চড়ক চৈত্র মাসের একটি জনপ্রিয় লোক উৎসব। এটি গাজন উৎসবের একটি বিশেষ অঙ্গ। চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিনে চড়ক উৎসবের মাধ্যমে গাজনের সমাপ্তি হয়।
চড়ক পূজার আগের দিন একটি গাছকে ধুয়ে পরিস্কার করা হয় এবং সেটিকে একটি জলভরা পাত্রে শিবের প্রতীক হিসাবে পূজার উদ্দেশ্য রাখা হয়।পূজারীরা এই চড়ক গাছটিকে “বুড়ো শিব” বলে থাকেন। এই চড়ক গাছে শিব ভক্তদের লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সাথে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘোরানো হয়। শিব ভক্তদের হাতে,পায়ে,জিহ্বায় লোহার সিক দিয়ে বিদ্ধ করা হয়। জ্বলন্ত কয়লার উপর হাঁটা, কাঁটা বা ছুরিজাতীয় জিনিসের ওপর ঝাঁপ দেওয়া এইগুলি চড়ক পূজার অঙ্গ। চড়ক পূজার আগের দিন নীলচন্ডিকার পূজা করা হয় যা নীল পূজা নামে পরিচিত।
চড়কের দিন সন্ন্যাসীরা বিশেষ রকমের ফল,ফুল দিয়ে বাজনা বাজিয়ে শিব ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করেন। শিবের প্রতি ভক্তি -শ্রদ্ধা দেখিয়ে ওই দিন তারা নানারকম ঝাপ প্রদর্শন করেন। যেগুলি “বঁটিঝাঁপ ” “কাঁটা ঝাঁপ ” “ঝুল ঝাঁপ ” নামে পরিচিত। এইদিন রাতে শিবের উদ্দেশ্যে খিচুড়ি ও শোলমাছ নিবেদন করা হয়। মাঝরাতে শিব আরাধনার সময় একজন সন্ন্যাসী খুব জোরে মাথা ঘুরিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এই অবস্থাকে “দেবতার ভর” বলা হয়। ওই অবস্থায় সন্ন্যাসীদের দর্শনার্থীরা প্রশ্ন করেন এবং তারা যা উত্তর দেন তা দর্শনার্থীদের কাছে বেদবাক্য। এইগুলি সব চড়ক পূজার অঙ্গ। এছাড়াও শরীরে নানারকম যন্ত্রনা দিয়ে তা শিবের উদ্দেশ্য নিবেদন করা এই পূজার বিশেষ অঙ্গ।
চড়কের দিন সন্ন্যাসীদের একটি দল ঢোল-কাঁসর নিয়ে পায়ে ঘুঙুর পরে নৃত্য করার উদ্দেশ্যে বার হয়।তাদের দলে থাকে শিব-পার্বতী সাজা লোক। তারা বাজনার তালে পা মিলিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে নাচ দেখায়। এদের কে “দেল” বা নীল পাগলের দল বলা হয়। নাচ দেখিয়ে তারা যা দান পায় তা তারা পূজার কাজে ব্যবহার করে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা চড়ক সংক্রান্তির মেলা নামে পরিচিত।
পুরানের বর্ণনা অনুযায়ী শিব উপাসক “বাণরাজা দ্বারকাধীশ” কৃষ্ণের সাথে যুদ্ধে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে মহাদেবের কাছে অমরত্ব লাভের আশায় তার গায়ের রক্ত দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করিয়ে ছিলেন এবং মহাদেবের উদ্দেশ্যে ভক্তি ভরে নাচ-গান প্রদর্শন করেছিলেন।সেই থেকেই শিবসম্প্রদায়ের লোকজন চৈত্র মাসে এই চড়ক পূজার আয়োজন করে থাকে।