কুরুক্ষেত্র কান্ড

কুরুক্ষেত্র কান্ড

আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট ভাষা, এর শব্দ ও সাহিত্য ভান্ডার অপরিসীম। যেকোনো উৎকৃষ্ট ভাষার একটি প্রধান সম্পদ হলো প্রবাদ, ইংরেজিতে যাকে বলে proverb। বাংলা ভাষায় প্রাচীনকাল থেকেই অনেক প্রবাদ লোকমুখে বা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। এই রকমই একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো “কুরুক্ষেত্র কান্ড”। এই প্রবাদটির অর্থ মহাকলহ অথবা তুমুল ঝামেলা। এই প্রবাদটির সাথে পৌরাণিক মহাভারতের যোগ রয়েছে। এই প্রবাদের উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে মহাভারতের সময় কালে। বর্তমান জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এই প্রবাদটির প্রয়োগ করে থাকি।

কুরুক্ষেত্র স্থানটি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের রাজ্য অম্বালা ও কর্ণাল জেলায় অবস্থিত। প্রাচীন উপনিষদগুলিতে এই কুরুক্ষেত্র স্থানটিকে দেবতাদের যজ্ঞস্থান বলে উল্লেখ করা আছে। এটি ধর্মক্ষেত্র নামেও পরিচিত। কুরুক্ষেত্র জায়গাটির প্রাচীন নাম ছিল সমন্ত পঞ্চক। ঋষি জমদগ্নি ও রেণুকার পঞ্চমপুত্র পরশুরাম একুশবার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয় নিচিহ্ন করে ক্ষত্রিয়দের রক্ত দিয়ে সমন্ত পঞ্চকে পাঁচটি রক্তের হ্রদ সৃষ্টি করেছিলেন। এবং ক্ষত্রিয়দের রক্ত দিয়ে পরশুরাম তার মৃত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। পরশুরামের এই কান্ড ঘটানোর একটি কারণ ছিল। পরশুরামের পিতা ঋষি জমদগ্নি তার পুত্রদের সঙ্গে একবার আশ্রমের বাইরে গিয়েছিলেন। এই সময় নর্মদাতীরবর্তী এক ক্ষত্রিয়, হৈহয়রাজ কার্তবীর্যজুন তাঁর অনুচর সহ ঋষি জমদগ্নির আশ্রমে উপস্থিত হন। আশ্রম থেকে তিনি বলপূর্বক কামধেনু সুরভিকে হরণ করেন ও আশ্রমের জিনিসপত্র, ঘর, গাছপালা সব লন্ডভন্ড করে ধ্বংস করে দিয়ে যান। আশ্রমে ফিরে পরশুরাম তাদের আশ্রমের এই অবস্থা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করেন। পরে কার্তবীর্যের পুত্ররা আবার পরশুরামের পিতা জমদগ্নিকে হত্যা করেন। প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পরশুরাম পৃথিবীকে ক্ষত্রিয় শূন্য করার অভিযান শুরু করেন এবং একুশবার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নিচিহ্ন করেছিলেন। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতোবড় একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল।

আবার কৌরব-পান্ডবদের পূর্ব পুরুষ হলেন চন্দ্রবংশীয় রাজা কুরু। তিনি এই স্থানে লাঙ্গল চষাতেন। তিনি সন্ন্যাসধর্ম নিয়ে এই স্থানটিতেই বসবাস শুরু করেন। সেই থেকে এই জায়গা ধর্মক্ষেত্র নামে পরিচিত হয় ও কুরুর নামানুসারে এই জায়গাটির নাম হয় কুরুক্ষেত্র। এই কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কৌরব-পান্ডবদের মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। আঠারো দিন ধরে আপন বংশের ভাই কৌরব-পান্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ শেষে উভয় পক্ষে মাত্র দশজন জীবিত ছিলেন। কৌরব পক্ষে কৃপাচার্য, কৃতবর্মা ও অশ্বত্থামা। পান্ডব পক্ষে, পঞ্চপান্ডব ও শ্রীকৃষ্ণ। ভারতের কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধ প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। আপন ভাইদের মধ্যে ঘটিত এই যুদ্ধই কুরুক্ষেত্র কান্ড নামে পরিচিত। আমাদের সমাজেও মাঝে মধ্যে এই কুরুক্ষেত্র কান্ড সংঘটিত হয়ে থাকে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

উদাহরণ – সামান্য জায়গা জমির দখল নেওয়া নিয়ে আপন ভাইদের সঙ্গে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এই ঝামেলা পরে কুরুক্ষেত্র কান্ড হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ৪৯-৫০ পৃঃ

আপনার মতামত জানান