হাতঘড়ির স্ট্র্যাপ ও ব্রেসলেটের রকমফের

হাতঘড়ির স্ট্র্যাপ ও ব্রেসলেটের রকমফের

ঘড়ির দোকানে গেলে দোকানে থরে থরে সাজানো হাতঘড়ি (Wrist Watch) দেখে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কত শত কোম্পানির কত ধরণের এবং কত রঙের যে হাতঘড়ি সাজানো থাকে তার ইয়ত্তা নেই। আমাদের বাড়িতেও তো বিভিন্ন ধরণের কোনটা গোল কোনটা চৌকো কত আকৃতির হাতঘড়ি রয়েছে। হাতঘড়ির যে বিভিন্ন রকম আকৃতি আছে সেটা তো খেয়াল করেছি হাতঘড়ির স্ট্র্যাপ ও ব্রেসলেটের রকমফের রয়েছে যে কত, তাদের নাম রয়েছে কত এবং সেগুলির পিছনে যে একটা মস্ত বড় ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে সেটা আমরা ক’জন খেয়াল করেছি বা জানতে চেয়েছি ! আসুন এই সুযোগে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক হাতঘড়ির স্ট্র্যাপ ও ব্রেসলেটের রকমফের গুলি।

ন্যাটো স্ট্র্যাপ (NATO strap) : ন্যাটো স্ট্র্যাপের প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ১৯৭৩ সালে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের দ্বারা। তখন এই স্ট্র্যাপের শুধুমাত্র একটি সংস্করণ ছিল এবং একটিই রঙই হত – ‘অ্যাডমিরালটি গ্রে’। প্রথমদিকে এই স্ট্র্যাপের নাম ছিল জি -১০ (G-10) কারণ ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সের কোন সদস্যকে এই স্ট্র্যাপ পাওয়ার আগে একটি G-1098 ফর্ম পূরণ করতে হত। এই স্ট্রাপের ন্যাটো নামকরণের সাথে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের কোন সম্পর্ক নেই অবশ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তর বিভিন্ন ধরণের জিনিস সাপ্লাই করার জন্য একটি সর্বসম্মত আলফানিউমারিক (বর্ণ ও শব্দের মিশ্রণে তৈরী বিশেষ সংকেত) কোড হিসেবে এই NATO কথাটি ব্যবহার করত। সেই হিসেবে ঘড়ির স্ট্র্যাপটিও এই নামেই পরিচিত হয়। বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা শন কনারি জেমস বন্ডের চরিত্রে ‘গোল্ডফিঙ্গার’ ছবিটিতে প্রথম এই স্ট্র্যাপ লাগানো রোলেক্স অয়েস্টার মডেলের হাতঘড়ি পড়েছিলেন।

ন্যাটো স্ট্র্যাপ
ন্যাটো স্ট্র্যাপ

অয়েস্টার ব্রেসলেট (Oyster Bracelet) : রোলেক্স হাতঘড়ি মূলত দুটি বিভাগে বিভক্ত: অয়েস্টার এবং সেলিনি। অয়েস্টার বলতে বোঝায় যেকোন মডেলের যেটি ১৯২৬ সালে রোলেক্স কোম্পানি প্রথম সম্পূর্ণ ঝালাই (sealed) করা একটি ঘড়ি তৈরী করে। ঝিনুক (oyster) যেমন জলকে দূরে রাখার জন্য নিজেকে খোলসের মধ্যে সম্পূর্ণ আবদ্ধ করে রাখতে পারে, রোলেক্স অয়েস্টার ছিল বিশ্বের প্রথম জলরোধী (Waterproof) হাতঘড়ি। এই ঘড়ির ব্রেসলেটের ডিজাইনটি যেরকম ছিল পরে সেটিই একটি আলাদা স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে যায় বিশ্বে। রোলেক্স অয়েস্টারের আত্মপ্রকাশের এক বছর পর, ঘড়িটি সারা বিশ্বে একটি বিশেষ কারণে তোলপাড় ফেলে দেয়। মার্সিডিজ গ্লিটজ নামের একজন তরুণ ইংরেজ সাঁতারু যিনি প্রথম ব্রিটিশ মহিলা হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। সাঁতার কাটার সময়ে তাঁর গলায় একটি রোলেক্স অয়েস্টার ঘড়ি ঝোলানো ছিল যা প্রায় দশ ঘন্টা সাঁতারের পরেও অক্ষত ছিল। এই ঘটনাকে উল্লেখ করে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সংবাদপত্র ডেইলি মেইল যে খবরটি প্রকাশ করে তার ছবি নিচে দেওয়া হল

