গরমের সময় একটু ঠান্ডা হাওয়াতে শরীর জুড়িয়ে নিতে আজকাল অনেকেরই মনে হয় একটু এসি ঘরের মধ্যে ঢুকতে পারলে ভাল হত। গরমে এসি বাস, ট্যাক্সিও আজকাল অনেকেই ব্যবহার করেন। কখনও ভেবেছেন এসি, ঘর ঠান্ডা করে কীভাবে? আর এই ঘরের গরম (তাপ) নিয়েই বা সে যায় কোথায়? আজ আমরা জেনে নেব এসি কীভাবে কাজ করে। আর সেই সঙ্গে জেনে নেব শীতকালে বা শীতের দেশে এসি ঘরকে গরমই বা রাখে কীভাবে।
স্কুলের ভৌতবিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলেন ‘শক্তির সংরক্ষণ সূত্র’ – শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, কেবল মাত্র এক রূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তরিত করা যায়। একই ভাবে ঘরকে ঠান্ডা করতে হলে এর মধ্যে থাকা তাপশক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে, নয়তো ঘর থেকে যেকোন ভাবে বের করে দিতে হবে। তাপশক্তি হারালে একমাত্র তখনই তাপমাত্রা কমতে থাকবে অর্থাৎ ঘর ঠান্ডা হবে।
এসি বা বাতানুকুল যন্ত্রের গঠন কাঠামো অনেক প্রকার হতে পারে। আমরা এইচ ভি এ সি (HVAC-heating and ventilation air conditioning units) এর কার্যনীতি নিয়ে আলোচনা করব। এই ধরণের এসির মূলত দুটো অংশ থাকে – ইনডোর ইউনিট বা ঘরের ভিতরে থাকা অংশ এবং আউটডোর ইউনিট বা ঘরের বাইরে থাকা অংশ।

বিষয়টি সহজে বোঝানোর জন্য বাতানুকুল যন্ত্রের একটি সাধারণ ছবি দেওয়া হল। কোন অংশে কী কাজ হয় বোঝানোর জন্য এখানে বন্ধনীতে সংখ্যা দিয়ে দেওয়া হল যা ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিলে সহজে বোঝা যাবে। নীল রঙ দিয়ে ঠান্ডা ও লাল দিয়ে গরম বোঝানো হয়েছে (বাতানুকুল যন্ত্রের সাহায্যে গরম করলে সামান্য পার্থক্য হবে)।
ইনডোর ইউনিটের নীচের দিকে থাকা গ্রিল, ঘরের ভিতরের গরম বাতাস টেনে নেয় (১)। এরপর এই গরম বাতাস একটি শীতল পাইপের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় যার মধ্যে কুল্যান্ট থাকে (২)। এখানে একটা আদ্রর্তা কমানোর যন্ত্র ডিহিউমিডিফায়ার থাকে যা অতিরিক্ত আদ্রর্তা বাতাস থেকে শুষে নেয়। এই জন্যই এসির হাওয়া শুষ্ক হয়। যে সমস্ত এসি শীতকালে ঘর গরম করতে পারে কেবল তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে এই বাতাস একটা হিটারের উপর দিয়ে চালনা করা হয় (অনেকটা হেয়ার ড্রায়ার যেভাবে কাজ করে) যা প্রয়োজনে বাতাসকে গরম করে (৩)। সাধারণ এসিতে ওই শুষ্ক শীতল বাতাস এর পর ইনডোর ইউনিটের উপরের দিকে থাকা গ্রিলের মাধ্যমে ফ্যানের সাহায্যে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে (৪)। এই ভাবে ঘর ক্রমাগত ঠান্ডা হতে থাকে। এখানে একটা থার্মোস্ট্যাট থাকে যা কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় পৌঁছে গেলে বায়ু শীতল করার পদ্ধতিকে কিছুক্ষণ বন্ধ রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় শুরু করে। ওদিকে পাইপের ভিতরের শীতল কুল্যান্ট ঘরের তাপ শোষণ করার ফলে শীতল তরল থেকে গরম গ্যাসে পরিবর্তিত হয়ে যায় (২)। বাইরের ইউনিটে থাকা সরু ধাতব জালির মাধ্যমে এই তাপ তাড়াতাড়ি বাইরের পরিবেশে বেরিয়ে যায়। এই পদ্ধতিকে দ্রুত করার জন্য আউটডোর ইউনিটে একটা পাখা (৬) জোরে ঘুরতে থাকে যাতে বাইরের অংশে গরম হাওয়া বের হয়। এরপর এই গ্যাস কম্প্রেসার এবং কনডেনসিং পাইপের মধ্যে দিয়ে চালিত হয় (৫)। ঘরের গরম বাতাস থেকে নেওয়া তাপকে বাইরে থাকা আউটডোর ইউনিট পরিবেশে ছেড়ে দেয় (৭) এবং কুল্যান্ট আবার ঠান্ডা হয়ে তরল অবস্থায় পাইপের মাধ্যমে ফিরে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে এবং ঘরের তাপমাত্রা কমতে থাকে।
One comment