প্রোপ্রিওসেপশন

প্রোপ্রিওসেপশন

ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি আমাদের  শরীরে পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আমরা বাইরে থেকে আসা উত্তেজনায় সাড়া দিই। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের নামও আমাদের সবার জানা- চোখ, নাক, কান, জিভ এবং ত্বক।কিন্তু যেটা আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের এই চেনা পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বাইরে আমাদের শরীরে  ভেতরে আরও একটি অত্যন্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে যার সাহায্যে আমরা আমাদের শরীরে কোথায় কোন অঙ্গ রয়েছে সেটা বুঝতে পারি তাও আবার না দেখেই, না তাকিয়েই। প্রাণী শরীরের এই না তকিয়েই অবস্থান বুঝতে পারার ক্ষমতাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন- প্রোপ্রিওসেপশন।

প্রোপ্রিওসেপশন আমাদের রোজকার জীবনে এমন নীরব অথচ অবিচ্ছেদ্য অংশ যে আমরা খেয়ালই করিনা  এর উপস্থিতি আলাদা করে। অথচ এই প্রোপ্রিওসেপশনের অনুপস্থিতিতে আমরা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের এমন অনেক সাধারণ কাজ করতে পারবনা যা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। যেমন পায়ের দিকে না তাকিয়ে হাঁটা, চোখ বন্ধ সত্ত্বেও শরীরের যে কোন অঙ্গ কোথায় অবস্থিত তা বুঝতে পারা ইত্যাদি।এই কারণেই অনেক বিজ্ঞানী  একে ‘ষষ্ঠেন্দ্রিয়’ বলে থাকেন।

প্রোপ্রিওসেপশন চোখ, কান, নাকের মত স্বতন্ত্র কোন অঙ্গ নয় যাকে আমরা স্পর্শ করতে পারি। এটা এমন একটা সংবেদনশীল নেটওয়ার্ক যা সমগ্র স্নায়ুতন্ত্র জুড়ে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে।আমাদের দেহ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র পেশী এবং হাড়ের সন্ধিমুখ(জয়েন্ট)-এর ভেতর ছড়িয়ে থাকে  এমন অনেক বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন স্নায়ু, বলা ভাল স্নায়ু-প্রান্তভাগ (প্রোপ্রিওসেপটর) যাদের কাজই হল হল পেশীর সংকোচন প্রসারণ বোঝা, অর্থাৎ কোন অঙ্গের কোন পেশী কতটা সংকুচিত বা প্রসারিত হল সে সব নির্ধারণ করা। শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি স্নায়ু থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্ক যে ধারণা লাভ করে সেই ধারণাই আমাদের জানান দেয় আমাদের নাকটা পায়ে নয়, মুখের সামনের দিকে অবস্থিত কিংবা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই গাড়ির গিয়ার, আ্যক্সিলেটর, ব্রেক কোন জায়গায় রয়েছে।আমাদের দেহ জুড়ে প্রতি মুহূর্তে যে কোটি কোটি তথ্যস্রোত বয়ে চলেছে স্নায়ু থেকে স্নায়ুতে সেই তথ্যসমুদ্র থেকে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্ক  আমাদের জানান দিয়ে দেয় ঘুমের মধ্যেই মশাটা আমাদের বাঁ কানের নিচে গান গেয়ে চলেছে এবং এরকম জরুরি অবস্থায় বাঁ হাতের চেটোর দ্রুত এবং সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

প্রোপ্রিওসেপশন এই যে অনুভূতি একে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়- দ্রুততা, ভারসাম্য এবং সমন্বয় সাধন।দ্রুততা বলতে সেই দক্ষতা বোঝায় যে দক্ষতার সাহায্যে আমরা দ্রুত অথচ নিয়ন্ত্রিত ভাবে আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করি।যেমন ধরা যাক- চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় পায়ের পাতায় মশা কামড়ালে আমরা যে ক্ষিপ্রতার সাথে ঝুঁকে পড়ে হাত দিয়ে পায়ের পাতার অবস্থান না দেখেই মশার অবস্থান বুঝে থাপ্পড় মারি সেই ক্ষিপ্রতায় যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকত তাহলে আমরা কখনোই মশা অবধি হাত নিয়ে তো যেতেই পারতাম না বরঞ্চ এলোপাথাড়ি হাত নাড়িয়ে চোটও পেতে পারতাম।ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও প্রোপ্রিওসেপশনের ভীষণ গুরুত্ব আছে।আমাদের শরীরের ভরকেন্দ্রকে যথাযথভাবে বজায় রেখে আমাদের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এই প্রোপ্রিওসেপশন।যে অনাবিল মসৃণতায় আমরা এই অঙ্গ সঞ্চালনগুলি করি সেই সমন্বয় সাধন নিরলসভাবে হয় প্রোপ্রিওসেপশনের দৌলতেই।

3 comments

আপনার মতামত জানান