আষাঢ় মাসের শুরুতে বসুমতি মাতা যখন বর্ষা ঋতুর জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন, তখন তাকে এক ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়। ঋতুকালে মেয়েরা রজঃস্বলা হওয়ার পর সন্তানধারণে সক্ষম হয়, বসুমতী মাতাকেও সেইভাবে গণ্য করা হয়। তবে ঋতুকালে মেয়েদের কোন মাঙ্গলিক কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, ঠিক একইভাবে বসুমাতা অম্বুবাচীর এই তিনদিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলাদের আগুনে রান্না করা কোন খাবার খেতে বারণ করা হয়।
এই আচারের সাথে বসুমাতা অর্থাৎ পৃথিবী এবং প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থার একটা সুসম্পর্ক আছে। হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীকে মাতৃ ভাবে ধারণা করা হয়। তাই আষাঢ় মাসের শুরুতে বসুমতি মাতা যখন বর্ষা ঋতুর জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন, তখন তাকে এক ঋতুমতী নারী রূপেই গণ্য করা হয়। এই অম্বুবাচী নিবৃত্তির পরই প্রাচীনকালে জমি চাষ শুরু করা হত। এই অম্বুবাচী চলাকালীন তিনদিন জমিতে কোন লাঙ্গল দেওয়া বা চাষবাস করা হতনা। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ঋতুকালে মেয়েরা যেমন অশুচি থাকে এবং কোন মাঙ্গলিক কর্ম থেকে তারাবিরত থাকে, ঠিক একইভাবে বসুমাতা অম্বুবাচীর এই তিনদিন অশুচি থাকে বলে ধারণা করাহয়। এসময়ে ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলারা কেউই আগুনে রান্না করা কোন খাবার খান না। তার কারণ বসুমাতা যেহেতু ঋতুমতী, তাই এইসময় পৃথিবীর বুকে আগুন ধরানো হয়না। জমিতে লাঙ্গল দেওয়া হয়না। পৃথিবীর বুকে আঘাত করা, এমনকি জামা কাপড় কাচাকাচিও এই সময় বন্ধ থাকে। যদিও এটা লৌকিক আচার, তবুও এই আচারের সাথে জীবন ব্যবস্থার একটি উন্নত ও সুস্থ চিন্তা ধারার পরিচয় পাওয়া যায়।
One comment