‘ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে’ বাংলা ভাষায় একটি প্রচলিত প্রবাদ। গ্রামাঞ্চলের অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় এই প্রবাদটি সাংসারিক জীবনে বিশেষভাবে উপলব্ধ। এই প্রবাদের দ্বারা নিজের একই রকম পরিণতি হতে পারে জেনেও অন্যের বিপদে আনন্দ করাকে বোঝায়। এই প্রবাদের উৎপত্তি সম্ভবত মা ঠাকুমাদের হাত ধরে, যা লোক মুখে প্রচার পেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
গ্রামাঞ্চলে রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য ঘুঁটে একটি অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আগেকার দিনে, বিশেষত, গ্যাস বা কেরোসিনে রান্নার প্রচলন হওয়ার আগে ঘুঁটে জ্বালানি হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। ঘুঁটে গরুর গোবর থেকে তৈরি হয়ে থাকে। গোবরের সাথে কাঠ কয়লার গুঁড়ো, ধানের তুঁষ মিশিয়ে চাকতির আকারে গড়ে ঘরের দেওয়াল বা প্রাচীরে শুকনো করে ঘুঁটে তৈরি করা হয়। গোবর শুকিয়ে তৈরি করা এই ঘুঁটে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ঘুঁটেকে আগুনে পুড়তে দেখে সাময়িক ভাবে গোবরের হাসি পায় যদিও পরে গোবরের একই পরিণতি হবে। একইভাবে অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা অন্যের দুঃখ যন্ত্রণায় আনন্দ পেয়ে থাকেন, কিন্তু এটা বোঝেন না এটা সাময়িক আনন্দ। কারণ একই যন্ত্রনা সংসার জীবনে তাদের সাথেও ঘটতে পারে। “চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুঃখানি চ সুখানি চ” অর্থাৎ দুঃখ ও সুখ চাকার মত প্রতিনিয়ত মানুষের জীবনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উদহারণ – সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না বলে বৃদ্ধকে দেখে যেসব যুবকেরা মশকরা করে তারা বোঝে না একদিন তারাও বৃদ্ধ হবে, আসলে ‘ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে’ – এই সাধারণ কথাটা তারা ভুলে যায়।
তথ্যসূত্র
- প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ৬৪ পৃঃ