অমরনাথ ভারতের রাজ্য জম্বু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত।।এখানে সতীর কণ্ঠ পতিত হয়েছে।এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম মহামায়া ও ভৈরব ত্রিসন্ধ্যেশ্বর নামে পরিচিত।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন।মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন।সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব এই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য চালু করেন।মহাদেবের তান্ডব নৃত্য পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খন্ডে খণ্ডিত করেন।সেই দেহ খন্ড গুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়।বলা হয় অমরনাথে সতীর কন্ঠ পতিত হয়ে এই বিশেষ সতীপীঠ তৈরি হয়েছে।
পীঠনির্ণয় গ্রন্থ অনুযায়ী এটি চতুথ সতীপীঠ। এই তীর্থক্ষেত্রটি শ্রীনগর থেকে প্রায় ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।যাবার পথে পহেলগাও নামক শহরটিকে অতিক্রম করলেই পৌছানো যায় অমরনাথে।পহেলগাও থেকে অমরনাথে যেতে পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে।সমতল থেকে প্রায় ১২,৭২৯ ফুট উঁচুতে এই অমরনাথ গুহাটি অবস্থিত।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী মহাদেব একদিন পার্বতীকে অমরত্ব ও সৃষ্টির রহস্য শোনানোর জন্য পার্বতীকে একটি নির্জন গুহায় নিয়ে আসেন।সেই গুহাটিই হলো অমরনাথ।এই গুহায় আসার আগে শিব তার সঙ্গী নন্দীকে রেখে এসেছিলেন পহেলগাওতে, তাঁর জটায় অবস্থিত চন্দ্রকে রেখে আসেন চন্দনওয়াড়িতে, তাঁর গলার সাপকে রেখে আসেন শেষনাগে এবং পার্বতীর প্রিয় পুত্র গনেশকে রেখে এসেছিলেন মহাগনেশ পর্বতে। শিব তার সঙ্গী সাথী সবাইকে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে অমরনাথে বসে পার্বতীকে অমরত্বের জ্ঞান প্রদান করছিলেন।সেখানে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না,শুধু সেখানে রয়ে গিয়েছিল একটি পায়রার ডিম। যেটা থেকে পরে একজোড়া পায়রার জন্ম হয়। অমরত্বের গল্প শুনে পায়রা দুটিও অমর হয়ে যায়।গল্প কথা অনুসারে এই পায়রা যুগল আজও এই গুহায় বর্তমান। অনেকের মতে এরাই শিব ও পার্বতী।
অমরনাথ গুহার প্রায় ১৩০ফুট ভিতরে গিয়ে শিব লিঙ্গের দর্শন পাওয়া যায়।গুহার ছাদ থেকে জল ছুঁইয়ে মেঝেতে পরে শিব লিঙ্গের আকার ধারণ করে ।এই ভাবেই প্রতিবছর অমর নাথ লিঙ্গের সৃষ্টি হয়।লিঙ্গের উচ্চতা প্রতি বছর চন্দ্রকলার উপরেই নির্ভর করে।কখনও ৬ফুট ৭ফুট আবার কখনও ৮ ফুটেরও শিব লিঙ্গের দর্শন পাওয়া যায়।সারা বছর পাহাড় বরফে প্রচলিত কাহিনী অনুসারে এক মুসলমান মেষপালক এই গুহাটি আবিষ্কার করেছিলেন।এক সন্ন্যাসী একদিন মেষপালকে এক থলি কয়লা দিয়েছিলেন,বাড়ি ফিরে মেষপালক দেখে বস্তা ভর্তি কয়লা সোনায় পরিণত হয়েছে।সে আবার সেই গুহায় ফিরে আসে কিন্তু সেই সন্ন্যাসীর দেখা পায় নি। সেখানে এই অমরনাথ শিব লিঙ্গ দর্শন পেয়েছিল।এই ভাবেই এই ধামের প্রচার হয়।আবার অনেকের মতে একসময় গোটা কাশ্মীর জলে ভেসে যায়,সেই জল কাশ্যপ মুনি নদীর দ্বারা বের করেছিলেন।এর পর ভূগু মুনি অমরনাথ পাহাড়ে শিবের দেখা পেয়েছিলেন।সেই থেকেই চারিদিকে অমরনাথ এর প্রচার পায়।
তথ্যসূত্র
- একান্ন পীঠ, হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়, দীপ প্রকাশন, পৃষ্ঠা ২৪৫
- https://ebela.in/national/8-facts-about-amarnath
- https://eisamay.indiatimes.com//dharma-karma/pilgrimage/a-muslim-shepherd-had-discovered-the-holy-cave-of-amarnath-know-the-significance-of-darshana/