বৃন্দাবন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। শাক্তদের কাছে এর গুরুত্ব সতীপীঠ হিসাবে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত বৃন্দাবনে এই সতীপীঠ অবস্থিত। এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর কেশগুচ্ছ পড়েছিল। মতান্তরে বলা হয় এখানে সতীর আংটি পড়েছে। এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম উমা বা কাত্যায়নী এবং ভৈরব ভূতেশ।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন।মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন।সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব এই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য চালু করেন।মহাদেবের তান্ডব নৃত্য পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খন্ডে খণ্ডিত করেন।সেই দেহ খন্ড গুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়। বলা হয় এখানে দেবীর কেশগুচ্ছ পড়েছিল। আবার কোনও মতে এখানে সতীর আংটি পড়েছিল।
বৃন্দাবনে র নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর মন্দির। তবে বৃন্দাবনে কেশীঘাট হলো মায়ের সতীপীঠের এই মন্দিরটি। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জরাসন্ধের জামাই ছিল কংস। কংস কৃষ্ণ আর বলরামকে হত্যা করতে কেশীদৈত্যকে পাঠায়। কেশীদৈত্য বৃন্দাবনে এসে সবাইকে ভয় দেখাতে শুরু করে। একদিন কৃষ্ণ তার সামনে আসে, তখন কেশীদৈত্য আর কৃষ্ণের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। কৃষ্ণ তাকে বধ করে এবং তার স্মরণেই জায়গার নাম হয় কেশীঘাট। বলা হয় এখানেই মায়ের কেশগুচ্ছ পড়েছিল। দেবী এখানে উমা বা কাত্যায়নী রূপে পূজিতা হন। নবরাত্রি পুজোয় ষষ্ঠদিনে এই দেবীর আরাধনা করা হয়। ভক্তেরা বিশ্বাস করে দেবী উমার পূজা করলে রোগ ,শোক ও ভয় দূর হয়। দেবী উমাকে যোগমায়া রূপেও পূজা করা হয়।এই মন্দিরে একটি বড় তলোয়ার রাখা আছে যাকে বলা হয় উচ্ছল চন্দ্রহাস। দেবীর ভৈরব ভূতেশ্বর মন্দিরটি বৃন্দাবনের ভূতেশ্বর রোডের কাছে অবস্থিত।
বর্তমানে সতীর যে মন্দিরটি রয়েছে সেটি যোগীরাজ স্বামী কেশবানন্দ ১৯২৩ সালে স্থাপন করেন। তবে বৃন্দাবন নামের সাথেই কিন্তু আসে কৃষ্ণের নাম। থাকবেনাইবা কেন! বিশ্বাস করা হয় গোটা বৃন্দাবন রাধা কৃষ্ণের প্রেমের সাক্ষী। ভগবত পুরাণ অনুযায়ী গোপীরা কৃষ্ণ কে পাবার আশায় সারা মাঘমাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করতেন। সকালে যমুনার জলে স্নান করে যমুনার তীরে মা কাত্যায়নীর মূর্তি গড়ে ধুপ,দ্বীপ, চন্দন ,ফুল ইত্যাদি পূজার সামগ্রী সহকারে মায়ের পূজা করতেন। শুধু কৃষ্ণের বা সতীর মন্দিরই নয়, বৃন্দাবনে পুজো হয় বিভিন্ন দেবদেবী। এবং সবচেয়ে সুন্দর যে ব্যাপারটা হল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছেই বৃন্দাবন তাদের নিজস্ব ধর্মীয় কারণে পুণ্যভূমি হয়ে উঠেছে। যেমন শাক্ত সম্প্রদায়ের দেবী কাত্যায়নী পুজোর পাশাপাশি শৈব সম্প্রদায়ের ভগবান শিব পূজিত হন। তাছাড়াও ভগবান লক্ষ্মী নারায়ণ ,ভগবান গনেশ , ভগবান সূর্য পুজো পেয়ে থাকেন এখানে। এই পাঁচটি প্রধান দেবদেবীর পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পূজাও করা হয় এখানে।
তথ্যসূত্র
- একান্ন পীঠ, হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়, দীপ প্রকাশন, পৃষ্ঠা ২৪৭, বৃন্দাবনে পড়েছে দেবীর কেশজাল
- https://bn.m.wikipedia.org/wiki/বৃন্দাবন-সতীপীঠ
- https://www.templepurohit.com/hindu-temple/katyayani-peeth-vrindavan-uma-mandir/
One comment