মহাভারত

ভীমের নাগলোক ভ্রমণ

প্রমানকোটিতে জলবিহারের পর যখন  দুর্যোধন ভীমকে প্রতিহিংসাবশত জলে ফেলে দিল, অচৈতন্য ভীম ডুবে যেতে থাকল গঙ্গার জলে। ডুবতে ডুবতে অবশেষে সে এসে উপস্থিত হয় নাগলোকে। শুরু হয় ভীমের নাগলোক ভ্রমণ।

হঠাৎ করে নাগলোকে ভীমকে এভাবে আসতে দেখে নাগেরা তাকে দংশন করতে থাকে। নাগেদের এভাবে দংশনের ফলে ভীমের শরীরে তাদের বিষ প্রবেশ করতেএ থাকে। আর নাগেদের বিষ তার শরীরে থাকা কালকূট বিষের প্রভাব নষ্ট করে দেয়। বিষে বিষে বিষক্ষয়। এমন সময় ভীম চোখ খুলে দেখে তাকে কতগুলো নাগ মিলে দংশন করছে। তখন নিজের গায়ের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে নাগেদের বধ করতে থাকে ভীম। কিছু নাগেরা ভীমের মার থেকে বেঁচে পালিয়ে যায় তাদের রাজার কাছে। নাগরাজ বাসুকিকে গিয়ে তারা ভীমের কথা জানায়। সদলবলে রাজা দেখতে আসে ভীমকে।

ভীমকে দেখেই নাগরাজ বাসুকি চিনতে পারেন। ভীম যে তারই নাতির নাতি। কুন্তীর বাবা শূরের মাতামহ হলেন বাসুকি। ভীমকে নিজের পরিচয় দিয়ে তাকে রাজা বুকে টেনে নেন। নিজের সঙ্গীসাথীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “একে অনেক ধনরত্ন এনে দে।”

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

একজন নাগ তখন এগিয়ে এসে বলে, “প্রভু একটা কথা বলি। যদি আপনি খুশিই হয়ে থাকেন, তাহলে ধনরত্নের কি প্রয়োজন?”

বাসুকি তার দিকে চাইলেন। সে বলে চলে, “ওকে বরং আমাদের রসকুণ্ডের কাছে নিয়ে যাই?”

রাজা রাজি হয়। এ প্রস্তাব ভোজনরসিক ভীমেরও খুব পছন্দ হয়। সে নাগেদের সাথে এসে স্নান-পূজা সেরে পূবদিকে মুখ করে বসে। তারপর এক নিঃশ্বাসে একটি কুণ্ডের রস পান করে ফেলে। একে একে সর্বমোট আটটি কুণ্ড শেষ করে ফেলে সে। তারপর নাগেদের বিছানায় শুয়ে একেবারে গাঢ় ঘুম দেয় টানা আট দিন।

এদিকে প্রমানকোটি থেকে ফিরে যুধিষ্ঠির আর অন্যান্য ভাইয়েরা ভীমের খোঁজ করতে থাকে মায়ের কাছে। যুধিষ্ঠির কুন্তীকে জিজ্ঞাসা করে, “মা ভাই এখনও আসেনি?”

উদ্বিগ্ন কুন্তী জানায়, “তোদের সাথেই তো ছিল। কোথায় গেল সে?”

যুধিষ্ঠির জানায়, “না ওকে তো দেখতে পাইনি। ভাবলাম আগে চলে এসেছে।”

উদ্বিগ্ন কুন্তী দেওর বিদূরকে ডেকে পাঠান এবং বিদূর যুধিষ্ঠিররা মিলে ভীমকে অনেক জায়গায় খুঁজে বেড়ায় কিন্তু পায়না। তখন কুন্তী ভয় পায় দুর্যোধন নিশ্চয়ই তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। সে কথা তিনি বিদূরকে জানান। কিন্তু বিদূর তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে , ” আপনি চিন্তা করবেন না। মহামুনি ব্যাসদেব স্বয়ং যে বলেছেন আপনার ছেলেরা দীর্ঘজীবী হবে। তাঁর কথা কি করে মিথ্যে হয়।”

কিন্তু কুন্তীর চিন্তা কমে না।

এদিকে সেই রস পান করে ভীম যে ঘুমিয়েছিল তার ঘুম ভাঙে অষ্টম দিনে। রসের প্রভাবে তার শরীরে এখন হাতির বল। নিশ্চিন্তমনে বিছানায় উঠে বসে ভীম। কিন্তু চিন্তা হয় নাগরাজ বাসুকির। ভীমকে এসে তিনি বলেন,” বাবা ভীম, তুমি এতদিন বাড়ির বাইরে আছো। তোমার মা, ভাই কেউ জানেনা কোথায় আছো। ওরা খুব চিন্তা করছে নিশ্চয়ই। আমার মনে হয় এবার তোমার ফিরে যাওয়া উচিত।”

ভীম স্নান করে খেয়েদেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। নাগেরা তাকে হস্তিনাপুরের প্রান্তে ছেড়ে দিয়ে আসে। বাড়ি ফিরেই সে দুর্যোধনের ব্যাপারে জানায়। কিন্তু যুধিষ্ঠির একথা আর কাউকে না বলতে বলে তাকে।

তথ্যসূত্র


  1. "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (২১। ভীমের নাগলোক দর্শন)  পৃষ্ঠাঃ ৪৭-৪৯
  2. "কৃষ্ণা, কুন্তী ও কৌন্তেয়", আনন্দ পাবলিশার্স, নবম মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ ভীম, পৃষ্ঠাঃ ১৬৬-১৭২
  3. http://kashidashimahabharat.blogspot.in/2016/02/bhima-in-nagloka.html?m=1
  4. https://vedapuran.wordpress.com/short-stories/stories-from-early-puru-vansh/bheem-vi/

 

আপনার মতামত জানান