যে কোন শিশু, হতে পারে মানুষ কিংবা যেকোনো প্রাণী ,জন্মের পরই থেকেই কিন্তু হাঁটতে শেখে না। প্রথম প্রথম হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়, তারপর আবার উঠে হাঁটার চেষ্টা করে। এরপর যখন সে হাঁটা শেখে তরতর করে হাঁটতে থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে হাঁটবার সময় না মানুষ, না কোন প্রাণী কেউই কিন্তু পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটে । হাঁটে সামনের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু কি করে পারি আমরা সম্পূর্ণভাবে চোখের শাসন উপেক্ষা করে সামনের দিকে তাকিয়ে অনায়াসে হাঁটতে দৌড়তে?এ বিষয়ে সমস্ত ধন্যবাদ কিন্তু প্রাপ্য আমাদের শরীরের বিশেষ এক শারীরবৃত্তীয় ক্ষমতার। নাম- প্রোপ্রিওসেপশন।
ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি আমাদের শরীরে পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আমরা বাইরে থেকে আসা উত্তেজনায় সাড়া দিই। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের নামও আমাদের সবার জানা- চোখ, নাক, কান, জিভ এবং ত্বক।কিন্তু যেটা আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের এই চেনা পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বাইরে আমাদের শরীরে ভেতরে আরও একটি অত্যন্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে যার সাহায্যে আমরা আমাদের শরীরে কোথায় কোন অঙ্গ রয়েছে সেটা বুঝতে পারি তাও আবার না দেখেই, না তাকিয়েই। প্রাণী শরীরের এই না তকিয়েই অবস্থান বুঝতে পারার ক্ষমতাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন- প্রোপ্রিওসেপশন।
প্রোপ্রিওসেপশন আমাদের রোজকার জীবনে এমন নীরব অথচ অবিচ্ছেদ্য অংশ যে আমরা খেয়ালই করিনা এর উপস্থিতি আলাদা করে। অথচ এই প্রোপ্রিওসেপশনের অনুপস্থিতিতে আমরা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের এমন অনেক সাধারণ কাজ করতে পারবনা যা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। যেমন পায়ের দিকে না তাকিয়ে হাঁটা, চোখ বন্ধ সত্ত্বেও শরীরের যে কোন অঙ্গ কোথায় অবস্থিত তা বুঝতে পারা ইত্যাদি।এই কারণেই অনেক বিজ্ঞানী একে ‘ষষ্ঠেন্দ্রিয়’ বলে থাকেন।
প্রোপ্রিওসেপশন শরীরকে এক সাথে একইসময় দুটো কাজ করতে সাহায্য করে কোন একটি কাজের জন্য আলাদা করে চিন্তা ভাবনার অবসর না দিয়েই।খেয়াল করুন মেসি যখন বল নিয়ে কাটিয়ে কাটিয়ে এগিয়ে যায় পায়ের দিকে না তাকিয়েই কিংবা বল মাটিতে ড্রপ করাতে করাতে বাস্কেটবল প্লেয়ারের এগিয়ে যাওয়া।প্রোপ্রিওসেপশনের কেরামতি না থাকলে আমরা এত মসৃণভাবে অনায়াসে হেঁটে যেতে পারতে পারতাম না।
প্রোপ্রিওসেপশন কাজ করে তখনই যখন শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সাথে শরীরের অন্যান্য পেশী, টিস্যু, টেন্ডন, লিগামেন্ট সব এক সমন্বয়ে কাজ করতে পারে।এই টিস্যুগুলোর মধ্যে সংবেদনশীল বিভিন্ন অঙ্গ থাকে যাকে প্রোপ্রিওসেপটর বলে।
আমরা যখন হাঁটি তখন আমাদের শরীরে থাকা এই প্রোপ্রিওসেপটর বুঝতে পারে কখন কোন পেশী সংকুচিত হচ্ছে আর কখন প্রসারিত।পেশী প্রসারিত হয় যখন তখন এই পেশীতে থাকা ‘মাসল স্পিন্ডল’ ও প্রসারিত হতে থাকে।একই ভাবে পেশী সংকুচিত হলে তার সাথে সাথে ‘মাসল স্পিন্ডল’ ও সংকুচিত হয়। এইবার এই পেশীতে থাকা বিভিন্ন স্নায়ু তন্তুর মধ্যে দিয়ে কি হারে এবং কতটা মাসল স্পিন্ডল সংকুচিত হয়েছে সেই তথ্য স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্র এবার হাঁটবার জন্য কোন পেশীর সংকোচন এবং কোন পেশীর প্রসারণ প্রয়োজন সেই ব্যাপারে যাবতীয় নির্দেশ পাঠিয়ে দেয় পেশীতে পেশীতে।এভাবেই আমরা প্রতিটা স্টেপ ফেলে হেঁটে যাই কিংবা দৌড়ই।ভেবে অবাক লাগে এই এত জটিল প্রক্রিয়াটা কিন্তু এক মিলি সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
তথ্যসূত্র
- https://www.sports-health.com/
- https://en.wikipedia.org/wiki/Proprioception
- https://www.sciencedirect.com/topics/neuroscience/proprioception
- https://www.the-scientist.com/features/proprioception-the-sense-within-32940
