ক্যানোনিকাল পারস্পেক্টিভ

সেলফি তো তুললেন।সে ‘পাউটওয়ালা’-ই হোক আর ‘স্মাইলওয়ালা’-ঠিক তেমন যেন পারফেক্ট লাগছে না।নতুন কেনা ক্যামেরায়, মোবাইলটাকে টেবিলে রেখে কায়দা করে তুললেন বটে,কিন্তু তেমন যেন হল না।রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে তাই যখন মকটেল এর গ্লাসটার ছবি তুললেন,কিছুতেই যেন ‘pro’ ব্যাপারটা আসছে না। তেতো হয়ে যাওয়া মনটাকে সান্ত্বনার ছোঁয়া দেওয়ার আগে, আসুন পরিচয় করিয়ে দিই এক অভিনব পরিভাষার সাথে।ক্যানোনিকাল পারস্পেক্টিভ (Canonical Perspective)।

১৯৮১ সালে স্টিভেন পামার, এলেনর রস ও পল বেজ এই তিন বিজ্ঞানী মিলে এক গবেষণায় এই তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন।এঁরা গবেষণায় দেখতে পান আমরা, প্রতিটা মানুষ যে কোন বস্তুকে দেখি একটি বিশেষ কোণ থেকে।শুধু দেখি না, ভাবতে বললে,কল্পনা করতে বললেও আমরা সেই নির্দিষ্ট কোণ থেকেই তা করব।বস্তুটিকে আমরা তার আসল উচ্চতা থেকে সামান্য ওপরে একটু পাশ থেকে দেখি।ঠিক এই উচ্চতা যিনি দেখছেন এবং যাকে দেখছেন তার মধ্যে ৪৫° কোণ তৈরী করে।আমাদের রোজকার জীবনে যা কিছু আমরা সারাদিন দেখি তার বেশিরভাগই এই কোণ বরাবর দেখি।

ধরা যাক আমাদের একটা চায়ের কাপ আঁকতে দেওয়া হল।প্রথমবার আঁকব যখন তখন অবশ্যই এমন ভাবে আঁকব যে কাপের প্রান্তভাগ থেকে সামান্য ওপরে ও পাশ থেকে।কিন্তু কখনোই সরাসরি ৯০°কোণ বরাবর আমরা আঁকব না।

বিজ্ঞানীদের মতে ৪৫° এমন বিশেষ একটা কোণ যেখানে কোন বস্তুর সাপেক্ষে পৃষ্ঠতলের সবথেকে বেশি পরিমান অংশের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।৪৫°-ই একমাত্র কোণ যে কোণে কোন বস্তুর থ্রি-ডাইমেনশনাল ছবি যথাযত ভাবে আমাদের চোখে ধরা দেয়।সেলফি হোক কিংবা শখের ফটোগ্রাফি, পেশাদার আর অপেশাদার হাতের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় এই ৪৫°।আমাদের কিন্তু সবার এই রহস্য জানা আছে।আর জানা আছে বলেই আমরা বিভিন্ন কোণ বরাবর ছবি তুলে ঠিক কোন কোণ টায় ছবিটা সবচেয়ে সুন্দর লাগছে সেটা বুঝতে পারি।

এতদিন শুধু জানতাম না এর নামটা। আমাদের সবার কম্পিউটারে রিসাইকেল বিনের যে আইকন, কিংবা ফটোশপ এর যে লোগো সব কিন্তু এই সূত্র মেনে তৈরি। বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ সুশান ওয়েনচিক এর মতে এই কোণ থেকেই কোন বস্তুকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগে।সুতরাং আর দেরি কেন, পরের সেলফিটা তোলার সময় কেবল এই তত্ত্বটা মেনে চলুন।সেলফিস্তানের রাজা কিংবা রানী হওয়া থেকে কে আটকায় আপনাকে দেখি।

আপনার মতামত জানান