ভস্মে ঘি ঢালা

ভস্মে ঘি ঢালা

আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট ভাষা যার শব্দ ও সাহিত্য ভান্ডার অপরিসীম। যেকোন উৎকৃষ্ট ভাষার একটি প্রধান সম্পদ হল প্রবাদ ইংরাজিতে যাকে বলে proverb। বাংলা ভাষায় প্রাচীনকাল থেকেই অনেক প্রবাদ লোকমুখে বা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। এরকমই একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হল “ভস্মে ঘি ঢালা”। যে কাজে ফলের আশা নেই পরিশ্রম করাটাই বৃথা অর্থাৎ পণ্ডশ্রম, সেই ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

যজ্ঞ বা সেই জাতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হোমকুণ্ডের আগুনে ঘি দেওয়া হয়, ফলে হোমের অগ্নি শিখা আরও বৃদ্ধি পায়৷ দাহ্যবস্তু ঘি এর সহায়তায় সহজে পুড়ে যায়৷ আগুনে ঘি দিয়ে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতাদের আহুতি দেওয়া হয়। সব বস্তু যখন পুড়ে ছাই হয়ে যায় তখন আর ঘি এর প্রয়োজন হয় না। তারপরেও ঘি ঢাললে অর্থাৎ ভষ্মে ঘি ঢাললে সেটি অপচয় হয় এবং তা আসলেই পণ্ডশ্রম। কেউই চায় না অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন কোন কাজ করতে বা অপচয় করতে।

এই প্রবাদটি নিয়ে একটি প্রাচীন গল্প প্রচলিত আছে৷ এক ব্যক্তি কিছুদিনের জন্য কাজের সূত্রে বাইরে যায়৷ বাড়ি ফিরে এসে সে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে, “সঞ্চয় করেছ?  ঋণী করেছ?  ভস্মে ঘি ঢেলেছ?” অর্থাৎ অতিথি সেবা করে পূণ্য সঞ্চয় করেছে কিনা, পুত্রকে খাইয়ে পরিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ঋণী করেছে কিনা এবং কন্যাকে লালন পালন করে ভস্মে ঘি ঢেলেছে কিনা। কন্যা সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানের প্রতি বেশী আদরযত্নের রেওয়াজ এ দেশে চিরকাল৷ তাই কন্যাসন্তানকে লালন পালন করা তখনকার দিনে ভস্মে ঘি ঢালা বা অপচয় মনে করা হত৷ যদিও বর্তমান সমাজে আমরা বুঝে গেছি এ ধারণা ভুল এবং অনেকেই পুত্র ও কন্যাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেন।

উদাহরণ – যখন চাকরির বয়স ছিল তখন রকে বসে আড্ডা মেরে কাটিয়েছো, এখন চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর যতই ছোটাছুটি করো, সে সব ভস্মে ঘি ঢালা হবে।

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ১১২ পৃঃ

আপনার মতামত জানান