সাধারণ জীবনে বারে বারে ধনুর ভাঙা পণ বা ধনুর্ভঙ্গ পণ প্রবাদটির ব্যবহার আমরা করে থাকি। ধনুর্ভঙ্গ পণ এর অর্থ হল সাঙ্ঘাতিক কোন পণ বা প্রতিজ্ঞা। এই প্রবাদের উৎস সন্ধান করতে হলে আমাদের উঁকি দিতে হবে রামায়ণের সময় কালে৷
মিথিলার রাজা জনক যজ্ঞের উদ্দেশ্যে ভূমি কর্ষনকালে এক ভূমি কন্যা পান, যিনি সীতা নামে প্রতিপালিত হয়৷ রাজা জনক ( সীরধ্বজ) পণ করেছিলেন ঢ়িনি হরধনু ভঙ্গ করতে পারবেন তার সঙ্গেই সীতার বিবাহ দেবেন৷ হরধনু কী? হরধনু হল শিবের ব্যবহৃত বিশাল ধনুক৷ কথিত আছে যখন দক্ষযজ্ঞের যজ্ঞ ভাগ বিভিন্ন দেবতা নিলেও মহাদেব সেখানে বিশেষ গুরুত্ব পাননি৷ তখন মহাদের ক্রুদ্ধ হন এবং ধনুকের গুন টেনে ধরেন দেবতাদের শিরচ্ছেদনের জন্য। তখন দেবতাগন ভীত হয়ে শিবের স্তুতি করতে থাকেন৷ মহাদের তুষ্ট হয়ে এই ধনুক দেবতাদের উপহার দেন। দেবতারা তা জনকের পূর্বপুরুষ দেবারতের কাছে গচ্ছিত রাখেন। বংশানুক্রমিক ভাবে এই হরধনু রয়ে যায়। এই ধনুকে জ্যা রোপন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
রাজা জনক জানতেন হরধনুতে জ্যা রোপন করা কঠিন তবুও তিনি কন্যা সীতার বিবাহ বিষয়ে এমন পণ করেন। যে কোন কঠিন সংকল্পযুক্ত কাজের জন্য মন স্থির করার ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে –
রিকশা চালক দেবব্রত ধনুর ভাঙা পণ করেছেন, যেমন করে হোক কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে হলেও তার মেয়ের পড়াশোনায় বাধা বসতে দেবেন না৷
তথ্যসূত্র
- প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ৮৬ পৃঃ