কুবের

কুবের

কুবের বা ধনকুবের ছিলেন ভগবান শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি খুব শান্ত, গম্ভীর, সদাচারী, তেজী। দীর্ঘকাল ভগবান ব্রহ্মার তপস্যা করে ওনাকে খুশি করেন কুবের। তখন ভগবান ব্রহ্মা তাকে সূর্যের মত তেজস্বী হওয়ার বর প্রদান করেন। সঙ্গে একটা পুষ্পক রথও দান করেন। বিশ্বকর্মার সাহায্যে কুবের সোনার লঙ্কা নির্মাণ করেন। কিন্তু লঙ্কার অধিপতি তো রাবণ ছিলেন বলে আমরা জানি। তাহলে?

আসলে কুবের হলেন রাবণেরই সৎ ভাই। ব্রহ্মার এই বরদান দেখে রাবণের মনে হিংসে হয়। কুবেরকে আক্রমণ করে তার সব ধন কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন রাবণ। কিন্তু শান্তশিষ্ট কুবের নিজেই রাবণকে সব দান করে দেন, যদিও রাবণের কাজে মনে ব্যথা পান খুব। এরপর তিনি ভগবান  শিবের আরাধনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ভগবান শিব তার ধ্যানে সন্তুষ্ট হয়ে তার পুষ্পক রথ যাতে তিনি ফিরে পান, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ভগবান রামচন্দ্র যুদ্ধে রাবণকে হারিয়ে ওই রথটা কুবেরকে ফেরত দিয়েছিলেন।

কুবের আবার ভগবান শিবের আরাধনা চালু করেন এবং সেই আরাধনায় ওনাকে আবারও তুষ্ট করে তাঁর থেকে বর চাইলেন যে তিনি এমন স্থানে থাকতে চান, যেখানে তিনিই রাজা, তিনিই সর্বেসর্বা, কেউ যেন তাঁর জায়গা না নিতে পারে। ভগবান শিব তখন তাকে উত্তরের অধিপতি ঘোষণা করেন এবং সঙ্গে এও বলেন যে উত্তর দিকে মুখ করে যে কুবেরকে স্মরণ করবে, সেও অনেক ধনশালী হয়ে উঠবে।

আবার ভগবান শিবের আরাধনা শুরু করেন কুবের। এবারে ভগবান শিব এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর ইচ্ছা। কুবের ভগবান শিবের বন্ধুত্ব প্রার্থনা করেন। সঙ্গে অফুরন্ত ধনসম্পদের মালিক যাতে হতে পারেন তিনি তাও প্রার্থনা করেন। যাতে তাঁর এই ধন তাঁর অনিচ্ছায় তাঁর থেকে কেউ কেড়ে নিতে না পারে। সম্ভবত রাবণের শুরুতে তাঁর ধনহরণ তাকে এতই পীড়া দিয়েছিল, যে তিনি বারেবারে ভগবান শিবের কাছে এরম বর প্রার্থনা করতে থাকেন। সে যাই হোক, ভগবান শিব তাঁর আরাধনায় খুশি হয়ে তাকে নিজের পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন এবং সেদিন থেকে কুবের পার্বতীরও কৃপার পাত্র হলেন।
সেদিন থেকে কুবেরকে সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাতা ঘোষণা করা হল। মা লক্ষ্মী যেমন ধনসম্পদ দান করেন, তেমনই কুবের তা রক্ষা করেন। তাঁর কৃ্পাদৃষ্টি কারও ওপর পড়লে সেও ধনসম্পত্তির অধিকারী হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্র


  1. ভাগ্যফল, ২০১৪, ১লা জুন, পৃষ্ঠাঃ ৯
  2. https://www.britannica.com/topic/Kubera

 

আপনার মতামত জানান