গড়জঙ্গল

গড়জঙ্গল

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের অদূরে গড়জঙ্গল বলে যে জায়গা আছে, বলা হয় সেই স্থানেই মেধসাশ্রম। এখানেই রাজা সুরথ নাকি বাংলা তথা মর্তে প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন। সেই পুজো আজও হয়ে আসছে।

দুর্গাপুর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে এই গড়জঙ্গল। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সোজা পানাগড় হয়ে দার্জিলিং মোড়। সেখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা পথ। সেখান থেকে বাঁদিকের রাস্তায় এগিয়ে ইছাই ঘোষের দেউল। সেখান থেকে জঙ্গলের মধ্যে ২-৩ কিলোমিটার গেলেই পাওয়া যাবে মেধসাশ্রম। তাছাড়া ট্রেনে এলে দুর্গাপুর এসে সেখান থেকে অনেক বাস বা গাড়ি পাওয়া যায়।

যোগীরাজ ব্রহ্মানন্দগিরি মহারাজ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে বোলপুরে থাকাকালীন জঙ্গলের খুব গভীরে এক মন্দিরের কথা শোনেন এবং ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে গড়জঙ্গলের বর্তমান স্থানে পৌঁছান যেখানে উইঢিপি ঢাকা প্রাচীন মন্দির, অশ্বত্থ, পাকুড় গাছ দেখতে পান। পরবর্তীকালে এখানে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মন্দির ও তার ভগ্নাংশ মেলে। মার্কণ্ডেয় পুরাণের শ্লোক অনুযায়ী এই মন্দির ও এখানে প্রাপ্ত মাটির দুর্গাকেই সুরথ রাজার পুজো করা প্রথম দুর্গা বলে মনে করা হয় এবং মন্দির ও  তার সংলগ্ন আশ্রমকে মেধস মুনির আশ্রম বলে মনে করা হয়।  তবে মন্দিরের ভগ্নাবশেষ থেকে মন্দিরের প্রাচীনত্ব নির্ণয় ঐতিহাসিক গবেষণার দাবী রাখে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

পৌরাণিক এই গল্পগুলো ছাড়াও এখানের পুজোয় কিছু বিশেষত্ব আছে।  এখানে মা দুর্গা অন্যান্য দুর্গাপূজায় যেমন দশভুজা দুর্গা হয়, তেমন নয়। এখানে মা অষ্টভুজা। আবার পুজো শেষে এখানে ‘বন্দে মাতরম্’ উচ্চারণ করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ইংরেজ আমলে অনেক বিপ্লবীই নাকি এই মন্দিরের দেবীকে দেশমাতার রূপে পুজো করত। সেই থেকেই পুজোর সময়ে ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি দেওয়ার এই রীতি চলে আসছে। আবার এও বলা হয় যে , দেবী চৌধুরানিও নাকি এখানে পুজো দিয়েছেন।

এখানে আরও একটি বিখ্যাত মন্দির রয়েছে যেখানে ‘ধর্মমঙ্গল’-এর ইছাই ঘোষ পুজো করতেন। শ্যামারূপা মায়ের মন্দির, যেখানে রয়েছে শ্বেত পাথরের ছোট একটি দুর্গা মূর্তি। বলা হয়, এই মূর্তিতে শ্যাম বা কৃষ্ণ ও দুর্গার রূপ দেখা যায় বলে এর এমন নাম।

আপনার মতামত জানান