প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে কিছু দিবস পালিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। ভারতবর্ষও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভারতে পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলোর মধ্যে একটি হল শিক্ষক দিবস (teachers day)।
প্রতিবছর ৫ সেপ্টেম্বর সারা ভারত জুড়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। দেশ গঠনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁদের স্মরণে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।
৫ সেপ্টেম্বর সারা ভারত জুড়ে মহা সমারোহে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয় শিক্ষক দিবস। ১৯৬২ সাল থেকে প্রতি বছর ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের প্রাক্তন দূত এবং একাধারে শিক্ষক ও দার্শনিক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর দিনটি ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সালে তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র কুড়ি, তিনি তাঁর প্রথম গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন বেদান্ত দর্শনের ওপর। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তাঁর অধ্যাপনা জীবন শুরু ।এরপর একাধারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘King George V Chair of Mental and Moral Science’, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Spalding Professor of Eastern Religion and Ethics ও মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেন। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। ১৯৫২ সালে উপরাষ্ট্রপতি হন রাধাকৃষ্ণন। তার আগে, ১৯৪৬-সালে ইউনেস্কোর দূত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের দূতও ছিলেন তিনি। ১৯৬২-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন রাধাকৃষ্ণন।নোবেলজয়ী ব্রিটিশ দার্শনিক, বারট্রান্ড রাসেল তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, “ডঃ রাধাকৃষ্ণন ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়া মানে দর্শন বিষয়টার কাছে একটা আলাদা সম্মানের। আমিও নিজে দার্শনিক, তাই আমিও গর্বিত।” ১৯৩১- সালে নাইটহুড, ১৯৫৪-সালে ভারতরত্ন এবং ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ রয়্যাল অব মেরিট-এর সাম্মানিক সদস্যপদ পানরাধাকৃষ্ণন। ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল এই মহান শিক্ষকের মৃত্যু হয়।
ভারতে শিক্ষক দিবসের উৎপত্তি মূলত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওনার গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীদের তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাওয়াকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু ডঃ রাধাকৃষ্ণণ নিজের জন্মদিন পালনের পরিবর্তে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বলেন তাঁর জন্মদিনকে যদি একান্তই স্মরণীয় করে রাখতে হয় তবে এ দেশের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান মাথায় রেখে তাঁদের স্মরণে দিনটি পালন করলে তিনি বেশী খুশি হবেন। সেই থেকেই প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন হয়ে আসছে সারা দেশজুড়ে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য সারা বিশ্বে কিন্তু শিক্ষক দিবস পালন হয় ঠিক এক মাস পর- অর্থাৎ ৫ অক্টোবর। সব মিলিয়ে ১৯টি দেশে অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ ‘টিচার্স ডে’ পালিত হয়। দেশগুলি হল—কানাডা, জার্মানি, বুলগেরিয়া, আর্জেবাইজান, ইস্তোনিয়া, লিথোনিয়া, ম্যাকেডোনিয়া, মলদ্বীপ, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কুয়েত, কাতার, রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইংল্যান্ড, মরিশাস, মলদোভা। অন্যদিকে আবার বিশ্বের অন্য ১১টি দেশে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়। দেশগুলি হল- মরক্কো, আলজেরিয়া, টিউনেশিয়া, লিবিয়া, মিশর, জর্ডন, সৌদি আরব, ইয়েমেন, বাহারিন, ইউ এ ই, ওমান। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর ্দিনটিকে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে মান্যতা দেয়। নেপালে অবশ্য শিক্ষক দিবস পালন হয়- গুরুপূর্ণিমার দিন।
এই দিনটিতে সারা ভারতের সমস্ত স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ পঠন-পাঠন বন্ধ থাকে। উৎসাহ উদ্দীপনা অবশ্য বেশি দেখা যায় স্কুলগুলিতে। ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শ্রেণীকক্ষকে অত্যন্ত সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে ছাত্রছাত্রীরা। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও তাঁর জীবন দর্শন সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদেরও অবগত করে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
4 comments