‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ তো আমরা সবাই শুনেছি কিন্তু গৌরি সেন কে , আদৌ ছিলেন কিনা তা সম্পর্কে আমাদের ধারণা প্রায় নেই বললেই চলে। গৌরী সেন একজন প্রবাদ পুরুষ কিন্তু বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও কিংবদন্তী অনুযায়ী কে আসল গৌরী সেন তা বোঝা যায় না।
গৌরী সেনের জন্ম হয় ১৫৮০ সালে হুগলিতে। বড় হওয়ার পর পারিবারিক আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার হাল ধরেন গৌরী। তার সময়ে এই ব্যবসা আরো বেড়ে যায়। ব্যবসা থেকে বিপুল অর্থ রোজগার করেন তিনি।
তার দান ধ্যানের হাত ছিল খুব। যেসব গরিব মানুষ সরকারি কোষাগারে তাদের কর প্রদান করতে পারতেন না, গৌরী তাদের হয়ে কর দিয়ে দিতেন। সেই থেকেই ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ এই প্রবাদের জন্ম।
অনেকে মনে করেন, হুগলির বড়াই লেনে যে গৌরীশঙ্কর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় তা এই গৌরী সেনই নির্মাণ করেন। ১৬৬৭ সালে তার মৃত্যু হয়।
তাঁর আদিনিবাস সম্পর্কে দুটি ভিন্ন মত আছে। অধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী তিনি হুগলী জেলার বালী শহরের মানুষ। (আজকের দিনে বালী শহর হাওড়া জেলার অন্তর্গত।) অন্যমত অনুযায়ী তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের মানুষ। সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। এরপর গৌরী সেনের পূর্বপুরুষরা চাষ করতে করতে সোনার মোহর ভর্তি ঘড়া খুঁজে পান। সেই সোনার ব্যবসা থেকেই তাঁদের লক্ষ্মীলাভের শুরু। সেকালে দেনার দায়ে কারও জেল হলে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা মুক্তি পেত না। দেনার দায়ে অনেকের আবার জেলেই মৃত্যু হতো। এ অবস্থায় গৌরী সেন ছিলেন অনেকের ভরসাস্থল। তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি অনেকেরই ঋণের টাকা পরিশোধ করে তাদের কারামুক্তির ব্যবস্থা করতেন। কলকাতার আহিরীটোলায় গৌরী সেনের বিশাল বাড়ি ছিল। এ বিষয়ে সুবলচন্দ্র মিত্রের একটি প্রাচীন বাংলা অভিধানে বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। আমদানি–রপ্তানির পারিবারিক ব্যবসায় গৌরী সেন অনেক টাকা উপার্জন করেন আর বণিকসমাজে প্রসিদ্ধ হন। দুহাতে টাকা বিলিয়ে অনেক লোককে তিনি ঋণমুক্ত করেন অথবা বকেয়া রাজকর মেটাতে সাহায্য করেন।কথিত আছে, ব্যবসায়িক সূত্রে পর্তুগিজ়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ১৫৯৯ সালে গৌরী সেন নিজে ব্যান্ডেল চার্চের জমি তাদের প্রদান করেন। সেই জমিতেই তৈরি হয় বিখ্যাত ব্যান্ডেল চার্চ। এর থেকেই এক বাংলা প্রবাদের জন্ম হয়—”লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন”। দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডে বসবাস করেন গৌরী সেনের বংশধর সুকৃত সেন।
One comment