প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলির মধ্যেই একটি হল জাতীয় সমাজসেবা দিবস (National Social Service Day)।
প্রতি বছর ২ জানুয়ারি সারা বাংলাদেশ জুড়ে পালিত হয় জাতীয় সমাজসেবা দিবস।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের দুঃস্থ, দরিদ্র, বিপন্ন শিশু, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের কল্যাণ, আর্থসামাজিক বিকাশ এবং মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে এই দিনটিকে জাতীয় সমাজসেবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৬১ সালের ২ জানুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই দপ্তরটি সামাজিক উন্নয়নমূলক নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গৌরবের কারণ হয়ে উঠেছে। সামাজিক উন্নয়নের কাজে সমাজকর্মীদের উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৯ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজসেবা ভবন উদ্বোধনের সময় তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস হিসেবে পালন করার কথা বলেন। বিশেষ এই দিনটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠন, সমাজসেবামূলক কাজকর্মের প্রসার ঘটাতে উৎসাহ প্রদান করে থাকে সমাজকর্মীদের। ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশের এই সমাজসেবা মন্ত্রকের উন্নয়ন এবং সমস্ত কর্মকাণ্ডের ডিজিটাইজেশনের জন্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক অনুদান ধার্য করেছে। জাতীয় সমাজসেবা দিবস উপলক্ষে নানা বছর নানাবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
ক. দরিদ্র পল্লীবাসী মহিলাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
খ. প্রতিবন্ধী উন্নয়নমূলক প্রকল্প
গ. পথশিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ
ঘ. ক্ষুদ্র ঋণ দানের মাধ্যমে স্বনির্ভর সমাজ গঠন
এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুস্থদের ঋণ এবং শীতবস্ত্র বিতরণ, নানা আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোয় দেশের নানা জেলায়। এই বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে বৃহন্নলা, বেদে এবং দলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নানাবিধ প্রকল্প চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৭ সালে ঢাকায় চারদিন ব্যাপী মেলার উদ্বোধন হয়েছে সমাজসেবা দিবস উপলক্ষেই। ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারিতে এক সভায় মানব কল্যাণের পাশাপাশি মানব নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম ঘোষণার দিন এই দিবসের কোনো প্রতিপাদ্য ছিল না। তবে পরবর্তীকালে ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর বিশেষ বিশেষ প্রতিপাদ্য সহকারে এই দিবসটি পালিত হয়ে এসেছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। ২০১৪ সালে এই দিনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সুদমুক্ত ঋণ: ঘোচায় দৈন্য, আনে সুদিন’। ২০১৫ সালে এই দিনটি ‘সমাজসেবার দিন বদলে, এগিয়ে যাব সমান তালে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয়। ২০১৮ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারী পুরুষ নির্বিশেষ সমাজসেবায় গড়বো দেশ’। ২০২০ সালে ২ জানুয়ারি সাড়ম্বরে ‘সোনার বাংলায় মুজিব বর্ষে, সমাজকল্যাণ এগিয়ে চলে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় সমাজসেবা দিবস পালিত হয়েছে। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য হল- ‘ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সেবা ও সুযোগ প্রান্তজনে’।
তথ্যসূত্র
- https://msw.gov.bd/
- https://www.prothomalo.com/
- http://www.theindependentbd.com/
- http://dss.chandpur.gov.bd/
- https://www.risingbd.com/
- http://dss.portal.gov.bd/
- https://dss.gov.bd/
