পিপুফিশু

পিপুফিশু

বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ ‘পিপুফিশু’ যার অর্থ কুঁড়ের বাদশা। এই প্রবাদটি চালু ঠিক কখন কিভাবে হয়েছিল জানা না গেলেও এর পিছনে গল্পটি বেশ পরিচিত। জেনে নেওয়া যাক ‘পিপুফিশু’ প্রবাদের পিছনের সেই গল্পটি কি।

একবার এক রাজা ঘোষণা করলেন তাঁর রাজ্যে সব থেকে অলস যে ব্যক্তি বাস করে তাকে তিনি স্বচক্ষে দেখতে চান এবং পুরস্কৃত করতে চান। রাজার এই বার্তাটি ঢোল বাজিয়ে রাজ্যের সর্বত্র ঘোষণা করা হল। রাজ্যের নানা জায়গায় অলস ব্যাক্তির খোঁজ শুরু হয়ে যায়। রাজার সেপাইরা রাজ্যের সেরা অলসদের রাজার রাজধানীতে এনে হাজির করেন। এরপর শুরু হল শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা এবং সেই প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে অর্থাৎ সেরা অলস ব্যক্তিকে রাজা পুরস্কৃত করবেন। প্রতিযোগিতার জন্য এক সুবিশাল মাঠে কুঁড়েদের জন্য খড়ের কুঁড়ে ঘর তৈরি করে একটি কুঁড়ে ঘরে তিনটি করে কুঁড়েকে রাখার ব্যবস্থা করা হল। বিচারকরা তৎপর সেরা অলস কে সেটা বাছাই করতে। যথাসময়ে মহারাজের আদেশে রাতের অন্ধকারে কুঁড়ে ঘরগুলোতে আগুন লাগানো হল। আগুন ছড়িয়ে পড়লে কিছু অলস ব্যক্তি প্রাণের ভয়ে কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে এল। মৃত্যু ভয় তাদের আলস্যকে দূর করে দিল। কিছু পরে সেখানে উপস্থিত সবাই লক্ষ্য করল একটি কুঁড়ে ঘরে তখনও তিনটি কুঁড়ে একসাথে শুয়ে আছে। আগুনের তাপ তাদের শরীরকে ছুঁয়েছে কিন্তু তাতে তাদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। তিন কুঁড়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কারণ চোখ খুলে তাকানো একটি কাজ, সেই কাজেও তাদের প্রবল অনীহা। পিঠে আগুনের তাপ লাগলে প্রথম কুঁড়ে বলে উঠে – “কত রবি জ্বলে রে” অর্থাৎ কত গুলো সূর্য জ্বলছে। দ্বিতীয় কুঁড়ে বলে -“কেবা আঁখি মেলে রে” অর্থাৎ এই জন্য কে আর চোখ খুলবে। তৃতীয় কুঁড়ে বলে -“পিপুফিশু” অর্থাৎ পিঠ পুড়ল ফিরে শুই। তিন নম্বর কুঁড়েটি ‘পিপুফিশু’ কথাটি শুধু উচ্চারণই করল ফিরে আর শুলো না। এই অবস্থায় রাজার সেপাইরা তাকে সেই আগুন থেকে উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ কুঁড়ের বাদশা উপাধিতে ভূষিত করল। এখানে লক্ষণীয় অন্য দুই কুঁড়ে তৃতীয় কুঁড়ের মতো নড়াচড়া না করলেও ইন্দ্রিয়ের স্পর্শে তারা কিছু সময় ব্যয় করেছে। তৃতীয় কুঁড়েটি পাশ ফিরে শুতেও সময় খরচ করেনি, এবং কথাটিও সংক্ষেপে সেরেছে। আর এই গল্প থেকেই বাংলা প্রবাদে কুঁড়ের বাদশাকে পিপুফিশু বলে সম্মোধন করা হয়।

উদাহরণ – অনলাইনে অর্ডার করে করে সবাই এমন পিপুফিশু হয়ে যাচ্ছে যে পাড়ার দোকান থেকে টুক করে কিছু আনতে যেন গায়ে জ্বর আসে!

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

তথ্যসূত্র


  1. প্রবাদের উৎস সন্ধান - সমর পাল, শোভা প্রকাশ / ঢাকা ; ১০২ পৃঃ

আপনার মতামত জানান