অতি দর্পে হতা লঙ্কা

অতি দর্পে হতা লঙ্কা

বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হল ‘অতি দর্পে হতা লঙ্কা’। এই প্রবাদটির অর্থ হল – অতিরিক্ত অহংকার বা দর্প ভালো নয়, তাতে সমূহ বিপদের সম্ভবনা। এই প্রবাদের উৎস খুঁজতে হলে আমাদের নজর রাখতে হবে রামায়ণে। 

‘অতি দর্পে হতা লঙ্কা’ এই প্রবাদটিতে লঙ্কা অর্থে লঙ্কেশ্বর রাবণের কথা বলা হয়েছে। রাবণ তাঁর মায়ের উপদেশে অমরত্ব লাভের জন্য সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। ব্রহ্মা রাবণকে অমর হবার বর প্রদানে রাজি না হলে বিকল্পে রাবণ অন্য বর প্রার্থনা করেন। দেব-দানব-দৈত্য-যক্ষ কাছে তিনি যেন অজেয় ও অবধ্য থাকেন অর্থাৎ এরা তাঁকে যুদ্ধে হারাতে এবং বধ করতে পারবে না। রাবণের ইচ্ছায় ব্রহ্মা তাঁকে সেই বর প্রদান করেন। কিন্তু মানুষকে তিনি তুচ্ছ জ্ঞান করার কারণে মানুষের বিষয়ে কোনো বর প্রার্থনা করেননি।
ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়ে রাবণ পৃথিবী জয় করতে বেরিয়ে পড়লেন। প্রথমেই তিনি আক্রমণ করেন তাঁর সৎ ভাই কুবেরকে। লঙ্কা থেকে সৎ ভাই কুবেরকে বিতাড়িত করে নিজে লঙ্কার সিংহাসনে লঙ্কাধিপতি হয়ে বসলেন এবং কুবেরের ব্রহ্মাপ্রদত্ত পুষ্পক রথ কুবেরের থেকে কেড়ে নিলেন। যক্ষরাজ কুবের দুঃখে লঙ্কা থেকে সর্বহারা হয়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন।

অহংকারে রাবণ সবাইকে তুচ্ছ মনে করতে লাগলেন এবং পৃথিবী জয় করার উদ্দেশ্যে একে একে সমস্ত রাজাদের রাজ্য ছিনিয়ে নিলেন। একসময় তিনি ইন্দ্রসহ অনান্য দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। রাবণের অত্যাচারের আরও বহু উদাহরণ রয়েছে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

অতিগর্বে আত্মহারা রাবণ কখনও ভাবেননি দেব-দানব-দৈত্য-যক্ষ এদের কাছে তিনি অজেয় ও অবধ্য হলেও সামান্য মানুষের কাছে তিনি পরাজিত ও নিহত হবেন। তাঁর দর্পের কারণেই যথাযথ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা না করে তিনি মারা গিয়েছিলেন। এর থেকেই এই বাংলার প্রবাদটির উদ্ভব।

প্রসঙ্গত অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো নয় তা বোঝাতে একটি সংস্কৃত শ্লোক রয়েছে –

“অতি দর্পে হত লঙ্কা অতি মানে চ কৌরবাঃ। 
অতি দানে বলিরবদ্ধ, সর্বম অত্যন্ত গর্হিতং।।”

উদাহরণ –  ‘অতি দর্পে হতা লঙ্কা’ কথাটা ভুলে গিয়ে অতিরিক্ত অহংকারী হলে যে পতন নিশ্চিত তার উদাহরণ পুরাণ থেকে শুরু করে ইতিহাসে ঝুড়ি ঝুড়ি আছে।  

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ;  পৃঃ ২৩

আপনার মতামত জানান