ওঁরা বলেন, পৃথিবীর সব শিশুরাই আসলে একজন বৈজ্ঞানিক। কারণ ওদের সব কথাতেই একটা ‘কেন’ থাকে,আর বিজ্ঞানের মূল ভিত্তিটাই দাঁড়িয়ে এই ‘কেন’র ওপর। কেন আপেল সর্বদা মাটিতেই পড়ে? কেন শ্যামাপোকা মৃত্যু জেনেও আগুনের দিকে ছুটে যায়? কেন পৃথিবীতে গ্রীষ্ম আসে, গ্রীষ্মের পর বর্ষা, শীতের পর বসন্ত? বিজ্ঞানের মাপা, নিখুঁত যুক্তির ঠিক পরের মোড়টাতেই বাস করে কবিতা। এ পাড়ায় যুক্তির প্রভাব ততটা পড়েনা। এখানে মানুষের আবেগই প্রধান জীবিকা। এ পাড়ার পথে ঘাটে আলোচনা চলে আজও কেন মানুষ প্রেমে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ উপেক্ষা করেই। কেন মানুষ হেরে গেলে কেঁদে ফ্যালে আজও। আসলে, যুক্তি, আবেগ এগুলোর যেমন কোন ধর্ম হয়না, তেমন আবার সব ধর্মের একটা চরিত্রগত মিল থাকে। বিশ্বাস। এটা ঠিক সেই বিশ্বাস যে বিশ্বাসটা বুকে নিয়ে মানুষ ইন্টারভিউ দিতে যায়। মানুষ মন্দিরে যায়, মসজিদে যায়, সিনাগগে যায়।পৃথিবীর এই দিগন্ত ব্যাপী উপত্যকার খাঁজে খাঁজে এমনই সব ধর্মের, সব বর্ণের কিছু মানুষ আছে যারা একদিন একাই হাত ধরে পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়েছে এক শতাব্দী। তাঁদের আঁকা একটা ছবি,তাদের লেখা একটা লাইন, একটা সূত্র দেখে মানুষ ভেবেছে, এর জন্যই বোধহয় বেঁচে থাকা। আবার এক শতাব্দী কেটে যাওয়ার পরও এমন অনেকে আজও আছেন যাদের নাম ব্রেকিং নিউজ হয়না।সিলেবাস হয়না। সিনেমা হয় না। পৃথিবীতে আজও রোজ কত ঘটনা ঘটে, কত ঘটনা ঘটেছে যার ছায়া আজও আমাদের চেনা চৌহদ্দিটায় পড়ে না। এমন কত ঘটনা ঘটে গিয়েছে, কত শব্দ উচ্চারিত হয়েছে যাদের জন্মের সেই মুহূর্তটার পরম উষ্ণতার আঁচ আমরা কেউ পেতে চাইনি।আমরা ধরেই নিয়েছি এরা এমনিই তৈরী হয়। এমনিই জন্মে যায় একদিন, নিজে নিজেই। পৃথিবীর ইতিহাস জুড়ে এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ, আপাত গুরুত্বহীন ঘটনা, ব্যক্তিদের কথা শোনাব আমরা, সেটাও আবার বাংলায়। এই জানার ইচ্ছাটা অনেকটা নেশার মত, বিশেষ করে যদি সেটা মাতৃভাষায় হয়। তেমনি নিজের মাতৃভাষাতে অনর্গল কিছু বলে যাওয়া বা কিছু লিখে যাওয়াটাও একটা গর্বের বিষয়, বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক কোনও ভাষা উঁকি মারছে সর্বত্র, এমনকি আমাদের শোবার ঘরেও। আন্তর্জাতিক ভাষার এই রাজত্বের মাঝে মাতৃভাষায় অনর্গল গল্প বলে যাওয়া, নিরন্তর শুনে যাওয়া একটা অভিজ্ঞতা বৈকি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে যা কিছুই জানব,বলব বা লিখব সব কিছুই যেন হয় বাংলায়, এই আমাদের প্রয়াস। । সমস্ত বাঙালী নিজের ভাষা নিয়ে আগের মতই যেন গর্ব করে আবার, “আমরি বাংলা ভাষা “, এই আমাদের প্রচেষ্টা। আর আমাদের এই প্রয়াসে আপনারা সকলে যোগদান করুন, এই আমাদের ইচ্ছা।
আমাদের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদকেরা যা বলছেন…

সম্বিত শুক্লা
বাঙালি আজ বাংলায় লিখতে, পড়তে, এমনকি কথা বলতেও ভুলে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এটা নিয়ে গর্বিত। কারণ তারা বাংলা না জেনে জানে কিছু আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু নিজের মাতৃভাষায় না পড়তে পারা, না লিখতে পারা বা না কথা বলতে পারাটা গর্বের না, অত্যন্ত লজ্জার। আর সেই লজ্জা কিছুটা মেটাতেই আমাদের এই প্রয়াস, যার নাম সববাংলায়।

অয়ন মৈত্র
আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হল কোনও বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান থাকা। কিন্তু জ্ঞানের প্রতি পিপাসা যেন কমে যাচ্ছে মানুষের। এই অভ্যাস অত্যন্ত বিপদজনক। এই বদভ্যাস কে পাল্টানোর জন্য, মানুষের মনে জ্ঞানের প্রতি একটু হলেও পিপাসা বাড়ানোর জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা – যার নাম সববাংলায়।

রুবাই শুভজিত ঘোষ
এটা মানতেই হবে আজকের সমাজ খুব বেশি মাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর। বই খুলে পড়ার সময় মানুষের নেই। কিন্তু মোবাইল আর ইন্টারনেট এই সময়ের অপরিহার্য অঙ্গ। আর ইন্টারনেটে কোন তথ্য ইংরাজিতে খুঁজলে সেই তথ্য সম্বন্ধে জানা যায় অনেক। কিন্তু সেই একই তথ্য বাংলায় খুঁজলে, সেটা ততটা সহজলভ্য নয়। বাংলার সেইরকম ওয়েবসাইট আছে খুব কম। আমরা সেই চেষ্টাই করে চলেছি। বাংলা নিয়ে এই ইন্টারনেটের যুগে বাঙালির কাছে পৌঁছনোর আমাদের ইচ্ছার নামই সববাংলায়।
