অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী

অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী

বাংলা ভাষায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’। এই প্রবাদটির অর্থ হল অল্পবিদ্যা অর্থাৎ সঠিক শিক্ষা পর্যায়ভুক্ত না হওয়া এবং ভয়ঙ্করী অর্থাৎ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি বা বিপদের আশঙ্কা। বিদ্যা দ্বারা ব্যাক্তি সম্মান লাভ করে, বিদ্যা মানুষকে সফলতা এনে দেয়। কিন্তু অল্পবিদ্যা অতীব ভয়ানক। এই প্রবাদের পিছনে কিছু প্রচলিত কাহিনী বা গল্প রয়েছে।

প্রথম গল্পটি হল – এক গ্রামে এক হাতুড়ে কবিরাজ বাস করত। তার হাত যশ ও চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞান থাকায় সে খুব অহংকারী ছিল তবে চিকিৎসার পুঁথিগত বিদ্যা বা জ্ঞান তার ছিল না। চিকিৎসা সম্পর্কিত কিছু টোটকা ও বচন তার শুধু মুখস্থ ছিল। সেই কবিরাজের কাছে এক চোখের রুগী এসে উপস্থিত হয়। হাতুড়ে কবিরাজের মুখস্থ ছিল – “নেত্ররোগে সমুৎপন্নে কৌণ ছিত্ত্বে কটিৎ দহেৎ” অর্থাৎ চক্ষুরোগে দুই কান ছিদ্র করে কটি বা কোমর পোড়াতে হবে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি আসলে অশ্ব চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরী ছিল কিন্তু কবিরাজ অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো চক্ষুরুগীটির উপর এই বিদ্যা প্রয়োগ করায় বিপর্যয় সৃষ্টি হল।

দ্বিতীয়গল্পটি হল – এক গ্রামে এক অল্পবিদ্যা জানা বামুন বাস করত। টোল বা গুরুগৃহে সে শিক্ষা লাভ করেনি। নানা জায়গা থেকে সংস্কৃত বচন ও শাস্ত্র কথা শুনে ও মুখস্থ করে তার শিক্ষা লাভ হয়েছিল। সেইসব বচন শুনিয়ে সে সবার মাঝে তার বিদ্যার পরিচয় দিত। গ্রামের নিরক্ষর ব্যক্তিরা তাদের নানা ধর্মীয় কাজে ও পূজা আর্চনায় শাস্ত্রের বিধান দেবার কাজে সেই পণ্ডিতকে ডেকে পাঠাতেন। এই গ্রামে সে ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ হিসাবে ভালোই সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। একদিন সেই বামুন একটি সংস্কৃত শ্লোকে দেখলেন জল ছাড়া তেলে ভাজা জিনিস, পায়েস, দই, ছাতু এই সবকিছু শূদ্রের ঘরে তৈরি হলেও ব্রাহ্মণ ভোজন করতে পারবেন। শ্লোকে পায়েস অর্থে দুধে জ্বাল দিয়ে বানানো ক্ষীরের কথা বলা হয়েছে, দুধ ও চালের তৈরি পায়েসের কথা নয়। ক্ষীর ও পরমান্নের পার্থক্য না বুঝে ব্রাহ্মণটি শূদ্রের ঘরে পায়েস খায় যা শুনে পাশের গ্রামের ব্রাহ্মণেরা ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণকে একঘরে করে দেয়। ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মালেই ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না। এরজন্য চর্চা ও পুঁথিগত বিদ্যার অবশ্য প্রয়োজন। ব্রাহ্মণের মূর্খতাই এখানে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীর প্রমাণ।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

উদাহরণ – ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেখে অনেকেই নিজেকে উচ্চ শিক্ষিত ভেবে নেয় যার ফলে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী-দের উৎপাত দিন দিন বাড়ছে।

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ৩১ পৃঃ

One comment

আপনার মতামত জানান