পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে নদীয়া একটি অন্যতম জেলা। উত্তরে মুর্শিদাবাদ জেলা,দক্ষিণে অবস্থান করছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা , পূর্ব দিকে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ এবং পশ্চিমে হুগলি ও বর্ধমান জেলা অবস্থিত।
বাংলার ইতিহাসে নদীয়া একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ।প্রাচীন বাংলায় এটি গৌড়ের অধীনস্থ এক জনপদ ছিল।নদীয়ার উল্লেখ প্রাচীনকালের বিভিন্ন বিদেশী পর্যটকদের রচনায় পাওয়া যায়।এখন এই জনপদের নাম নদীয়া হল কিভাবে সে বিষয়ে মতান্তর রয়েছে যথেষ্ট।একটি মত অনুযায়ী বহু নদী এই অঞ্চলে এসে সাগর সঙ্গমে মিশেছে বলেই এই অঞ্চলের নাম নদীয়া হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিকই মনে করেন নবদ্বীপ নাম থেকেই নদীয়া নামের সৃষ্টি হয়েছে।এ প্রসঙ্গে কবি নরহরি চক্রবর্তী তাঁর ‘ভক্তি রত্নাকর’ গ্রন্থে বলেছেন –
নদীয়া পৃথক গ্রাম নয়।
নবদ্বীপে নবদ্বীপ বেষ্টিত যে হয়।
নয়দ্বীপে নবদ্বীপ নাম।
পৃথক পৃথক কিন্তু হয় এক গ্রাম।
কবির ধারণা অনুযায়ী ‘নয়টি’ দ্বীপের(অন্তর্দ্বীপ,সীমন্ত দ্বীপ, গোদ্রুম দ্বীপ, মধ্যদ্বীপ, কোলদ্বীপ,ঋতুদ্বীপ, জম্বুদ্বীপ, মোদদ্রুম দ্বীপ ও রুদ্র দ্বীপ) সমাহার হল নবদ্বীপ’।এখন এই ‘নয়দ্বীপ’ নাম থেকে নদীয়া নামটি এসেছে এ ধারণা অনেকেই পোষণ করেন।ঠিক কি যুক্তিতে এই ধারণা করা হয়েছে তার অনুসন্ধান করলে যে যুক্তিটি উঠে আসে সেটি হল – ‘নয়টি দিয়া(প্রদীপ) জ্বেলে এক তান্ত্রিক যে দ্বীপে সাধনা করতেন সেই তারই নাম পরবর্তীতে নদিয়া (নয়+দিয়া) হয়েছে।
দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র তাঁর ‘ক্ষিতিশ বংশাবলী চরিত’ গ্রন্থে নবদ্বীপ থেকেই নদীয়া নামের উৎপত্তির সমর্থনে নিজের অভিমত প্রকাশ করেছেন।
আবার ঐতিহাসিক মিনহাজউদ্দিন সিরাজের মতে ‘নব’ অর্থাৎ ‘নও’ যার অর্থ ‘নতুন’ এবং ‘দ্বীপ’ যা কিনা “দিয়াহ’ মানে ‘জলবেষ্টিত স্থান’, ফারসি
উচ্চারণে এটাই সম্মিলিত ভাবে দাঁড়ায় ‘নওদিয়াহ’। বাঙালি উচ্চারণের শেষে ‘হ’ উচ্চারণ করে না,যার ফলে ‘নওদিয়াহ’ হল নওদিয়া আর তা থেকে নদিয়া। যে স্থানের নাম নবদ্বীপ ছিল তুর্কি আক্রমণের পর তাই নদিয়া হয়ে গেল।
তথ্যসূত্র
- http://shodhganga.inflibnet.ac.in/jspui/bitstream/10603/213417/4/04_chapter%201.pdf
- https://bn.wikipedia.org
- পায়ে পায়ে নদীয়া, পরশপাথর পাবলিকেশন
