গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সাথে ধৃতরাষ্ট্রের বিয়ে হয় ধুমধামের সাথে। গান্ধারী সুন্দরী ও শিক্ষিতা হলেও মাতা পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপত্তি না করে জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সাথে বিয়েতে আপত্তি করেননি। বরং তিনি তাঁর অন্ধস্বামীকে অতিক্রম করবেন না এই সংকল্প নিয়ে বিয়ের পর একটুকরো কাপড় দিয়ে নিজের দুই চোখ বেঁধে রাখেন ।
ভীষ্ম এবং তার বিমাতা সত্যবতী কুরুবংশের সন্তান নিয়ে যথেষ্টই চিন্তায় ছিলেন। বিচিত্রবীর্য এবং চিত্রাঙ্গদের অকালমৃত্যুতে তাদের এরকম চিন্তাই স্বাভাবিক। মহারাজ শান্তনুর পর থেকেই কুরুবংশের সিংহাসনে রাজার স্থিতিকাল কমে যাচ্ছে। ভীষ্ম তাই পাণ্ডু এবং ধৃতরাষ্ট্রের জন্য এমন মেয়েকেই আনতে চান, যারা সন্তানধারণের খুব উপযুক্ত। এমন সময় ভীষ্ম খোঁজ পেলেন গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর। গান্ধারী নাকি শিবের কাছে বর পেয়েছে যে সে শত পুত্রের জননী হবে। ভীষ্ম ধৃতরাষ্ট্রের জন্য বিবাহের সম্বন্ধ দিয়ে লোক পাঠালেন গান্ধার রাজ্যে। সঙ্গে এও জানাতে ভুললেন না যে ধৃতরাষ্ট্র কিন্তু জন্মান্ধ। গান্ধাররাজ সুবল এ বিয়েতে রাজি হলেন। গান্ধারীর কাছে যখন খবর গেল, তার হবু স্বামী জন্মান্ধ, তখন হবু স্বামীর জীবনের যন্ত্রণার কথা ভেবেই হোক, অথবা অভিমানেই হোক, একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে ফেললেন নিজের চোখ।
সাধারণত ছেলেরাই মেয়ের বাড়িতে আসে বিয়ের জন্য। কিন্তু অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে এতদূর পথ পেরিয়ে বিয়ে করতে আসা সম্ভব ছিল না। তাই গান্ধারীকেই নিয়ে আসা হল হস্তিনাপুর। সঙ্গে অনেক দাসদাসীর সাথে এল গান্ধারীর ভাই শকুনি। বোনকে ধৃতরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে তখনকার মত ফিরে গেল সে। ভীষ্মের তত্ত্বাবধানে গান্ধারী আর ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ সম্পূর্ণ হল।
তথ্যসূত্র
- "মহাভারত সারানুবাদ", দেবালয় লাইব্রেরী(প্রকাশক সৌরভ দে, তৃতীয় প্রকাশ) - রাজশেখর বসু, আদিপর্ব (১৯। গান্ধারী, কুন্তী ও মাদ্রী- কর্ণ - দুর্যোধনাদির জন্ম) পৃষ্ঠাঃ ৪৩-৪৪
- "মহাভারতের অষ্টাদশী", আনন্দ পাবলিশার্স, চতুর্থ মুদ্রণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অধ্যায়ঃ গান্ধারী, পৃষ্ঠাঃ ১৬৭-১৭২
One comment