বিধান চন্দ্র রায় কে নিয়ে তথ্য

  • গাঁধীজির সঙ্গে বিধান চন্দ্রের দারুণ হৃদ্যতা ছিল। তো একবার গান্ধীজী বিধান বাবুকে বললেন “আপনি যুক্ত প্রদেশের (এখন উত্তরপ্রদেশ) গভর্নরের পদগ্রহণ করতে রাজি হলেন না। আমি ভেবেছিলাম, আপনাকে ‘ইওর এক্সেলেন্সি’ বলে ডাকার সুযোগ পাব। তা হতে দিলেন না!” বিধানবাবুর উত্তরটি এক্ষেত্রে স্মরণীয়, ‘‘আমি আপনাকে আরও ভাল বিকল্প দিতে পারি। আমি পদবীতে রয়, তাই আপনি আমাকে রয়্যাল বলতে পারেন। আর যে হেতু অনেকের চেয়ে লম্বা, সে হেতু আপনি আমাকে রয়্যাল হাইনেস বলতে পারেন! সেটা কিন্তু যথার্থই হবে।
  • ঠাকুমা আদর করে নাম রেখেছিলেন ভজন। আর তাঁর ভাল নাম রাখার দিনে হাজির ছিলেন কেশবচন্দ্র সেন (সেই কেশব সেন যিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি)।
বিধান রায়ের জীবনী নিয়ে তথ্যমূলক ভিডিও
  • ভাইবোন মানে খুড়তুতো জ্যাঠতুতো মিলিয়ে বিধানবাবুরা ছিলেন ১৮ জন।বিধান বাবুর বাবা ছিলেন একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারী।ঐ সামান্য বেতনে বাড়ির সবার পেট ভরানোই ছিল সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।  সরকারি কাজে যাতায়াতের জন্য ওনার বাবার একটা ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ঘোড়ার খাবার হিসেবে বিট-গাজর সরকার থেকে যা আসত খিদের জ্বালায় ভাই বোনেরা কাঁচাই সেই বিট-গাজর খেয়ে নিতেন। আর ঘোড়াকে খাওয়াতেন ঘাস।
  • ডাক্তার  হবার খুব যে ইচ্ছে ছিল তেমনটা মোটেও বলা যায় না। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফর্মের জন্য আবেদন করেছিলেন। ডাক্তারির ফর্মটা আগে আসায় ওইটাই আবেদন করে পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফর্ম  যখন এল ততক্ষণে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে গেছেন।
  • থাকতেন কলেজ স্ট্রিট ওয়াই এম সি এ-তে। টাকা পয়সার টানাটানি ভীষণ, মাস্টারমশায়রা ছাত্রকে অবসর সময়ে ধনী রোগীদের বাড়িতে মেল নার্স হবার সুযোগ করে দিতেন। রোগীর বাড়িতে বারো ঘণ্টার ডিউটিতে পারিশ্রমিক পেতেন আট টাকা।
  • ডাক্তার হিসেবে প্র্যাকটিস  এর শুরুতে রোজগার তেমন হচ্ছেনা দেখে পার্ট টাইম ট্যাক্সি চালাতেন।
  • কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমবি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন।
  • এই একই তিনিই মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে বিলেত  গেলেন দু’বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস শেষ করবেন বলে। বিলেতের সেন্ট বারথোলমিউ কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য আবেদন করলেন। ওখানকার অধ্যক্ষ সাফ বলে দিলেন, “ এ দেশের দারুণ মেধাবি ছাত্ররাও দুটি কোর্স একসঙ্গে শেষ করতে পারেনা।তুমি ভারত থেকে এসে সেটা করে ফেলবে?’’ প্রত্যাখান হয়ে গেল বিধানবাবুর আবেদন। দমলেন না। আবার করলেন আবেদন। এবারও ফল একই- প্রত্যাখান।আবার করলেন-আবারও প্রত্যাখান। এইভাবে টানা ৩০ বার আবেদন করার পর অবশেষে গ্রাহ্য হল আবেদন। দু’ বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস শেষ করলেন।এ এক অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব।
  • তবে ডাক্তার বিধানচন্দ্র ও মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্রের খ্যাতি যতটা বিস্তীর্ণ হয়েছে সেই সাথে বেড়েছে তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া মিথ যা সত্য আর কল্পনার মাঝের সীমারেখাটিকে ধূসর করে দিয়েছে। সেরকমই একটি বহুল প্রচারিত ঘটনার উল্লেখ এখানে না করলেই নয়। বিধান রায় তখন সবে ডাক্তারি করা শুরু করেছেন, নামডাকও হয়েছে, সেই সময় প্রেমে পড়লেন একজন যুবতীর যার বাবা আবার বিরাট নামকরা ডাক্তার। সেই নামকরা ডাক্তারের কাছে গেলেন তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে একদিন ।বিয়ের প্রস্তাব শুনে মেয়ের বাবা সদ্য ডাক্তার বিধান কে জিজ্ঞাসা করলেন “ তোমার মাসিক আয় কত বাবা?”  সবে ডাক্তারি করা শুরু করেছেন তখন। ফলে রোজগারও তেমন নয়। রোজগার শুনে মেয়ের বাবা তরুণ বিধানকে বললেন-তোমার যা মাইনে, আমার মেয়ের হাতখরচ তার চেয়ে বেশি।এই রোজগারে  মেয়ের সারা বছরের খরচা  সামাল দেবে কিভাবে!! সেই দিন তরুণ বিধানের কাছে কোন উত্তর ছিলনা। সেই যে আঘাত পেলেন, এরপর বাকি জীবনটা চিরকুমারই থেকে গেলেন। মেয়ের বাবা ছিলেন, স্বনামধন্য চিকিৎসক স্যার নীলরতন সরকার। সেদিনের তরুণ প্রেমিক মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বাসস্থানের জন্য গড়ে তুললেন কল্যাণী উপনগরী, লেক টাউন, লবণহ্রদ নগর । স্যার নীলরতনের মেয়ের নাম ছিল কল্যাণী।
তথ্যসূত্র
  1. ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়- ভগবতী প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়- বর্তমান পত্রিকা-
  2. https://www.anandabazar.com/
  3. http://www.pentagold.in/
  4. http://www.goldpriceindia.com/
  5. https://bangla.aajtak.in/

 

2 comments

আপনার মতামত জানান