জগা খিচুড়ি

জগা খিচুড়ি

আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা একটি অন্যতম উৎকৃষ্ট ভাষা, এর শব্দ ও সাহিত্য ভান্ডার অপরিসীম। যেকোনো  উৎকৃষ্ট ভাষার একটি প্রধান সম্পদ হলো প্রবাদ, ইংরেজিতে যাকে বলে proverb। বাংলা ভাষায় প্রাচীনকাল থেকেই অনেক প্রবাদ লোকমুখে বা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। এই রকমই একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হল “জগা খিচুড়ি”। এই প্রবাদটির অর্থ নানা রকম জিনিস মিলিয়ে মিশিয়ে এক বিচিত্র উপস্থাপনা। অর্থাৎ অবান্তর, এলোমেলো বিষয় মিলিয়ে এক অস্পষ্ট উপস্থাপনা। এই প্রবাদটি সাধারণত লোকমুখে প্রচার পেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।বর্তমান জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এই প্রবাদটির প্রয়োগ করে থাকি।

খিচুড়ি চাল, ডাল ও অন্যান্য সব্জির সংমিশ্রণে তৈরি এক উপাদেয় খাদ্য বিশেষ। এখানে সকল প্রকার বস্তূ অর্থে বলা হয়েছে জগৎ, জগৎ থেকে জগা এবং তার সাথে খিচুড়ি যোগ করে জগাখিচুড়ি নাম হয়েছে।নানা ধরণের সব্জি, চাল, ডাল সব মিশিয়ে রান্নার পর সেই খিচুড়ির স্বাদ যদি ভাল না হয় তখন তাকে জগা খিচূড়ি বলা হয়। অর্থাৎ জগতের নানা জিনিস মেশালেই যে তা ভাল হবে তা নয় বরং তা খারাপও হতে পারে। কোন বিষয় বোঝাতে গিয়ে কেউ নানান ধরণের শব্দ, বাক্য, ভাষা ব্যবহার করে শেষে যদি বোঝাতে না পেরে বিষয়টিকে দূর্বোধ্য করে তোলে তখন তাকে বলে জগা খিচুড়ি।

তবে ‘প্রবাদের উৎস সন্ধানে’ গ্রন্থের রচয়িতা সমর পাল মহাশয় ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর মতে, জগা অর্থে অনেক সময় জগন্নাথকেও বোঝানো হয়। সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে জগন্নাথকে জগা বলে সম্বোধন করে থাকে। উড়িষ্যায় জগন্নাথের মন্দিরে জাতপাতের ব্যাপারে তেমন নিষেধাজ্ঞা নেই। এখানে সব শ্রেণীর বা সব জাতের মানুষদের জন্য একই হাঁড়িতে অন্ন রান্না করার চল রয়েছে। এবং এই রান্নার স্বাদ থাকুক বা না থাকুক সব শ্রেণীর মানুষেরা সেটা আনন্দ সহকারে ভক্ষণ করে থাকে। অতএব জগন্নাথক্ষেত্রে সবার  জন্য রান্না করা খিচুড়ির নাম জগা খিচুড়ি। উন্নাসিক কুলীনদের কাছে জগন্নাথধামে ভেদাভেদহীন এই খিচুড়ি ভক্ষণ আদিকাল থেকেই প্রশংসনীয় নয় তাই ব্যাঙ্গাত্মক সুরে সবার জন্য রান্না করা খিচুড়িকে জগা খিচুড়ি নামে অভিহিত করেছে তৎকালীন উন্নাসিক কুলীনেরা।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

উদাহরণ – পরীক্ষার সময় জানা প্রশ্ন না এলে কোন কোন ছাত্র এলোমেলো দুর্বোধ্য ভাষায় এমন উত্তর দেয় যে পড়ে মনে হয় জগা খিচুড়ি পাকানো হয়েছে।

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ৭০ পৃঃ

আপনার মতামত জানান