ষ যজ্ঞ বিনাশিনী : বলা যায়, এই নাম নিজেই নিজেকে দিয়েছিলেন দুর্গা । পার্বতী বা সতীর এক রূপ হল দেবী দাক্ষায়নী । যেহেতু দুর্গার দ্বারাই বিনষ্ট হয়েছিল তাঁর পিতা দক্ষের মহাযজ্ঞ তাই তিনি দক্ষ যজ্ঞ বিনাশিনী।
৮৪। শাকম্ভরী : ঔর্ব্বমুণি এই নামে সম্বোধন করতেন দুর্গাকে ।
৮৫। ত্রিতাপহারিণী : ত্রিজগতের দুঃখ দুর্গা নাশ করেন । তাই তিনি ত্রিতাপহারিণী ।
৮৬। ব্রহ্মাণী : সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বরী । তাই দুর্গা ব্রহ্মাণী ।
৮৭। কালী কপালিনী : মর্ত্যলোকে তন্ত্রসাধনায় দুর্গা আবার পূজিত এই রূপেও।
৮৮। শিব নিতম্বিনী : দেবী দুর্গা সর্বদা থাকেন শিবের পাশে পাশে । তাই তিনি শিব নিতম্বিনী ।
৮৯। অরিষ্টস্তম্ভিনী : অরি অর্থাত্ শত্রুকে বিনাশ করেন দুর্গা । তাই তাঁর এই নাম ।৯০। শিবকরা : তিনি শিবের ঘরনী । তাই, কৌমারী দুর্গা হলেন শিবকরা ।
৯০। অপর্ণা : মহাদেবকে লাভের জন্য তপস্যারত দুর্গার এই নামকরণ করেন ছায়াবতী ।
৯১। অন্নদা : সবাইকে দুর্গা অন্ন দান করেন । তাই, তিনি অন্নদা ।
৯২। সর্বসিদ্ধিদাত্রী : ভৃগুমুণি রেখেছিলেন দুর্গাকে এই নাম দিয়েছিলেন।
৯৩। নৃমুণ্ডুমালিকে : দুর্গাকে এই নাম দিয়েছিলেন আয়ান ঘোষ ।
৯৪। প্রমোথিনী : শিবের অনুচর, যাঁরা নাচ-গানে পারদর্শী, তাঁদের বলা হয় প্রমথ । দেবী দুর্গাও মহাদেবের অনুগামিনী। তাই তিনি প্রমোথিনী।
৯৫। জয়া :
৯৬। মহাকালী : বিন্ধ্য পর্বত এই নাম রেখেছিল দেবী দুর্গার উদ্দেশে ।
৯৭। দানব দলনী : তিনি অসুর নিধন করেছেন । তাই তিনি অসুর বা দানব দলনী ।
৯৮। ভদ্রকালী : পাতালে দেবী দুর্গা পূজিত হন এই রূপে ।
৯৯। মেনকা দুলালী : গিরিরাজ হিমালয়ের ঘরে দেবী মেনকার কন্যা । তাই তিনি মেনকা দুলালী ।
১০০। মন্মথমোহিনী : দুর্গার এই নামকরণ করেছিলেন কামদেব বা মদনদেব ।
১০১। নারায়ণী : দুর্গার এক রূপ হলেন দেবী লক্ষ্মী । তাই মহালক্ষ্মী এবং সেইসঙ্গে দুর্গাও নারায়ণী ।
১০২। চামুণ্ডে চণ্ডিকা : দুর্গার এক রূপ হল চামুণ্ডা চণ্ডী ।
১০৩। দুর্গতিনাশিনী : ভক্তদের দুর্গতি থেকে রক্ষা করেন তিনি। তাই দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী।
তথ্যসূত্র
- শ্রীশ্রী চণ্ডী, গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর, বঙ্গানুবাদ - শ্রীদুর্গাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা - ১৪ থেকে ১৭
- https://bangabharati.wordpress.com/
- https://voboghurekotha.com/
- https://bengali.news18.com/
- https://ichorepaka.in/
- https://www.sangbadpratidin.in/
- https://eisamay.com/
- http://onushilon.org/
- https://jugasankha.in/
- https://www.kamakoti.org/