সববাংলায়

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই আছে, কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলি একজোট হয়ে যখন রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয় তখন তার প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী। বিংশ শতাব্দীর পৃথিবী তেমনই এক মহাযুদ্ধের সাক্ষী ছিল যা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (First World War বা World War – I) নামে ইতিহাসে পরিচিত। প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অভাবনীয়। এই বিশ্বযুদ্ধে যে-পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল তা আজ পর্যন্ত কোন যুদ্ধে হয়নি। সমগ্র ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, প্রশান্ত মহাসাগর এবং এশিয়ার কিছু অংশে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দেশগুলি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, এমন অনেক দেশেও পড়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে মোট চারটি সাম্রাজের পতন ঘটেছিল।

সঠিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলতে গেলে ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাইয়ের কথা বলতে হয়, যখন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। টানা চার বছর নানা চড়াই-উতরাই, ধ্বংস, হত্যার মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটেছিল।

এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল মিত্রশক্তি অর্থাৎ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া, পরে অবশ্য জাপান, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশ এই মিত্রশক্তিতে (allies) যোগ দিয়েছিল। অপরদিকে কেন্দ্রীয় শক্তিতে (Central Powers) জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং অটোমান সাম্রাজ্য অর্থাৎ উসমানিয়া ও বুলগেরিয়ার মত দেশগুলি ছিল। এদের চারপক্ষীয় মৈত্রীও বলা হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পর বিজয়ী মিত্রশক্তি এই যুদ্ধের জন্য জার্মানির দিকেই আঙুল তুলে তার ওপরেই সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে এই যুদ্ধের দায় কেবল জার্মানির উপর চাপানোই যুক্তিযুক্ত নয়। জার্মান সরকারের আচরণ প্রতক্ষ্যভাবে এই যুদ্ধের সূচনাতে মদত জোগালেও অন্যান্য দেশগুলি যেভাবে বাণিজ্যিক এবং ঔপনিবেশিক প্রাধান্য স্থাপনের আশা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেসব কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না। মোট কথা ইউরোপের বড় বড় শক্তিগুলির সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-কে আহ্বান করে এনেছিল বিশ্বের দরবারে।

১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর নেপথ্যে এক দীর্ঘ পটভূমি ছিল৷ মূলত ১৮৭১ সালের পর থেকে নানা ঘটনাবলীর স্রোত বিশ্বযুদ্ধের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল।

প্রথমত, ১৮৭০ সালের পর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে এক ধরনের উগ্র জাতিয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সেই উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণেই ইউরোপীয় দেশগুলির পারস্পরিক ঈর্ষাও সমানতালে বাড়তে থাকে। ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়া যুদ্ধে যখন ফ্রান্সের খনি অঞ্চল আলসেস-লোরেন চলে যায় জার্মানির হাতে, জার্মানির হাতেই প্যারিসের পতন ঘটে তখন ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদে আঘাত লাগে এবং তারা জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। এই ১৮৭১ সালের যুদ্ধের পর জার্মানি ইউরোপের ভাগ্যনিয়ন্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তবে জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্ক আশঙ্কা করছিলেন যে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফ্রান্স জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে, সেই কারণেই বিসমার্ক ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ফ্রান্সের সম্ভাব্য আক্রমণকে প্রতিহত করবার পরিকল্পনা করেন। অবশেষে জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ইতালির মধ্যে ট্রিপল অ্যালায়েন্স বা ত্রিশক্তি চুক্তি তৈরি হয়। অন্যদিকে ফ্রান্সও জার্মানির এই সংগঠিত ত্রিশক্তিতে আতঙ্কিত হয়ে এমনই এক মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করতে থাকে। সেই সুযোগও তৈরি হয়ে যায়। বার্লিন কংগ্রেসে জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার মনোমালিন্য ফ্রান্স-রাশিয়ার মৈত্রী স্থাপনে সহায়তা করেছিল। এখানে উল্লেখ্য জার্মানি রাশিয়ার সঙ্গে প্রথমে চুক্তি করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে বলকান অঞ্চলে অষ্ট্রিয়া-রুশ বৈরিতায় কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করলে রাশিয়া ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করে। পরবর্তীকালে ব্রিটেনও ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিস্থিতির কারণে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়, গড়ে ওঠে ত্রিশক্তি মৈত্রী। ইউরোপে গড়ে ওঠা এই দুই শক্তিশালী ত্রিশক্তি জোট ক্রমশ নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে।

আরও পড়ুন:  পলাশীর যুদ্ধ

জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রত্যেকেই নিজের নিজের জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের খেলায় মেতে ওঠে।

