নবান্ন উৎসব যা মকর সংক্রান্তি নামেই বিশেষ পরিচিত ভারতে অঞ্চল ভেদে এই উৎসবের নামকরণ আবার বিভিন্ন রকম।তামিলনাড়ুতে এই মকর সংক্রান্তি ‘পোঙ্গল’ নামেই পরিচিত।তামিল শব্দ ‘পোঙ্গল’ মানে উৎসব। ‘পোঙ্গল’ শব্দের যথাযথ অর্থ হল ‘প্রাচুর্য’ বা ‘উপচে পড়া।তবে তামিল এবং তেলেগু, দুই ভাষাতেই পোঙ্গল কথার আরেকটি অর্থ হল, হাঁড়িতে ভাত সেদ্ধ করা। ‘পোঙ্গল’ একটি খাওয়ার পদও — চাল, মুগ ডাল, দুধ, ছোট এলাচ, কিসমিস, তালের গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি পদ।
তামিলনাড়ুতে মহা সমারোহের সাথে পোঙ্গল উদযাপন করা হয়ে থাকে। পৌষ মাসের শেষ দিনে শুরু হয়ে পরের মাসের (তামিলরা সেই মাসটিকে বলেন ‘থাই’) তৃতীয় দিন অবধি পোঙ্গল উদযাপন চলে। তেলুগু অঞ্চলেও এই উৎসব চার দিনের। পঞ্জাবের লোহরি’র মতোই পোঙ্গলেও প্রথম দিনে কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালানো হয় এবং সেই আগুনে পুরনো কাপড়চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র উৎসর্গ করা হয়।এর পরের দিন দুধের সাথে গুড় মিশিয়ে তার সাথে নতুন ‘ভাজা’ চাল এবং মুগডাল ফোটানো হয়, যতক্ষণ না সেই দুধ উথলে ওঠে। এই দিন দুধ ওথলানোকে শুভলক্ষণ বলে গণ্য করা হয়, তাই সবাই উচ্চকণ্ঠে ‘পোঙ্গালো পোঙ্গল’ বলে হর্ষ প্রকাশ করেন’।
এই উৎসব সম্পূর্ণতা পায় না জালিকাট্টু ছাড়া।এই জালিকাট্টু হল আরেকটি বড় উৎসব হয় যেটি বিখ্যাত ষাঁড়কে বাগে আনার প্রতিযোগিতা।দুটি তামিল শব্দ ‘জাল্লি’ ও ‘কাট্টু’ মিলে জাল্লিকাট্টু শব্দটি তৈরি। জালি’র মানে হল স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা। আর ‘কাট্টু’ মানে বেধে দেয়া। এক অর্থে যেটা দাঁড়ায় ষাঁড়ের শিংয়ের সঙ্গে সোনা বা রূপোর মুদ্রাভর্তি থলি বেধে দেয়া। যে ব্যক্তি ষাঁড়টিকে হারাতে পারবে পুরস্কার স্বরূপ এই মুদ্রা ভর্তি থলি তার প্রাপ্য। আর ষাঁড়টি যদি বিজয়ী হয় তাহলে তাকে রেখে দেয়া হয় প্রজননের জন্য। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে তামিল সংস্কৃতির অংশ এই খেলা।