ভারতীয় সংবিধানের একবিংশ অংশ (Part XXI), যা সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা সম্পর্কিত, তারই একটি অনুচ্ছেদ ৩৭০, যা আর্টিকেল ৩৭০ নামে পরিচিত। এই অনুচ্ছেদ কাশ্মীর সম্পর্কিত এবং এর ভিত্তিতেই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আর্টিকেল ৩৭০ এবং আর্টিকেল ৩৫এ মিলিতভাবে কাশ্মীরের বাসিন্দারের ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাশ্মীর রাজ্যের বাসিন্দারা পৃথক আইনের অধীনে বাস করেন, যার মধ্যে তাদের নাগরিকত্ব, সম্পত্তির মালিকানা বা মৌলিক অধিকার এই সমস্ত কিছুই পড়ে।
১৯৪৭ সালে এই ৩৭০ ধারার খসড়া প্রস্তুত করেন শেখ আবদুল্লা। জম্মু কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী মহারাজা হরি সিংহ এবং জওহরলাল নেহরু তাঁকে নিয়োগ করেন। তবে শেখ আবদুল্লা অস্থায়ী ভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না, বরং স্থায়ী ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। যদিও কেন্দ্র তাঁর সেই দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও ৩৭০ ধারা বলে জম্মু-কাশ্মীর ছিল আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য, যদিও সেই স্বায়ত্তশাসন ছিল ‘অস্থায়ী’।
আর্টিকেল ৩৭০- এর ফলশ্রুতিতে কি কি হয়েছে জানার আগে আমরা দেখে নেব মূল অনুচ্ছেদ-এ কি ছিল। কোন রকম বিতর্ক এড়াতে মূল অনুচ্ছেদটি ভারতের সরকারিভাবে প্রকাশিত নথি থেকে ছবি তুলে ধরা হল –
এখানে বলা হয় ২৩৮ ধারা জম্মু কাশ্মীরে প্রয়োগ করা যাবে না। আবার ১৯৫৬ সালে সংবিধানের ২৩৮ ধারা উঠে যায়। এই ধারায় দেশীয় রাজ্যগুলি (প্রিন্সলি স্টেট) তুলে দিয়ে সাধারণ রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই সময়ও জম্মু কাশ্মীরকে এর বাইরে রাখা হয়। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হলেও তা তুলে দিয়ে সাধারণ প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। আর্টিকেল ৩৭০ কাশ্মীরে ভারতের সংবিধানের সম্পূর্ণ প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান থাকার অনুমতি দেয়। আর্টিকেল ৩৭০ অনুযায়ী কাশ্মীরে কেন্দ্রের ক্ষমতা কেবল প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় এবং যোগাযোগ এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এও বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য সাংবিধানিক ক্ষমতা কেবল রাজ্য সরকারের সম্মতিতেই রাজ্যে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই ‘সম্মতি’ও অস্থায়ী বলা হয় এবং এটি রাজ্যের গণপরিষদ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। কিন্তু গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৭-তে।
আপনার মতামত জানান