যুধিষ্ঠিরের জন্মের পর পাণ্ডুর মনে হল ধর্মের পথে চলবে এরম পুত্র তো পেলাম, কিন্তু ক্ষত্রিয়ের ঘরে ক্ষত্রিয়ের মত উপযুক্ত শক্তিশালী এক বীর পুত্র চাই। অথচ পাণ্ডুর শাপের জন্য সে পিতাও হতে পারবে না। কিন্তু ক্ষত্রিয় পুত্রের কথা ভেবে পাণ্ডু আবার এল কুন্তীর কাছে, তাকে নিজের মনের কথা জানাল, “কুন্তী! লোকে বলে ক্ষত্রিয়ের শক্তিই সব, ক্ষত্রিয় জাতি বলবান। আমার মনস্কামনা পূর্ণ করে সেইরকম এক বলবান পুত্র দাও আমায়।”
স্বামীস্ত্রীতে আলোচনা করে তারা স্থির করল বায়ুদেবতাকে ডাকবেন এবার। রামায়ণে এই বায়ুদেবতার পুত্রই হল হনুমান। অতএব বোঝাই যায় পাণ্ডুরা শক্তিশালী বীরপুত্রের জন্য কেন বায়ুদেবতাকে স্মরণ করেছিল।
দুর্বাসার মন্ত্রে কুন্তী স্মরণ করল বায়ুদেবতাকে। তিনি এলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “কি চাই বলো কুন্তী আমার কাছে?”
সলজ্জ হাসি হেসে কুন্তী বলল, “বিশালদেহ, বীরশ্রেষ্ঠ সব বীরের অহংকার ভেঙে দিতে পারে, এরকম এক বলবান পুত্র দিন আমায়।” বায়ুদেবতা আর কুন্তীর মিলনে জন্ম নিল ভীম।
ভীমের শক্তি সম্বন্ধে বলা আছে তার জন্মের পরের একটা গল্পে। একদিন কুন্তীর কোলে ভীম যখন ঘুমিয়েছিল, তখন জঙ্গলের মধ্যে একটা বাঘ ডেকে ওঠে। বাঘের গর্জন যে কি ভীষণ সে যে শুনেছে সেই জানে। সেই ভীষণ গর্জন শুনে আচমকাই কুন্তীর হাত থেকে ভীম মাটিতে পড়ে যায়। মাটিতে বলা ভুল হল, সে পড়ে একটা পাথরের ওপর। তার শরীরের আঘাতে পাথরখণ্ডখানি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র
- "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (২০। যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম - পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু) পৃষ্ঠাঃ ৪৭
- "মহাভারতের একশোটি দুর্লভ মুহূর্ত", আনন্দ পাবলিশার্স, পঞ্চম মুদ্রণ - ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যায় ১৪ ভীমসেনের জন্ম, পৃষ্ঠাঃ ৭৪
- "কৃষ্ণা, কুন্তী ও কৌন্তেয়", আনন্দ পাবলিশার্স, নবম মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ ভীম, পৃষ্ঠাঃ ১৬৪-১৬৫
4 comments