দুর্যোধনের জন্ম মহাভারতে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মহাভারতের যুদ্ধে তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলা যায়। গান্ধারীর যে শতপুত্রের জননী হয়েছিলেন, দুর্যোধন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন।
ব্যাসদেব একদা গান্ধারীকে বর দিয়েছিল সে শতপুত্রের জননী হবে। তার বরে খুব খুশী ছিল গান্ধারী। তাছাড়া সে কুন্তীর আগেই গর্ভবতী হয়েছিল। এতে তার, বিশেষ করে ধৃতরাষ্ট্রের খুশি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছিল অনেকটাই। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেল, তার কোনও সন্তান ভূমিষ্ঠ হল না। এবার যেন ধৈর্যশীলা গান্ধারী অধৈর্য হতে শুরু করল, মনের মধ্যে তার শুরু হল ছটফটানি। তার মধ্যে কুন্তীও গর্ভবতী হল, আর গান্ধারীর ছটফটানি যেন বেড়ে গেল আরও। অবশেষে যখন সে শুনল যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়েছে, তার সব ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল। সে আগে গর্ভবতী হয়েও, সন্তানলাভ আগে কুন্তীই করল! তাহলে যে ব্যাসদেব তাকে বর দিয়েছিল সে নাকি শতপুত্রের জননী হবে, কি হল তার?
অভিমানে, রাগে, দুঃখে আর সবচেয়ে বেশি ঈর্ষা আর হিংসায় সে কাউকে কিছু না জানিয়ে গর্ভপাত করে ফেলল। গর্ভপাতের ফলে লোহার মত শক্ত মাংসপিণ্ড বেরিয়ে এল তার গর্ভ থেকে। সেই মাংসপিণ্ড সে ফেলেই দিচ্ছিল, কিন্তু খবর পেয়ে এল ব্যাসদেব।
“আমার আশীর্বাদ মিথ্যে হবে না।”, ব্যাসদেব বলল। তারপর ওনার নির্দেশে শীতল জলের পাত্র আনা হল। সেই পাত্রে মাংসপিণ্ডটিকে ভিজিয়ে রাখা হল। কিছুকাল পরে সেটা থেকে আঙুলের সমান একশো একটা ভ্রূণ আলাদা হল। তখন ব্যাসদেব একশো একটি ঘিয়ের কলশী আনলেন আর তাতে ভ্রূণগুলোকে ভিজিয়ে রাখলেন। এক বছর পরে একটা কলশী থেকে জন্ম নিল দুর্যোধন। সেই একই দিনে জন্মগ্রহণ করে পাণ্ডুপুত্র ভীম।
দুর্যোধন জন্মানোমাত্র গাধার মত চিৎকার করে উঠল। সঙ্গে ডেকে উঠল শিয়াল-কাক এবং দেখা দিল অন্যান্য কিছু দুর্লক্ষণ। ধৃতরাষ্ট্র ভয় পেয়ে বিদূরকে জিজ্ঞেস করল, “পাণ্ডুর বড় ছেলে যুধিষ্ঠির তো রাজা হবে। কিন্তু তার পরে তো আমারা পুত্রই রাজা হবে, হবে তো?”
এক বছরের ব্যবধানে জন্মানো দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই না থাকলে ছোট ভাই রাজা হবে তো, এই প্রশ্নের অর্থ কি এটাই নয় যে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরের মৃত্যুর কথা ভেবেছিল! পুত্রস্নেহে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের এই যে মনের কালো দিক, সেটাও দেখতে পাওয়া যায় দুর্যোধনের জন্মের শুরুর মুহূর্তে।
যাই হোক, বিদূর জবাব দিল, “না মহারাজ! এ ছেলে আপনার বংশ ধ্বংস করবে। একে ত্যাগ করুন।”
তথ্যসূত্র
- "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (২০। যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম - পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু) পৃষ্ঠাঃ ৪৬-৪৭
- "মহাভারতের একশোটি দুর্লভ মুহূর্ত", আনন্দ পাবলিশার্স, পঞ্চম মুদ্রণ - ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যায় ১৩ অভিশপ্ত পাণ্ডু, পৃষ্ঠাঃ ৭৩
- "মহাভারতের অষ্টাদশী", আনন্দ পাবলিশার্স, চতুর্থ মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ গান্ধারী, পৃষ্ঠাঃ ১৬৭-১৭২
3 comments