উগ্র জাতীয়তাবাদ ছাড়াও সামরিক প্রতিযোগিতাও ইউরোপেই রাজনৈতিক আবহাওয়া উত্তপ্ত করে তুলেছিল। প্রত্যেক দেশই নিজের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। যে ব্রিটেন নৌশক্তিতে ছিল অসাধারণ পরাক্রমশালী, জার্মানি ১৮৯৭, ১৮৯৮ এবং ১৯০০ সালে নৌনির্মাণ আইন পাস করে বড়ো ও মাঝারি আকারের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করে ব্রিটেনকে সন্ত্রস্ত করে দেয়। ব্রিটেনও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নতুন ন্যাভাল ফ্লিট তৈরি করে। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশরা ‘ড্রেডনট’ নামের একটি যুদ্ধজাহাজ নামিয়েছিল। অন্যদিকে ১৯১৩ সালে ফ্রান্স নতুন সৈন্যগঠন আইন পাশ করে। মাঝে আন্তর্জাতিক আইন কংগ্রেসে অস্ত্রহ্রাসের কথা বলা হলেও তাতে কোন কাজ হয়নি।

তৃতীয়ত যে কারণটিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার জন্য দায়ী করা যায়, সেটি হল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের লড়াই। ঔপনিবেশিক বাজার দখলের জন্য দ্বন্দ্ব ক্রমে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি করতে থাকে। ঐতিহাসিক হবসন এই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ বলে মনে করেছেন।

উপরোক্ত কয়েকটি কারণ ছাড়াও আন্তর্জাতিক কিছু সংকট প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। সেই সংকটগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মরক্কোর সংকট, আগাদির সংকট এবং অবশ্যই বলকান সংকট। মরক্কো এবং আগাদিতে ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে তুরস্কের বলকান অঞ্চলের বহু জাতি ও গোষ্ঠীগুলির মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দানা বাঁধে। বলকানের বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামক দুটি অঞ্চলের শ্লাভরা সার্বিয়ার সঙ্গে মিলনের আশা করেছিল৷ অস্ট্রিয়া উক্ত দুই অঞ্চলের শাসনের অধিকার পেয়েছিল৷ ১৯০৮ সালে তুরস্কের গৃহযুদ্ধের সুযোগে অস্ট্রিয়া অঞ্চলদুটিকে নিজেদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। সার্বিয়া এর প্রতিবাদ করে। জার্মানি অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করে এবং অন্যদিকে ইংল্যান্ড ও রাশিয়া সার্বিয়ার সমর্থনে দাঁড়ায়।

তবে যে ঘটনাটির দ্বারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা ঘটে ১৯১৪ সালের ২৮ জুন। বসনিয়ার অন্তর্গত সেরাজেভো শহরে অষ্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া ব্ল্যাক হ্যান্ড নামক আততায়ী এক দলের হাতে নিহত হন। এই আততায়ী দলের লোকেরা যেহেতু জাতিতে ছিলেন শ্লাভ এবং সার্বিয়া যেহেতু শ্লাভ রাজ্যগুলির নেতা ছিল সেই কারণে অস্ট্রিয়া সরকার কয়েকটি শর্তসহ সার্বিয়াকে এক চরমপত্র পাঠায় এবং শর্ত না মানলে সার্বিয়াকে আক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। সেইসব শর্ত মানলে সার্বিয়ার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হবে বলেই তারা তা মানেনি। রাশিয়া সার্বিয়াকে সমর্থন ক’রে এর মীমাংসার জন্য এক আন্তর্জাতিক বৈঠক আহ্বানের প্রস্তাব দিলেও জার্মানির পরামর্শে ও মদতে অষ্ট্রিয়া তা প্রত্যাখান করে। এরপর অষ্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড আক্রমণ করে এবং জার্মানি তাদের সমর্থন করে। অন্যদিকে সার্বিয়ার সমর্থনে গেল রাশিয়া এবং পরে ইংল্যান্ড যুক্ত হয়। জার্মানি ও অষ্ট্রিয়ার সমর্থনে পরে যোগ দেয় তুরস্ক, রুমানিয়া, বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলি। এইভাবেই গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

