বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হল শনির দশা – এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে কোন মানুষের দুরবস্থা বা দুঃসময়ের কথা বোঝানোর জন্য৷
নবগ্রহের সপ্তম গ্রহ শনি৷ পদ্মপুরাণ অনুসারে সূর্যের অন্যতম স্ত্রী ছায়ার গর্ভে জন্ম শনির। ব্রহ্মবৈতর্বপুরাণ মতে সূর্যের সারথি চিত্ররথের মেয়ের সঙ্গে শনির বিবাহ হয়৷ একদিন ঋতুস্নান (ঋতুমতী হওয়ার চতুর্থ দিনের স্নান সংস্কার) সম্পন্ন করে সুন্দর করে সেজে শনির সামনে আসেন এবং সঙ্গম প্রার্থনা করেন৷ শনি তখন ধ্যানমগ্ন ছিলেন, তাই তিনি স্ত্রীর দিকে দৃষ্টিও দিলেন না। শনির স্ত্রী রেগে গিয়ে অভিশাপ দিলেন তিনি যার দিকে দৃষ্টি দেবেন সে বিনষ্ট হবে৷ এই পুরাণের গনেশখন্ডে লেখা আছে, পার্বতীপুত্র গনেশ জন্মগ্রহণ করলে স্বর্গ মর্ত পাতাল থেকে সকল দেবতা নবজাতক শিশুকে দেখার জন্য কৈলাশে এসে উপস্থিত হন৷ শনি তাঁর স্ত্রীর অভিশাপের কথা স্মরণে রেখে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ পার্বতী তাকে নবজাতকের দিকে তাকাতে বললে শনি অভিশাপের কথা খুলে বলেন তবুও পার্বতী অনুরোধ করলে শনি গনেশের দিকে তাকান এবং গনেশের দেহ থেকে মুন্ডু বিনষ্ট হয়৷ বিষ্ণুর চেষ্টায় সেখানে হাতির মাথা বসানো হয়৷ ক্রোধে দেবী পার্বতী শনিকে অভিশাপ দিয়ে খোঁড়া করে দেন৷
পুরাণের এই গল্প ছাড়া আরও একটি গল্প আমরা পাই শনির পাঁচালীতে যা ঘরে ঘরে পঠিত হয়ে থাকে৷ অযোধ্যার রাজা চিত্রবরের মৃত্যুর পর শ্রীবৎস রাজা হন৷ চিত্রসেনের রূপবতী কন্যা চিন্তাদেবী ছিলেন তাঁর স্ত্রী৷ যাগযজ্ঞ দানধ্যান সব মিলিয়ে সুষ্ঠভাবে তাঁর রাজ্যপাট চলছিল৷ বিশাল রাজ্যের অধিকারী রাজার সুবিচারক হিসেবে সুনাম ছিল৷ এমন একটি দিনে তাঁর দরবারে উপস্থিত হন লক্ষ্মীদেবী ও শনি৷ তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা বিচার করতে বলেন রাজাকে৷ রাজা তখন স্নানের জন্য ব্যস্ত থাকায় পরদিন পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন৷ পরদিন রাজা শ্রীবৎস পড়লেন মহা সমস্যায়৷ এই সমস্যা থেকে মুক্তির একটি পথও বার করলেন৷ রাজদরবারে সিংহাসনের ডানদিকে রাখলেন সোনার সিংহাসন, বামদিকে রুপোর সিংহাসন এবং এই দুই সিংহাসনই চাদরদিয়ে থেকে রাখেন৷ যথাসময়ে লক্ষ্মী এবং শনি এসে উপস্থিত হলে রাজা আসন গ্রহন করতে বলেন৷ নিজ ইচ্ছায় দুজনে সিংহাসন গ্রহণ করেন রাজার কাছে শ্রেষ্ঠত্বের বিচার জানতে চাইলে রাজা বলেন দুজনে নিজের আসন নিজেরাই বেছে নিয়েছেন৷ দুজনে লক্ষ্য করে দেখেন শনি রুপোর সিংহাসন ও লক্ষ্মীদেবী সোনার সিংহাসনে বসেছেন৷ এক্ষেত্রে লক্ষ্মীদেবী শ্রেষ্ঠ হলেন৷ ঘটনা পরম্পরায় শনির মনে ক্ষোভ জন্ম নিল৷ তিনি অজুহাত খুঁজতে লাগলেন শ্রীবৎসকে শাস্তি দেওয়ার জন্য৷ পরদিন শ্রীবৎস স্নান সেরে উঠেছেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক কালো কুকুর পা ধোয়া জল চেটে খায় তখন শনি দেবতা প্রবেশ করেন রাজার দেহে৷ শনির প্রভাবে রাজার বুদ্ধিভ্রংশ, রাজ্য ধ্বংস, দুর্ভিক্ষ বড় বড় ক্ষতি হতে থাকে৷ রাজা সব হারিয়ে ফেলেন। বহু দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত হয়৷ এই ঘটনাতেও শনির কোপ, গ্রহের ফের বা শনির দৃষ্টির একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে৷ কোন মানুষের বহুল ক্ষতি হতে থাকলে এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উদাহরণ – যুবকদের চাকরি নেই তার উপর বছর বছর যে হারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে দেশে যেন শনির দশা চলছে বলে মনে হয়।
তথ্যসূত্র
- প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৪৪
বানানটা “দুরবস্থা”, নাকি আপনি যা লিখেছেন (দুরাবস্থা) তাই?
আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আমরা বানানটি ঠিক করে নিয়েছি।