ডেইলি মেলে প্রকাশিত খবর ও অয়েস্টার ব্রেসলেট

প্রেসিডেন্ট ব্রেসলেট (President Bracelet) : এটিও রোলেক্স হাতঘড়ির ব্রেসলেটের আরেকটি ধরণ। এই ধরণের ব্রেসলেটের প্রেসিডেন্ট নামকরণের পেছনে আমেরিকার বহু রাষ্ট্রপতির যোগ আছে বিশেষত রাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনসনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি জনসন একটি হলুদ রঙের ‘রোলেক্স ডে ডেট’ মডেল পড়ার পর থেকে রোলেক্স তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারে ওই ঘড়ির ব্রেসলেটিকে ‘প্রেসিডেন্ট ব্রেসলেট’ নামে প্রচার করতে শুরু করে। এরপর এই প্রেসিডেন্ট ব্রেসলেটের ‘ডে ডেট’ মডেলটির সাথে রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির নামও জড়িত আছে। ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে যে সন্ধ্যায় মেরিলিন মনরো প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে ‘হ্যাপি বার্থ ডে মিস্টার প্রেসিডেন্ট” গানটি গেয়েছিলেন সেই রাতেই তিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে নিজের নাম খোদাই করা একটি ডে ডেট মডেলের ঘড়ি উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট কেনেডি সেটি জীবদ্দশায় কোনদিনই পড়েননি।

প্রেসিডেন্ট ব্রেসলেট ও মেরিলিন মনরোর দেওয়া ঘড়ি জন এফ কেনেডি কে

জুবিলী ব্রেসলেট (Jubilee Bracelet): জুবিলী নাম শুনেই মনে হয় কোন বার্ষিকী উদযাপনের কথা। ১৯৪৫ সালে রোলেক্স কোম্পানির চল্লিশ বছর সম্পূর্ণ হয়। এই উপলক্ষে রোলেক্স একটি নতুন ব্রেসলেট প্রকাশ করে যার নাম দেয় তারা জুবিলী ব্রেসলেট। এই ব্রেসলেটটির বৈশিষ্ট্য ছিল এতে পর পর পাঁচটি লিংক থাকতো। প্রথম যখন এই ব্রেসলেটটির আত্মপ্রকাশ হয় তখন এটি কেবল খাঁটি সোনায় তৈরী হত। পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট ব্রেসলেটের আবির্ভাব হলে তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে এই জুবিলী ব্রেসলেট সোনা বাদে স্টেনলেস স্টিল দ্বারা তৈরী হতে শুরু করলো।

মিলানিস ব্রেসলেট (Milanese Bracelet): মিলানিস ব্রেসলেটের নাম ইতালীয় শহর মিলান থেকে এসেছে। মনে করা হয় এই ব্রেসলেটের জালের মত বুনট স্টাইলটি খ্রিস্টীয় ১৩ শতকে প্রথম আবিষ্কার হয়। তখন অবশ্য ঘড়ি আবিষ্কার হয়নি। যুদ্ধে সৈনিকদের তরোয়ালের হাত আঘাত থেকে রক্ষা করতে একধরণের বর্ম হিসেবে ব্যবহার হত। ১৯২০ সালে জার্মান ঘড়ি প্রস্তুতকারক স্টাইব এন্ড  ভলমার প্রথম এই মিলানিস ব্রেসলেট হাতঘড়িতে ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু এই ব্রেসলেটটিকে জনমানসে জনপ্রিয় করে তোলে Omega Seamaster Ploproof 600m ঘড়ির মডেলটি। এটি তৈরিই হয়েছিল বিশেষ করে পেশাদার ডুবুরিদের জন্য যাতে জলের প্রবল চাপেও ঘড়িটি ছিঁড়ে না যায়।

জুবিলী ব্রেসলেট ও মিলানিস ব্রেসলেট
জুবিলী ব্রেসলেট ও মিলানিস ব্রেসলেট

আপনার মতামত জানান