আরও পড়ুন:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গতিপথের দিকে নজর দেওয়া যাক এবার। এই যুদ্ধের ক্ষেত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা চলে, পূর্ব ও পশ্চিম। জার্মানির পূর্ব সীমান্তে ফ্রান্সের সঙ্গে এবং পশ্চিমে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধের শুরুতেই জার্মানি যখন নিরপেক্ষ বেলজিয়ামের প্রতিরোধ অগ্রাহ্য করে তাদের ভিতর দিয়েই অগ্রসর হতে থাকে তখন ব্রিটেন জার্মানির কাছে বেলজিয়াম থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানালেও জার্মানির তরফে কোন উত্তর আসেনি, ফলে ব্রিটেন সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আসলে ব্রিটেনের এই যুদ্ধে প্রবেশ আসলে ইউরোপে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখার কারণেই। বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে গিয়ে জার্মানি প্রথমে ফ্রান্স আক্রমণ করে। তবে ইপ্রেস-এর যুদ্ধে জেনারেল ফচ্-এর নেতৃত্বে জার্মানির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় তাতে জার্মানির ফ্রান্স দখলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে রাশিয়া জার্মানিতে প্রবেশ করতে চেয়েও ট্যানেনবার্গের যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পিছু হটে। যদিও অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে রাশিয়া গ্যালিসিয়ার দখল নিয়েছিল। আবার জার্মানি অস্ট্রিয়ার সাহায্যে এগিয়ে এসে রাশিয়াকে পরাস্ত করে। ১৯১৫ সালে অস্ট্রিয়ার অধিকারে থাকা প্রদেশগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে ইতালি যোগ দেয় মিত্রপক্ষে এবং অস্ট্রিয়াকে আক্রমণ করে। এর মধ্যে জাপান আবার মিত্রশক্তিতে এবং তুরস্ক কেন্দ্রীয় শক্তিতে যোগদান করে। ১৯১৫ সালেই মিত্রবাহিনী অটোমান সাম্রাজ্যের গ্যালিপলিতে অবতরণ করে। প্রায় দশ মাস যুদ্ধের পর অটোমানরা জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং বুলগেরিয়ার আক্রমণে সার্বিয়া পরাজিত হয়। ১৯১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জার্মানি ভার্দুন আক্রমণ শুরু করে। ভার্দুন এবং সোমিতে দুই পক্ষের ভয়ংকর যুদ্ধ হয়। সেই বছরই ব্রিটেন ও জার্মানির মধ্যে সংঘটিত জুটল্যান্ডের নৌযুদ্ধে ব্রিটিশরা দারুণ সাফল্য পেয়েছিল। সেই বছরই ইতালী দক্ষিণ আলবানিয়া দখল করেছিল। ১৯১৭ সালে ইতিহাসে যে বিখ্যাত ঘটনাটি ঘটে সেটি হল রুশ বিপ্লব। এই রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান হলে নবগঠিত সরকার কেন্দ্রীয় শক্তির সঙ্গে ব্রেস্ট-লিটোভস্কের চুক্তির দ্বারা যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এরপরেই বলা যায় সেই শূণ্যস্থান পূরণ করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রপক্ষে যোগদান করেছিল। জার্মানির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপ্রবেশ মিত্রশক্তিকে শক্তিশালী করেছিল। ১৯১৮ সালের ২ জুন মার্কিন বাহিনী জার্মানদের মার্নে নদী পার হওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে। পশ্চিম সীমান্তে আমিশেন্সের দিকে অগ্রসর হতে গিয়েও বাধা পায় জার্মানি। অবশেষে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে।

আরও পড়ুন:  পলাশীর যুদ্ধ

ইউরোেপ জুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের অনেকগুলি দেশে যেমন পড়েছিল তেমনই বিশ্বরাজনীতির কাঠামোতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রায় এক কোটিরও বেশি সৈন্য হতাহত হয়, প্রভূত পরিমাণে ধনসম্পত্তি বিনষ্ট হয়। যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ান সৈন্য মারা গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গেই মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি সব সমস্যা বিশ্বের ঘাড়ে এসে পড়ে। ১৯২৯ সালের মহামন্দা আসলে এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফল। বিশ্বযুদ্ধের পরই শ্রমজীবী আন্দোলন এবং নারী জাগরণ আরও জোরদার হয়ে উঠেছিল। ইউরোপ জুড়ে নিরস্ত্রীকরণ এবং যৌথ নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই প্যারিসে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মিত্রশক্তি এবং জার্মানরা ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্যারান্টি চুক্তি স্বাক্ষর করে জার্মানির দ্বারা কোনও অতর্কিত আক্রমণ হলে ফ্রান্সকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরির সাথে পৃথক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেটি ঘটেছিল তা হল, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে লীগ অব নেশনস বা জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল।

তথ্যসূত্র


  1. ‘আধুনিক ইয়োরোপের ইতিহাস (১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)’, ডঃ গৌতম নিয়োগী ও অধ্যাপক গৌরদাস হালদার, ব্যানার্জি পাবলিশার্স, কলকাতা
  2. ‘আধুনিক ইওরোপ ও বিশ্বের ইতিহাস (১৮৭১-১৯৫০)’ (দ্বিতীয় সংস্করণ), অতুল চন্দ্র রায়, মৌলিক লাইব্রেরি, কলকাতা, ১৩৬৭
  3. ৩.https://en.m.wikipedia.org/
  4. ৪.https://www.history.com/
  5. ৫.https://www.loc.gov//
  6. ৬.https://www.historyonthenet.com/
  7. ৭.https://www.iwm.org.uk/

error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন।

Discover more from সববাংলায়

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

চৈতন্যদেবের অসামান্য জীবনী দেখুন

চৈতন্য জীবনী

ভিডিওটি দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন